রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেই জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
Advertisement
তারা বলেন, ঐকমত্যের ক্ষেত্রে ১৭ কোটি মানুষের কাছে একই মত পাওয়া সম্ভব নয়, যাওয়াও সম্ভব নয়। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের বা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে- তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হলেই জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব। কারণ সরকার জাতীয় ঐকমত্য করতে গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেই আসবে। জাতীয় ঐকমত্যের বৈধতার ক্ষেত্রে গণভোটের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব কথা বলেন। ‘সংকট থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভা করে নাগরিক ঐক্য।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৫ আগস্টের পর অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ঐকমত্যের বিকল্প নেই। ঐকমত্যের মাধ্যমে সব সম্ভব। জাতীয় ঐকমত্যের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
Advertisement
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদের আলোকে শপথ নিয়েছে। তার মেয়াদ কত সেটা দেওয়া নেই। নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচন কমিশন যতই নিরপেক্ষ বলুক, সেটি ঠুঁটো জগন্নাথ। এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করেছে, তাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য করতে হবে। কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধান নিয়ে বেশি বিরোধ নেই, আমি দেখেছি, আলী রীয়াজ পাঠিয়েছেন। তবে ৭১- ইতিহাস লড়াই, এটা আলাদা। এটি চব্বিশের সঙ্গে মেলানো ঠিক হবে না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রাফি সালমান রিফাত বলেন, দেশে চলমান সংকট কি ৫ আগস্টের পরের সংকট? আমরা যে রাজনৈতিক সংকটের কথা বলি, এটা তো ১৫ বছরে ধ্বংস করা কাঠামোর এবং নির্বাচনের কারণে তৈরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক করার চেষ্টা করা হয়। এটি আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের মনে করেছিল। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সবাই অংশ নিয়েছিল শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে। ক্রেডিট তো সব দলের, কারও একক নয়। জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষায় আমাদের সবার ঐকমত্যের জায়গায় কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ বিষয়ে আমাদের ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা দেখেছি আন্দোলনের পর একটা মার্শাল ল আসে। সেটি পাকিস্তান আমল থেকে দেখে আসছি। এবারের আন্দোলন কিন্তু ভিন্ন, আমরা সবাই নির্যাতনের শিকার হয়েছি। শেখ হাসিনা তো ১৫ বছরে সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল নির্বাচনমুখী হওয়া। আমরা নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ চালাবো। যত সমস্যার একমাত্র সমাধান নির্বাচন।
Advertisement
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, সরকারকে ব্যর্থ অযোগ্য মনে করলে নির্বাচনের মতো বড় বিষয় সরকার করতে পারবে এটা কেন প্রত্যাশা করছেন? ৬ আগস্ট পত্রিকায় গণঅভ্যুত্থান, হাসিনার পতন গুরুত্ব দিয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় সরকারের কথা বলা হয়েছিল। আবার সেনাপ্রধান বলেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার হবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সরকারে না গিয়ে কেন অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে গেল?
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে থেকে ৬ মাসের জবাবদিহি চাওয়া দরকার। কী কী করেছে ৬ মাসে?
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, দেশে সংকট আছে, এ বিষয়ে দ্বিমত নেই। নানান স্বার্থে আমাদের নানান মত আছে। তবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কোন দ্বিমত নেই। এক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। যেটি ব্যবহার করে এক দলীয় বা ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে সেটির বিলোপ করতে হবে। বাহাত্তরের সংবিধানের হাত ধরে আওয়ামী লীগ বার বার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান একটা বিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধান একদলীয়, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা, আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার যন্ত্র। এটাকে পুরোপুরি বাতিল করতে হবে।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, জাতীয় নেতৃত্ব বের করতে ছাত্রদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিন। এতে করে নেতৃত্বে বের হয়ে আসবে। সরকারকে বলি, বেশি বেশি সংস্কারের কথা বলে কুসংস্কার করবেন না। যত দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন স্বপন বলেন, ১৫ বছর রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ পতন ঘটাতে পারেনি। কিন্তু ছাত্ররা সেটি পেরেছে। তাদেরকে বাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক ঐকমত্য করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাদের অংশীজন হিসেবে রাখতে হবে। যাতে আগামীতে কেউ ফ্যাসিবাদ না হয়ে ওঠে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, একাত্তরকে বাদ দিয়ে কিছু করতে দেওয়া হবে না। কেউ বলে মহান গণঅভ্যুত্থান, কেউ বলে বিপ্লব। কিন্তু বিপ্লব ও মহান অভ্যুত্থান আলাদা। দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়নি, স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালেই।
কেএইচ/কেএসআর/জিকেএস