আন্তর্জাতিক

দায়িত্ব নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন ইলন মাস্ক, ব্যর্থতার আশঙ্কা

ক্ষমতা গ্রহণের পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারি অর্থ সাশ্রয় বা অপচয় বন্ধের দায়িত্ব দিয়েছেন ইলন মাস্ককে। এ জন্য সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) নামের একটি সংস্থার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে। এরপর প্রতিদিনই অথবা প্রায় ঘণ্টারভিত্তিতে ইলন মাস্ক দাবি করছেন যে তার রাজস্ব কমান্ডো টিম আরও সরকারি জালিয়াতি খুঁজে পেয়েছে, আরেকটি অপচয়মূলক চুক্তি বাতিল করেছে অথবা একটি সম্পূর্ণ সংস্থা বাতিল করে দিয়েছে।

Advertisement

মাস্কের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন যে, প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা ও নিছক ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে তিনি ফেডারেল ঘাটতি এমনভাবে কমাচ্ছেন যা বছরের পর বছর ধরে রাজনীতিবিদদের নজরে আসেনি। কিন্তু এই ব্যাখ্যায় একটি স্পষ্ট ভুল রয়েছে। কারণ সরকারি তথ্য পর্যালোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে মাস্কের প্রচেষ্টা ব্যয়ের ক্ষেত্রে খুব কমই প্রভাব ফেলেছে।

প্রতি কর্মদিবসেই ট্রেজারি বিভাগ প্রাথমিক আমানত অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ অর্থ উত্তোলনের বিস্তারিত বিবরণী প্রকাশ করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্যয় গড়ে প্রতিদিন ৩০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। তবে জো বাইডেনের সময় গত বছর একই সময়ে এই ব্যয় ছিল প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার।

২৮ জানুয়ারি মাস্ক প্রথম দাবি করেন তার সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) ফেডারেল সরকারের দৈনিক এক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করছে। তখন থেকে ট্রেজারি থেকে ব্যয় প্রকৃতপক্ষে বেড়েছে। বৃহত্তর চিত্রটি দেখলে বোঝা যাচ্ছে, অক্টোবরে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ের গতিপথ মূলত গত দুই বছরের মতোই রয়েছে।

Advertisement

যদিও এ ধরনের তুলনা নিখুঁত নয়। সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ আসা ও যাওয়া সব সময় এক রকম থাকে না। নমিনাল টার্মে ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়, যা মূল্যস্ফীতির কারণে বৃদ্ধি পায়। সম্ভবত ডিওজিই এর অনুপস্থিতিতে আউটফ্লো আরও বেশি হতো। সংস্থাটি এখনও প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। তবে মাস্কের ঘোষণা ও ব্যয় কমাতে তার স্পষ্ট ব্যর্থতার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে তার প্রকল্প চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ইলন মাস্ক ফেডারেল সরকারের জন্য বার্ষিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সঞ্চয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতির অন্তত কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছাতে তিনি কাজ করবেন বলে মনে হচ্ছে।

এক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো আমেরিকার বাজেট কাঠামো। সরকার এই বছর ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পথে রয়েছে। এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য বীমা খাতে বাধ্যতামূলক ব্যয় হবে। ১০ শতাংশ ব্যয় হবে সুদ পরিশোধে। বাজেটের এক-চতুর্থাংশ বিবেচনামূলক ব্যয়ের জন্য থাকে, যা তত্ত্বগতভাবে কিছুটা সহজে ছাঁটাই করা যায়। তবে অর্ধেক প্রতিরক্ষা খাতে যায় এবং রিপাবলিকানরা এই ধরনের ব্যয় বাড়াতে চায়।

ইলন মাস্ক বলছেন, জালিয়াতি ও অপচয় নির্মূল করে তিনি বড় সঞ্চয় করবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জালিয়াতির ফলে বছরে ক্ষতি হয়েছে ২৩৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫২১ বিলিয়ন ডলার। রিয়েল টাইমে সব জালিয়াতি শনাক্ত ও নির্মূল করা সম্ভব?

সব দিক থেকেই ডিওজিই এর প্রচেষ্টাগুলোকে বেশ বিক্ষিপ্ত বলে মনে হচ্ছে। এর অনেক ব্যয় হ্রাস নির্দিষ্ট বিষয়গুলোকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে যেগুলোকে ডোনাল্ড ট্রাম্প অপচয় বলে মনে করেন। এগুলো হলো বৈচিত্র্যতা, ন্যায্যতা, অন্তর্ভুক্তি ও অ্যাক্সেসিবিলিটি প্রোগ্রাম। যদিও এতে ফেডারেল বাজেটের একটি ক্ষুদ্র অংশ ব্যয় হয়। ডিওজিই যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে দেখা গেছে সর্বোচ্চ ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো সঞ্চয় হতে পারে। তাছাড়া ইউএসএআইডি বন্ধের মাধ্যমে সফলতা পাওয়ার চেষ্টা করছে ডিওজিই। যদিও এতে তাদের ব্যয় কমবে বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

Advertisement

মাস্কের নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি এরই মধ্যে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠিয়েছে।ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এটি এখন ব্যাপকভাবে ছাঁটাই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেসামরিক কর্মচারীরা হতাশ ও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

মূলত ডিওজিই-এর মূল লক্ষ্য হলো অর্থ সাশ্রয় করা। মাস্ক ১১ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, ফেডারেল ব্যয় হ্রাস করা ঐচ্ছিক নয় বরং এটি অপরিহার্য। সেই বিবেচনায়, তিনি ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হতে চলেছেন বলে মনে হচ্ছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এমএসএম