শেরপুরের সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলের কৃষক আবদুল হাকিমের চোখে এখন নতুন স্বপ্ন। কয়েক বছর আগেও তার জীবিকা ছিল শুধু ধান ও গম চাষের ওপর নির্ভরশীল। ফসলের দাম কম থাকায় ভালো লাভ করতে পারতেন না। সংসারের খরচ মেটানো ছিল কষ্টকর। তবে সময় বদলেছে। এখন তার চাষ করা মিষ্টি আলু যাচ্ছে জাপানের বাজারে। যা তার জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
Advertisement
কৃষক আবদুল হাকিম বলেন, ‘আগে ধান চাষ করতাম কিন্তু লাভ তেমন হতো না। এখন মিষ্টি আলু চাষ করে ভালো আয় করছি। প্রতি মণ ৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারছি।’
শুধু আবদুল হাকিম নন; ঝিনাইগাতি, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অনেক কৃষক মিষ্টি আলু চাষে সফলতা পাচ্ছেন। কামারের চরের কৃষক মো. রফিক বলেন, ‘আমরা ভাবতাম, শুধু বড় কোম্পানির পণ্যই বিদেশে যায়। এখন দেখি আমাদের চাষ করা মিষ্টি আলুও জাপানে যাচ্ছে!’
কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, ‘আগে আমরা স্থানীয় বাজারে আলু বিক্রি করতাম। দাম কম পেতাম। এখন জাপানি কোম্পানি সরাসরি আমাদের কাছ থেকে আলু কিনছে। ফলে ভালো দাম পাচ্ছি। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করবো।’
Advertisement
জানা যায়, জাপানের নারুতো জাপান কোম্পানি লিমিটেড সরাসরি ৪৩ জন কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করে মিষ্টি আলু সংগ্রহ করছে। তারা বিনা মূল্যে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। চুক্তি মোতাবেক ৯০ একর জমিতে কোকোই-১৪ জাতের আলু চাষ করেছেন স্থানীয়রা। চাষের উপকরণ বীজ, সার, কীটনাশক সব বিনা মূল্যে দিয়েছে কোম্পানি।
আরও পড়ুন
৩৭ বছর ধরে ফুল চাষ করছেন ভৈরবের দুলাল তামাক ছেড়ে বরই চাষে মাহবুবের বছরে আয় ১২ লাখউৎপাদনের পর প্রকল্পের সব আলু প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি মাঠ থেকে কিনে নেবে। গত বছর ৫৮০ টাকা মণ দরে কিনলেও এ বছর দাম বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে। সদর উপজেলার বলাইয়ের চর ইউনিয়নের জঙ্গলদি নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম জানান, একর প্রতি আলুর ফলন হয় ২৫০-৩০০ মণ। যা দেড় থেকে ২ লাখ টাকা বিক্রি করা যায়।
শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘চলতি মৌসুমে শেরপুরে ২০৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে ২৪২ হেক্টর। ঝিনাইগাতীতে ২৪ হেক্টর, শ্রীবরদীতে ০৭ হেক্টর, নালিতাবাড়ীতে ৩৯ হেক্টর, শেরপুর সদরে ৯০ হেক্টর ও নকলায় ৮২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩৭ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে।
Advertisement
জাপানে রপ্তানির কথা শুনে এবং লাভজনক ফসল হওয়ায় আলু চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। দেশীয় বাজারেও মিষ্টি আলুর চাহিদা ও মূল্য বাড়ছে। শুধু শেরপুর নয়; পার্শ্ববর্তী জামালপুরেও চলতি মৌসুমে মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি মণ মিষ্টি আলু ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আলু প্রক্রিয়াজাত করে অনেক খাদ্যপণ্য বানিয়ে জাপানে রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন সুপারশপে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মিষ্টি আলুর খোসা সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু কোকোই-১৪ জাতের আলু খোসাসহ খাওয়া যায়। জাপানিরা এ আলু সেদ্ধ কেকের মতো প্যাকেটে ভরে বিক্রি করেন।
শেরপুর খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মিষ্টি আলু চাষ ও রপ্তানির এ সাফল্য বাংলাদেশের কৃষিখাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সরকারি সহায়তা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অন্য অঞ্চলেও মিষ্টি আলু চাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
ইমরান হাসান রাব্বী/এসইউ/এমএস