সোশ্যাল মিডিয়া

উপদেষ্টা হতে পারতেন আখতার, তার সঙ্গে নোংরামি কেন?

ছাত্রশক্তি নামের যেই সংগঠন থেকে আসিফ আর নাহিদ রাজনীতি শিখেছেন, সেই ছাত্রশক্তি আখতার ভাইয়ের নিজের হাতে গড়া সংগঠন। এমন মন্তব্য করেছেন লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাদিকুর রহমান খান।

Advertisement

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এসব কথা লেখেন সাদিকুর রহমান খান। তার স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে ধরা হলো-

এই আন্দোলনে সমন্বয়কদের মধ্যে নাহিদ আর আসিফের বাইরে আর একটা মানুষকেই হাসিনা জেলে নিয়েছিল।

তার নাম আখতার হোসেন। আমাদের প্রিয় আখতার ভাই। আমরা আই হেট পলিটিক্স প্রজন্মের পোলাপাইন। পলিটিক্স হেইট করি। বাট আখতার ভাইকে আবার পছন্দ করতাম খুব। কারণ হাসিনার আমলে কলিজা ওয়ালা মানুষ খুব কম দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো। আখতার ভাই ছিলেন সেই কম মানুষের মধ্যে একজন।

Advertisement

অনেকেই মনে করেন আসিফ, নাহিদরা বোধহয় অরাজনৈতিক পোলাপাইন। ভুল। আসিফ নাহিদ সবাই রাজনৈতিক পোলাপাইন। এরা বারবারই আন্দোলন করেছে, মার খেয়েছে। ছাত্রশক্তি নামের যেই সংগঠন থেকে আসিফ আর নাহিদ রাজনীতি শিখেছেন, সেই ছাত্রশক্তি আখতার ভাইয়ের নিজের হাতে গড়া সংগঠন। হাসিনার প্রবল প্রতাপের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছেলে আহমদ ছফার গাভী বৃত্তান্ত নিয়ে অনশনে বসেছিলো। প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে। চাপ আসে, প্রলোভন আসে, পুলিশ আসে, ভিসি আসে। ছেলেটা উঠেও না। কিছু খায়ও না।

এই ছেলেটার জেদের কাছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি কতৃপক্ষ হার মানতে বাধ্য হয়। এই ছেলেটাই আখতার হোসেন। আখতার ভাই। ঐ শুরু। আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর এই ছেলেটা অসীম সাহস আর কিছু ইট নিয়ে আবরার ফাহাদ স্মৃতিস্তম্ভ বানাইছিলেন। পুলিশ রাইতে যাইয়া একবার ভাইঙ্গা আসে। আখতার ভাই দিনে যাইয়া আবার স্তম্ভ বানান। কাঁচা ইট আর সিমেন্টে গড়া সেই স্তম্ভে আবরার ফাহাদ যতটা ছিলেন, ততটাই ছিলেন হাসিনা, ভারত আর ছাত্রলীগকে বুড়ো আঙুল দেখানো আখতার হোসেনের সাহস।

এরপর মোদি বাংলাদেশে আসলো।হাসিনার পুলিশ গুলি করে হেফাজতের কর্মী মারতে থাকলো। আখতার ভাই আবার মিছিল বের করলেন ঢাকায়। গ্রেফতার হলেন।

জুলাই আন্দোলনে তাই হাসিনা ফার্স্ট টাইমেই আখতার ভাইকে তুলে নিয়ে জেলে ঢুকাইয়া দিয়েছিলেন। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত তাকে ছাড়া হয়নি। হাসিনা এই একটা লোককে এতোটাই ভয় পাইতেন।

Advertisement

৫ আগস্টের পর হিরো, মাস্টার মাইন্ড অনেকই বের হয়েছে। বিপ্লবের ভাগ যার যার মতো বুঝে নেওয়া শেষ। সমন্বয়কদের এখন সারা দেশ চিনে। খালি আমি অবাক হয়ে দেখি সমন্বয়কদের সমন্বয়ক আখতার হোসেন সেই আগের মতো সাদা পাঞ্জাবী, গলায় মাফলার আর মুখে হাসি নিয়ে সারা বাংলাদেশ ছুটে বেড়াইতেছেন।

এই যে আমরা যারা তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান নিয়ে এক্সাইটেড, আমাদের সামনে অনেক ব্যর্থতার উদাহরণ আছে। অনেকেই বলে যে কিছু হবে না। বাদ দাও। এই দেশে এসব হবে না। আমরা তবুও অতি কনফিডেন্স এর সাথে বলি, হবে। অবশ্যই হবে।

এই শক্তিটা আমি পাই নাহিদ ভাইদের জুলাই আন্দোলন দেখে। আর এই বিশ্বাসটা পাই আখতার ভাইয়ের গত ১০ বছরের অন্তহীন লড়াই দেখে। আমি খুব ভালো করেই জানি, এই দেশে তৃতীয় শক্তির উত্থান কতটা কঠিন। আবার আমি এও জানি, আখতার ভাই গত ১০ বছরে ঠিক কতোটা অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলেছেন।

এই বিশ্বাসটা কোন দলের উপর না। কিছু মানুষের উপর। এই মানুষগুলো না থাকলে আমাদের বিশ্বাসটাও আসলে আর থাকবে না।

শুনলাম নতুন দলের মধ্যে কী একটা ঝামেলা চলতেছে। আখতার ভাইকে মাইনাস করা হচ্ছে।

শোনার পর থেকে মনটা এতো খারাপ, বলার না। চাইলে যে লোকটা ছাত্রদের মধ্যে থেকে সবার প্রথম উপদেষ্টা হতে পারতো, সেই মানুষের সাথে এই নোংরামি কেন করতে হবে? নতুন দল কী করবে, সেই সিদ্ধান্ত নতুন দলের লোকজনই নিবে, আমি তাদের কেউ না। দূরে থাকা একজন শুভাকাঙ্খী। বাট এই দল যদি আখতার ভাইয়ের মতো সেনাপতি, যিনি হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিটা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাকে মাইনাস করে, তাহলে এই দলের মধ্যে আমি অন্তত আমার জায়গাও দেখবো না কোনদিন।

যাদের কাছে গত ১০ বছরে হাসিনা বিরোধী লড়াই মিথ্যা, আবরার ফাহাদের স্মৃতিস্তম্ভ মিথ্যা, ভারত বিরোধী আন্দোলন মিথ্যা, তাদের স্বার্থে আঘাত লাগলে একদিন বাংলাদেশের মানুষও মিথ্যা হয়ে যাবে না, তার গ্যারান্টি কী?

এএমএ/এমএস