প্রবাস

গ্রিসে ভূমিকম্প, বাংলাদেশ দূতাবাসের সতর্কবার্তা

সান্তোরিনি দ্বীপ, সৌন্দর্যের এক মোহময় স্বর্গ, যেখানে গ্রিসের পতাকার রঙের আদলে নীল-সাদা ঘরবাড়ি আর এজিয়ান সাগরের ঢেউ একসঙ্গে মিশে যায়। ‘ইনস্টাগ্রাম দ্বীপ’ খ্যাত সান্তোরিনি এখন ভূমিকম্প আতঙ্কে কাঁপছে। একের পর এক ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে সান্তো রিনি ও আমোরগোস দ্বীপ। আতঙ্কে সরে যাচ্ছেন পর্যটকরা।

Advertisement

রোববার শুরু হওয়া এই ভূমিকম্পের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে, যার মধ্যে অন্তত ২০০টির তীব্রতা উল্লেখযোগ্য। পর্যটননির্ভর দ্বীপ সান্তোরিনি ছাড়াও আমোরগোস, লোস ও আনাফির অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে, সান্তোরিনি দ্বীপ ও এর সংলগ্ন এলাকায় কর্মরত এবং বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। ভূমিকম্প সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন করে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে এক সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাসের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করারও অনুরোধ জানিয়েছেন।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এজিয়ান সাগরের দক্ষিণাঞ্চলে জলের নিচে টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া এই কম্পনের কারণ হতে পারে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা, এর সঙ্গে জলতলের নিচে থাকা আগ্নেয়গিরিরও সংযোগ থাকতে পারে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে সান্তোরিনিতে ৪.৯ মাত্রার কম্পন রেকর্ড করা হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন দ্বীপের হোটেল, বাড়িঘর খালি করে স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পর্যটকদের চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিতসোতাকিস নাগরিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

গ্রিসের অর্থনীতির একটি বড় অংশ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে সান্তোরিনি দ্বীপে প্রতি বছর লাখো পর্যটক আসেন। দ্বীপটির জনসংখ্যা মাত্র ১৫,০০০ হলেও ২০২৩ সালে এখানে প্রায় ৩০ লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। ফলে এই ভূমিকম্পের ধাক্কা দেশটির অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, বারবার ভূমিকম্পের কারণে স্থানীয়রা আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। কিছু এলাকায় মোবাইল ফোনে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে, যেখানে পাথর ধসে পড়ার ঝুঁকি ও আরও বড় ধরনের কম্পনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। ওলট পোর্টসহ কিছু জায়গায় যেসব স্থানে খাড়া পাহাড় রয়েছে, সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

Advertisement

১৯৫৬ সালে এই অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়, যা ভয়াবহ সুনামি সৃষ্টি করে এবং বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটায়। এছাড়া ২০১১ ও ২০১২ সালে একাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল, তবে সংখ্যায় এত বেশি ছিল না।

প্রায় ৩৫০০ বছর আগে, খ্রিষ্টপূর্ব ১৬২০ সালে, এই অঞ্চল ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের সাক্ষী হয়েছিল, যা মিনোয়ান সভ্যতার পতনের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। পাঁচের দশকে শেষবার সান্তোরিনিতে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোর কারণে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, হয়ত আবারও বড় ধরনের ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটতে পারে।

এ মুহূর্তে গ্রিসের সরকার ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং জনসাধারণকে যে কোনো ধরনের নির্দেশনার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে।

এমআরএম