ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রায় নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের কাছে আগ্রহ বেসবল, আমেরিকান ফুটবল, বাস্কেটবলের মতো খেলাগুলোয়। সেখানেই ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা আইসিসি করছে অনেকদিন ধরেই। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সহ-আয়োজক করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে।
স্বাগতিক দেশ হিসেবে এমনিতেই বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেকটা অনুমিতভাবেই অভিভাসীদের প্রাধান্য রয়েছে মার্কিনিদের দলে। অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেলই ভারতের গুজরাট রাজ্যের হয়ে খেলেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে, দেশটির আরও কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন এমন। আছেন নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করা কোরি অ্যান্ডারসনও।
১৮শ শতকে অভিবাসীদের হাত ধরে ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় হলেও পাঁচ বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে যুক্তরাষ্ট্র। ওই বছরই জয়ও পেয়ে যায় তারা। কেইমান আইল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। টেস্ট দলের বিপক্ষে তাদের জয় আসে ২০২১ সালে। এবার তারা হারায় আয়ারল্যান্ডকে। এবারের বিশ্বকাপেও একই গ্রুপে পড়েছে দুই দল।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে দীর্ঘদিন খেলা কোরি অ্যান্ডারসন দলটির সবচেয়ে বড় তারকা, খেলেছেন বিশ্বকাপের ফাইনালেও। ব্যাট ও বল হাতে তফাৎ গড়ে দিতে পারেন তিনি। শক্ত শেকড়ের আশায় এখন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন অ্যান্ডারসন।
অ্যান্ডারসনের বাইরে বাকিদের কয়েকজন আছেন উপমহাদেশ থেকে। অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল খেলেছেন ভারতের রাজ্য গুজরাট অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। অ্যান্দ্রিস গউর, হারমিত সিং, মিলিন্দ কুমার, সৌরভ নেত্রাভালকাররাও স্থানীয় নন। পাকিস্তান থেকে এসেছেন শায়ান জাহাঙ্গীর। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শেফলি ফন স্ক্যালয়াক ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে এসেছেন অ্যারন জোন্স ও স্টিভেন টেলর।
ব্যাটার অ্যারন জোন্সের দিকে চোখ থাকবে বেশি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি আছে তার। কোরি অ্যান্ডারসনের সঙ্গে হারমিত সিংও ভরসা হতে পারেন তাদের। ব্যাট হাতে দলের আশা থাকবে অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেলের কাছ থেকেও। পেসার আল খানের কাছেও থাকবে প্রত্যাশা। সম্প্রতি শুরু হওয়া মেজর লিগ ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা তাদের কাজে আসতে পারে বিশ্বকাপে।
উদ্বোধনী ম্যাচে তারা মুখোমুখি হবে প্রতিবেশী দেশ কানাডার। ‘এ’ গ্রুপে থাকা দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, ভারত-পাকিস্তানও আছে একই গ্রুপে। ৬ জুন পাকিস্তান ও ১২ জুন ভারতের বিপক্ষে লড়বে তারা। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ২৪ জুন আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে স্বাগতিকরা।
জন্ম: ১ মে, ১৯৯৩; বয়স: ৩১
দলে ভূমিকা: উইকেরক্ষক ব্যাটার
ব্যাকগ্রাউন্ড
জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভারতের গুজরাটে। রাজ্যের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ও ১৮ পর্যায়েও খেলেছেন মোনাঙ্ক প্যাটেল। যদিও ভারতের হয়ে ক্রিকেটের পথচলা খুব বেশিদূর এগোয়নি তার জন্য। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড পেয়ে যান তিনি। এরপর ২০১৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন নিউ জার্সিতে।
দেশ বদলালেও ক্রিকেটের শেকড় ছাড়তে পারেননি মোনাঙ্ক। ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আমেরিকান কোয়ালিয়াফায়ারে প্রথমবার সুযোগ পান যুক্তরাষ্ট্রের দলে। ওই টুর্নামেন্টে হয়ে যান সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
অধিনায়কত্ব ও সাফল্য
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পরের বছর অভিষেক হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে। ২০২১ সালে এসে যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক করা হয় তাকে। এবার ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
নেতৃত্বে অবশ্য সাফল্যের দেখাই পেয়েছেন বেশি। এখন অবধি ১৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ১৩টিতেই জয় এনে দিয়েছেন তিনি, হেরেছেন কেবল তিনটিতে। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার সবমিলিয়ে ২৪টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে। ২১ ইনিংসে ১৩৩.৪৪ স্ট্রাইক রেট ও ২১.০০ গড়ে ৩৯৯ রান করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রায় নেই বললেই চলে। শুধু উপমহাদেশ থেকে মানুষদেরই আগ্রহ আছে খেলাটা নিয়ে। এর মধ্যেও ফুল টাইম ক্রিকেট নিয়েই আছেন মোনাঙ্ক। নিজের খেলার বাইরে সপ্তাহে তিনদিন কোচিং করান।
এর পেছনে মোনাঙ্কের একটা স্বপ্নও আছে- একদিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়বে ক্রিকেট। তার বড় মঞ্চ হতে পারে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যৌথভাবে এবার স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটিতে খেলার জনপ্রিয়তা বাড়াতে মোনাঙ্কদের দারুণ কিছু করে দেখাতে হবে আগে। ওই পথটা অবশ্য কঠিন- ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে একই গ্রুপে আছে তারা!
জন্ম: ১৮ অক্টোবর, ১৯৬৮; বয়স: ৫৫
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। ক’দিন আগেও ছিলেন দেশটির অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ। এখন নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন স্টুয়ার্ট ল। যুক্তরাষ্ট্রের কোচ হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই শুরু হয়েছে তার মিশন। প্রথম দেখাতেই হারিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। যুক্তরাষ্ট্র ঘরের মাঠে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলবে স্টুয়ার্ট ল’র অধীনে।
খেলোয়াড়ী জীবন
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একটি টেস্ট খেলেছেন তিনি, ওই ম্যাচে পেয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। ৫৪ ওয়ানডেতে মাঠে নেমে ল’র ব্যাট থেকে এসেছে ১২৩৭ রান, উইকেটও পেয়েছেন ১২টি। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিসংখ্যানও বেশ সমৃদ্ধ। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে বৈচিত্রম্যয় কোচিং ক্যারিয়ার তার।
কোচিং ক্যারিয়ার, অভিজ্ঞতা ও সাফল্য
শুরুটা করেন শ্রীলঙ্কার সহকারী কোচ হিসেবে, ২০০৯ সালে। পরে ২০১১-১২ বাংলাদেশের প্রধান কোচ হন তিনি। তাদেরকে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালেও তোলেন, যদিও শেষ অবধি শিরোপা জিততে পারেননি। ৯ মাসের মাথায় বাংলাদেশের চাকরি ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান ল।
সেখানে গিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেন। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ঘরোয়া লিগের দলে কোচিং করান। ছিলেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্বও। অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে ফের বাংলাদেশে আসেন ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দলের পরামর্শক হয়ে।
এই দায়িত্ব ছেড়ে ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। এরপর মাঝে কিছুদিন ছিলেন আফগানিস্তানের অন্তবর্তী প্রধান কোচ। সবশেষ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে প্রধান কোচ হিসেবে এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে তোলেন।
তাদের দায়িত্ব শেষ করার পর মাসখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের হেড কোচ হয়েছেন তিনি। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সহ-আয়োজক হিসেবে আছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬টিসহ মোট ৯টি স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচগুলো। স্থানীয় দর্শকদের ক্রিকেটে আকৃষ্ট করতে ভালো করতে হবে স্টুয়ার্ট লর শিষ্যদের।
যুক্তরাষ্ট্র স্কোয়াড
মোনাঙ্ক প্যাটেল (অধিনায়ক), অ্যারন জোন্স (সহ-অধিনায়ক), অ্যান্দ্রিস গউস, কোরি অ্যান্ডারসন, আলি খান, হারমিত সিং, জেসি সিং, মিলিন্দ কুমার, নিসর্গ প্যাটেল, নিতিশ কুমার, নশতুশ কেনজিগে, সৌরভ নাথরালভাকার, শ্যাডলি ফন শ্যালকউইক, স্টিভেন টেলর ও শায়ান জাহাঙ্গীর।
গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম, টেক্সাস
কানাডা 194/5 (20 ওভার)
যুক্তরাষ্ট্র 197/3 (17.4 ওভার)
ফল: যুক্তরাষ্ট্র ৭ উইকেটে জয়ী।
গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম, টেক্সাস
পাকিস্তান 159/7 (20.0 ওভার)
যুক্তরাষ্ট্র 159/3 (20.0 ওভার)
ফল: যুক্তরাষ্ট্র সুপার ওভারে জয়ী।
নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম, নিউ ইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্র 110/8 (20 ওভার)
ভারত 111/3 (18.2 ওভার)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।
সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্ক, লডারহিল, ফ্লোরিডা
যুক্তরাষ্ট্র 0/0 (0.0 ওভার)
ফল: ম্যাচ পরিত্যক্ত
স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়াম, অ্যান্টিগা
দক্ষিণ আফ্রিকা 194/4 (20.0 ওভার)
যুক্তরাষ্ট্র 176/6 (20 ওভার)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮ রানে জয়ী।
কেনসিংটন ওভাল, বার্বাডোজ
যুক্তরাষ্ট্র 128/10 (19.5 ওভার)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ 130/1 (10.5 ওভার)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ উইকেটে জয়ী।
কেনসিংটন ওভাল, বার্বাডোজ
যুক্তরাষ্ট্র 115/10 (18.5 ওভার )
ইংল্যান্ড 117/0 (9.4 ওভার)
ফল: ইংল্যান্ড ১০ উইকেট জয়ী