• দাবি পরিচালক-যুগ্ম পরিচালকের অপসারণ
Advertisement
নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. গুরুদাস মন্ডলের চাকরিতে যোগদান ইস্যুতে উত্তপ্ত রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল (নিনস)। হাসপাতালে দিনভর মহড়া, হাতাহাতি ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় বন্ধ নিয়মিত অস্ত্রোপচার। পরিচালক ও যুগ্ম পরিচালকের অপসারণ চান চিকিৎসকরা। অন্যথায় বড় কর্মসূচিতে যাবেন তারা।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে। সহযোগী অধ্যাপক গুরুদাস মন্ডল যোগদান করতে এলে প্রতিবাদ করেন অন্য চিকিৎসকরা। এ নিয়ে বেশ হট্টগোলও হয়।
খবর পেয়ে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক দুপুর পৌনে ১২টায় হাসপাতালে যান, এসময় পরিচালকের দপ্তরের সামনে আউটসোর্সিংয়ের শখানেক কর্মীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদের সঙ্গে কথা বলার সময় কয়েকজন আনসার সদস্য এসে পরিচয় জানতে চান। পরিচয় পেয়ে আনসাররা নিবৃত হলেও তাদের সঙ্গে থাকা সাদা পোশাকে কয়েকজন বাধা দেন। আবু তালেব নামের একজন নিজেকে পরিচালকের সিকিউরিটি স্টাফ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আপনি এখানে থাকতে পারবেন না। নিচে চলে যান।’ পরে পরিচালকের পিএ বাবুল মিয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আপনি এখানে কাজ করতে হলে আগে পরিচালকের অনুমতি নিতে হবে।’
Advertisement
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, বড় হাসপাতাল কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেক। এদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। তবে মারামারির ঘটনা ঘটেনি।
অভিযোগ শোনলাম আপনার স্টাফরা চিকিৎসকদের ওপর হামলা করেছে, জবাবে তিনি বলেন, স্টাফরা আবেগে কিছু করতে পারেন, কিন্তু মারামারির ঘটনা আমার জানা নেই।
পরিচালকের রুমের সামনে নিয়মিত সিকিউরিটির বাইরেও আনসারদের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি শখানেক অতিরিক্ত যুবককে পরিচালকের রুমের সামনে দেখা গেছে। পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলেন, তারা সিকিউরিটি স্টাফ।
পরিচালকের সিকিউরিটির দায়িত্বে নিয়োজিত ওই স্টাফদের দুজন জানান, একজন চিকিৎসক জয়েন করতে এসেছিলেন। পরিচালক মহোদয় জয়েন নেননি। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকরা এসে পরিচালকের সঙ্গে এ বিষয়ে খারাপ আচরণ করেন। যে কারণে আউটসোর্সিংয়ের স্টাফদের খারাপ লেগেছে। তারা এটার প্রতিবাদ করেছেন।
Advertisement
পরে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বেশকিছু লোক মহড়া দিচ্ছেন, বিভিন্ন রুমে যাচ্ছেন। ওই সময় বিএনপি-জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের মিটিং হচ্ছে জেনে ৪২০ নম্বর রুমে গেলে দেখা যায়, সেটিও অবরুদ্ধ। দুই শতাধিক তরুণ রুমের সামনে অবস্থান করছেন।
এরা কারা? জানতে চাইলে বাইরে থাকা এক চিকিৎসক জানান, এরা আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত। পরিচালকের নিজস্ব লোক। চিকিৎসকদের শায়েস্তা করতে পাঠিয়েছেন পরিচালক।
পরে মোবাইল ফোনে নিনস শাখা ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. জালাল উদ্দিন রুমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডা. গুরুদাস মন্ডল স্বাচিপ (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) করেন। তিনি জুলাই বিপ্লবের সময় শান্তি মিছিলেও অংশ নিয়েছেন। চার মাস আগে আমরা পাবনা বদলি করেছিলাম তাকে। পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ সাহেব উনাকে আবার নিয়ে এসেছেন। এটা তো উনি ঠিক করেননি। উনি নিজেও তো শান্তি সমাবেশে গেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন। ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বাসায় গেছেন, তার পক্ষে অবস্থান জানান দিয়েছেন। এখন আবার তিনি এ রকম একটা অন্যায় কাজ করবেন, এটা আমরা আশা করিনি। আমাদের এখানে আওয়ামী লীগপন্থি ছাড়া বিএনপি-জামায়াতসহ সব চিকিৎসক এ ঘটনায় মর্মাহত। আমরা ৪০-৫০ জন ডাক্তার গিয়ে দ্বীন মোহাম্মদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছি। কেন আপনি এ কাজটা করলেন? এটা করে চলে আসার পর আমরা ৪২০ নম্বরে বসেছি।
তিনি বলেন, আমরা চলে আসার পর পরিচালকের গত ১০ বছরের মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের বলেন, আমাদের শায়েস্তা করতে। তারা পুরো হাসপাতালে মহড়া দিয়েছে। মিছিল করেছে। এতে তাদের সামনে পড়েছে আমাদের দুজন ডাক্তার। তাদের মারধরও করা হয়েছে। সব ডাক্তার মিলে সামনে দাঁড়ানোর পর তারা পিছু হটে।
ডা. জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, আমরা আউটডোর ও জরুরি সেবা চালু রেখেছি। ইনডোরের নিয়মিত অস্ত্রোপচার আপাতত বন্ধ রেখেছি। আমরা বড় কর্মসূচিতে যেতে চাই না। পুরো শাটডাউন করার পক্ষে আমরা না। কিন্তু যদি প্রশাসন তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণি দিয়ে চিকিৎসকদের হেনস্তা করে আমরা বাধ্য হবো। আমাদের দাবি, এ প্রশাসন অপসারণ করতে হবে। এরা হাসিনার দোসর। আমরা তাদের চাই না। দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। পরিচালক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ ও যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলম মন্ডলের অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় বড় কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।
এ অবস্থায় হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যেও দেখা গেছে আতঙ্ক। একজন আরেকজনকে বলতে শোনা গেছে, ‘হাসপাতালে কোনো ঝামেলা হয়েছে বোধহয়।’ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীদের অপেক্ষায় থাকতেও দেখা গেছে সেবার জন্য।
এসইউজে/এমএএইচ/জিকেএস