বুশরা আজমী
Advertisement
কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে বিদায় নিয়েছে শীত। উত্তরের জানালা বন্ধ হয়ে দক্ষিণের জানালা দিয়ে বইতে শুরু করেছে ফাল্গুনের হাওয়া। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে উঠছে। প্রাণ ফিরে পাচ্ছে গাছপালা, মুখর হচ্ছে চারদিক।
প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার মাটিতে বসন্ত উৎসবের প্রচলন রয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের সূচনা করেন বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে, যা আজও চলে আসছে। বাংলাদেশে ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বসন্ত উৎসব উদযাপনের সূচনা হয়, যা ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয়, কারণ এ সময় প্রকৃতি নতুন প্রাণ ফিরে পায়। রুক্ষ গাছপালায় জন্ম নেয় নতুন সবুজ পাতা, পলাশ-শিমুলের লাল-কমলা রঙে রঙিন হয়ে ওঠে বনভূমি, আকাশে-বাতাসে বয়ে যায় কোকিলের কুহু ধ্বনি। ফাগুনের দখিনা হাওয়ায় চারপাশ ভরে ওঠে উচ্ছ্বাসে। শুধু প্রকৃতি নয়, মানুষের মনেও জাগে এক নতুন অনুভূতি। তরুণ-তরুণীরা বসন্তকে বরণ করে নেয় নানা আয়োজনে, মেতে ওঠে আনন্দ-উৎসবে।
Advertisement
প্রতি বছর বসন্তকে বরণ করতে দেশজুড়ে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহরে আয়োজিত হয় বসন্ত উৎসব। গ্রামগঞ্জেও বসন্তের মেলা বসে, লোকসংগীত, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। মানুষ বাসন্তী রঙে নিজেদের সাজিয়ে তোলে, নারীরা খোঁপায় গাঁদা-বেলি ফুল গুঁজে নেয়, হাতে পরে রঙিন চুড়ি।
আরও পড়ুন
অবসর সময় কাটাবেন যে কারণে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ভুলেও ভাঙতে পারে সংসারবসন্ত মানেই নতুন কাব্য, নতুন গান। কবি-সাহিত্যিকরা বসন্তকে নিয়ে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য কবিতা ও গান। বসন্ত বাঙালির হৃদয়ে জড়িয়ে আছে চিরায়ত ভালোবাসার আবেগ নিয়ে। বসন্ত মানেই নতুন করে প্রাণ ফিরে পাওয়া, মিলন উৎসবের আমেজে ডুবে যাওয়া।
বসন্ত শুধু আনন্দের বার্তা নয়, এটি মনে করিয়ে দেয় বেদনার এক অধ্যায়ও। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, এই ঋতুতেই ফিরে আসে। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণে বসন্তের আবহ একদিকে উচ্ছ্বাসময়, অন্যদিকে গর্ব আর শ্রদ্ধার অনুভূতিতে ভরে ওঠে বাঙালির হৃদয়।
Advertisement
প্রতিবারের মতো এবারও ঋতুরাজ বসন্ত তার স্বমহিমায় আসছে। তরুণ প্রজন্ম, সংস্কৃতিমনা মানুষ এবং প্রকৃতিপ্রেমীরা বসন্তকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। রঙিন পোশাকে সেজে, গান-কবিতায় মেতে সবাই একসঙ্গে বলবে—‘বসন্ত এসে গেছে!’
লেখক: সম্মান দ্বিতীয় বর্ষ, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী কলেজ।
এসইউ/এমএস