শরীয়তপুরে সবজির ভালো ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। বাজারে দাম কমায় উঠছে না পরিবহন খরচও। ফলে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে লাউ, টমেটো, বাঁধাকপিসহ নানা সবজি। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। কৃষকদের দাবি, সরকারিভাবে সহযোগিতা করা না হলে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে সবজি উৎপাদন।
Advertisement
জাজিরার চর লাউখোলা এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন। চলতি মৌসুমে ২০ শতক জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছেন। সবমিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। বৃষ্টির কারণে আগের মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিনি। তবে তার সেই আশায় গুড়েবালি হয়েছে। বাজারে সবজির দাম পতন হওয়ায় লাভ হচ্ছে না। এমনকি পরিবহন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান এই কৃষক।
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বাঁধাকপিতে খরচ করেছি। সেখানে বিক্রি করেছি মাত্র সাত থেকে আট হাজার টাকা। আমি একেবারে শেষ হয়ে গেছি। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে কাঁচা শাকসবজি চাষ করা সম্ভব না। এর আগের সিজনেও বৃষ্টির কারণে ফসল মাইর গিয়েছে। কৃষকরা ১০ বছর আগে থেকে সরকার থেকে কোনো অনুদান পায়না। আমরা চাই সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াক।
জেলার কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে শীতকালীন শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ৭০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি আবাদ বেড়েছে। এছাড়া শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ২৫ মেট্রিক টন।
Advertisement
জাজিরা মিরাসার এলাকায় লাউ চাষ করেছেন আরেক স্থানীয় কৃষক রকিব মিয়া। হিসাব অনুযায়ী তার প্রত্যেকটি লাউয়ের পেছনে খরচ হয়েছে ২৫ টাকা। অথচ সেই লাউ বাজারে পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫ টাকা। এতে চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই কৃষক।
রকিব মিয়া বলেন, লাউ প্রতি চাষাবাদে খরচ এসেছে ২৫ টাকা। সেই লাউ বাজারে নিয়ে গেলে পাইকারি বিক্রি করতে হয় ১৫ টাকা। এভাবে প্রতিবছর লস দিতে থাকলে কৃষকরা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। আগামীতে আর কোনোপ্রকার সবজি চাষ করবে না। আমরা চাই সরকার কৃষকদের দিকে একটু নজর দিক।
আমির হোসেন মোল্লা নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘চাষাবাদের শুরুতে সরকার থেকে যদি আমাদের বীজ ও সার দেওয়া হয়। তাহলে সবজির দাম কম থাকলেও ক্ষতি হবে না। আমরা চাই আগামী মৌসুম থেকে সরকারিভাবে সকল কৃষকদের বীজ ও সার দেওয়া হোক।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, এ বছর শীতকালীন শাকসবজি লক্ষ্যমাত্রার চাইতেও বেশি আবাদ হয়েছে এবং বেশ ভালো ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাতের ফলে একই জমিতে বেশ কয়েকবার চারা রোপণ করায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদের প্রণোদনা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। মৌসুমের শুরুতে চাষাবাদ করলে দাম ভালো পাওয়া যাবে।
এফএ/জিকেএস