পটুয়াখালী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লোহালিয়া নদীর তীরে গত দুই দশকে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। যার নাম স্থানীয়ভাবে দেওয়া হয়েছে ছৈলা বন। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ বনবিড়াল, শিয়ালের মতো ছোট ছোট বন্যপ্রাণীর বসবাস। বনটি শহরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
Advertisement
তবে সম্প্রতি এই চরের জমি নিজেদের দাবি করে বনের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী গ্রুপ গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বনের গাছ কেটে সাবার করেছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নদীর চরে জেগে ওঠা প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করা হচ্ছে। কয়েক হাজার গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে বনটির পাঁচ একর এলাকা থেকে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পটুয়াখালী জেলা শহর লাগোয়া লোহালিয়া নদীর চরে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। বনটি রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন উজাড়ের সাম্প্রতিক ছবি-জাগো নিউজ
আরও পড়ুন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সামাজিক বনায়নের গাছ কাটা যাবে না: রিজওয়ানা দেশের একমাত্র ‘দেশি খেজুর গাছের জাত উন্নয়ন’ বাগানটি দখলের অভিযোগবনের গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় বাসিন্দা সাইদ তালুকদার দাবি করেন এটি তাদের রেকর্ড করা সম্পত্তি। কিন্তু স্যাটেলাইট ইমেজের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। ভূমি অফিসের নথিপত্রে এই বনের জমিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হিসেবে নথিভুক্ত করা হলেও স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায়, যে স্থান থেকে নিজেদের জমি দাবি করে গাছ কাটা হচ্ছে ২০০৪ সালেও এই স্থানে চরের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। মূলত ২০১৪ সালের পর থেকেই ধাপে ধাপে এই বাগানটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
Advertisement
গত এক দশক আগে লোহালিয়া নদীর কাঠপট্টি এলাকায় নদীর প্রশস্ততা ছিল ৪২৫ মিটার। তবে বর্তমানে সেখানে নদীর প্রশস্ততা কমে হয়েছে ১৫৩ মিটার। বাকি ২৭২ মিটার এলাকায় চর পড়ে প্রাকৃতিকভাবেই ছৈলা বন সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে লোহালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বনভূমিটি বিস্তৃত হয়েছে। তবে স্বাধীনতার আগ থেকে এই জমির রেকর্ডিও মালিক বলে নথিপত্র উপস্থাপন করে এই চর তাদের বলে দাবি করছে একটি পক্ষ।
গুগল আর্থের ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক দশক আগে লোহালিয়া নদীর কাঠপট্টি এলাকায় নদীর প্রশস্ততা ছিল ৪২৫ মিটার। তবে বর্তমানে সেখানে নদীর প্রশস্ততা কমে হয়েছে ১৫৩ মিটার। বাকি ২৭২ মিটার এলাকায় চর পড়ে প্রাকৃতিকভাবেই ছৈলা বন সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে লোহালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বনভূমিটি বিস্তৃত হয়েছে। তবে স্বাধীনতার আগ থেকে এই জমির রেকর্ডিও মালিক বলে নথিপত্র উপস্থাপন করে এই চর তাদের বলে দাবি করছে একটি পক্ষ।
গাছ কাটার আগে যেমন ছিল বন-ফাইল ছবি
‘সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস ঝুঁকিতে লোহালিয়া পাড়ের বনভূমি’ এই শিরোনামে জাগো নিউজে ২০২৪ সালের ১৫ মে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে লোহালিয়া নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে গড়ে ওঠা ১৫৭ হেক্টর প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ১৯৭২ সালের বন আইনের ৪ ধারায় প্রজ্ঞাপন জারি করে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করার জন্য উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালী থেকে ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়। তবে গত ছয় মাসেও এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ধাপে ধাপে বন থেকে গাছ কাটা শুরু হয়। প্রথমদিকে কিছু গাছ কাটলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা কিংবা নিষেধাজ্ঞা না থাকায় গত এক মাস ধরে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে আধুনিক করাত মেশিন দিয়ে চলছে গাছ কাটা, যা ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত চলমান ছিল।
Advertisement
গাছ কেটে সাবাড় করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা-ছবি জাগো নিউজ
এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ধাপে ধাপে বন থেকে গাছ কাটা শুরু হয়। প্রথমদিকে কিছু গাছ কাটলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা কিংবা নিষেধাজ্ঞা না থাকায় গত এক মাস ধরে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে আধুনিক করাত মেশিন দিয়ে চলছে গাছ কাটা, যা ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত চলমান ছিল।
আরও পড়ুন দেড় বছরেও শুরু হয়নি স্লুইস গেটের কাজ, ভোগান্তি চরমে সওজের জমি ভাড়া দিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্যএদিকে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাছ কাটা হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানে না পটুয়াখালী বন বিভাগ। এ বিষয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে বন বিভাগের বক্তব্য জানতে চাইলে নড়েচড়ে বসেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে একটি টিম পাঠিয়ে গাছ এবং গাছ কাটার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
এভাবেই কাটা হচ্ছে গাছ-ছবি জাগো নিউজ
খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথেই অভিযান পরিচালনা করে দুটি গাছ কাটার মেশিনসহ কুড়াল জব্দ করেছি। ৩৩৭ ঘনফুট গাছ সিস করা হয়েছে। ২.৩৭ হেক্টর এলাকার গাছ কাটার প্রমাণ পেয়েছি। জমিটি নিয়ে বিরোধ আছে, তবে এরপরও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন থেকে গাছ কাটার কোনো সুযোগ নেই। যারা গাছ কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথেই অভিযান পরিচালনা করে দুটি গাছ কাটার মেশিনসহ কুড়াল জব্দ করেছি। ৩৩৭ ঘনফুট গাছ সিস করা হয়েছে। ২.৩৭ হেক্টর এলাকার গাছ কাটার প্রমাণ পেয়েছি। জমিটি নিয়ে বিরোধ আছে, তবে এরপরও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন থেকে গাছ কাটার কোনো সুযোগ নেই। যারা গাছ কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’
স্যাটেলাইট ইমেজে ২০০৪ ও ২০২৪ এর পার্থক্য-ছবি জাগো নিউজ
এ বিষয় জানতে চাইলে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শহরের পাশে গড়ে ওঠা এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট রক্ষায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। ইতিমধ্যে বনবিভাগ আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বনটি কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়েও আমরা কাজ করছি।’
এএসএআর/এসএইচএস/জিকেএস