অর্থনীতি

যারা কর দিচ্ছে তাদের ওপর আরও চাপ বাড়ছে

দেশের সামান্য কিছু উদ্যোক্তা নিয়মিত কর দিচ্ছেন, আর তাদের ওপর চাপ আরও বেড়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশরাফ আহমেদ।

Advertisement

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেড় কোটি। আর ভ্যাট রেজিস্টার (নিবন্ধন) প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচ লাখ। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠানও ঠিকমতো ভ্যাট দিচ্ছে না। শুধু চার-পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট এক/দেড়শ কোটি টাকার উপরে।

আশরাফ আহমেদ বলেন, এই কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান ও তাদের ব্যবসার ওপর সরকার পুরো ভ্যাটের বোঁঝা চাপিয়ে দিয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের আদায় দিয়েই সরকার কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশের উপরে রাখতে চায়। এটা সম্ভব নয়।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) কনফারেন্স হলে জাগো নিউজ আয়োজিত ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

Advertisement

আরও পড়ুন ভুল সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত, পরিণতি ভালো হবে না পরিবহন-বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে ভ্যাট-ট্যাক্সের জাঁতাকলে বিস্কুটের প্যাকেট আর কত ছোট হবে

এ সময় উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে করের আওতায় আনার তাগিদ দিয়ে ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি বলেন, ঢাকা শহরের জীবনযাত্রার ন্যূনতম খরচ ৪৫ হাজার টাকা, এর উপরে আয় করেন এমন প্রচুর উচ্চ-মধ্যবিত্ত রয়েছেন। সে হিসাবে লাখ লাখ আয়কর দেওয়া মানুষ থাকার কথা। তারা কি ট্যাক্স দেন না? এ বড় সংখ্যার মানুষ গেলো কোথায়?

আশরাফ আহমেদ বলেন, কেউ টাকা (ট্যাক্স) দেবে না, আর সেই টাকা ব্যবসায়ীদের দিতে হবে- এটা গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ যেসব উদ্যোক্তা সব চাপ নিচ্ছেন, তাদের সরকার দমিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তাদের সুরক্ষা না দিলে দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কোনোভাবে ভালো হবে না। ফলে অবশ্যই ট্যাক্সরেট কমাতে হবে, সংগ্রহ বাড়াতে হবে।

করদাতারা দেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে ঠিকমতো রেয়াত সুবিধা পান না উল্লেখ করে আশরাফ আহমেদ বলেন, রেয়াত সুবিধার মধ্যে অনেক ঝামেলা আছে। ব্যবসায়ীরা এ সুবিধার ২০ শতাংশও তুলতে পারেন না। এই জিনিসে রেয়াত পাওয়া যাবে, এটাতে নেই, এমন ব্যবস্থা দুনিয়ার কোথাও নেই। আপনি উন্নত দেশে ট্যাক্স আইনে দেখেন, পাবেন না। কিন্তু এ দেশে আছে।

তিনি বলেন, আমি সারা বছর যে ট্যাক্স দেবো, বছর শেষে সব ঠিক থাকলে অতিরিক্তটা ফেরত পাবো, এটি অটোমেটিক হবে। এটা দুনিয়ার সব দেশ পারে, কিন্তু বাংলাদেশে হয় না। উন্নত দেশে নয়, ভারতেই দেখেন। তিন মাস পরপর অতিরিক্ত ট্যাক্স ফেরত আসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

Advertisement

আরও পড়ুন বর্ধিত ভ্যাট-শুল্কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা ভ্যাট বৈষম্য দূর করলে সরকারের টাকার অভাব হবে না কর-ভ্যাটের হার যুক্তিযুক্ত করা হলে দেশ সুন্দরভাবে চলবে

জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হকের পরিচালনায় ও চিফ রিপোর্টার ইব্রাহীম হুসাইন অভির সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

এতে আরও বক্তব্য দেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ, অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, এসিআই ফুডসের চিফ বিজনেস অফিসার ফারিয়া ইয়াসমিন, এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ও রাজীব চৌধুরী, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, বাপা সভাপতি এমএ হাশেম, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন।

এনএইচ/ইএ/এমএমএআর/এএসএম