যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত ১০৪ ভারতীয় নাগরিককে হাতকড়া ও শেকল বাঁধা অবস্থায় ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারতে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। টেক্সাস থেকে এসব অবৈধ ভারতীয়কে নিয়ে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পাঞ্জাবে অবতরণ করে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি উড়োজাহাজ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ইস্যুতে ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব পড়তে পারে বলে।
Advertisement
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কাগজপত্রবিহীন অবৈধ এসব ভারতীয় অভিবাসীর হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে উড়োজাহাজে ওঠানো হয়। প্রায় একদিনের ওই যাত্রায় তাদের ওই অবস্থায় রাখা হয়েছিল। তবে পুরোটা সময় ওই ভারতীয়দের হাত-পা বাঁধা ছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি সেটি নিশ্চিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইউএস বর্ডার পেট্রল মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে হাত-পা বেঁধে রাখা ভারতীয়দের ভিডিও প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির প্রধান মাইকেল ডব্লিউ ব্যাংকস ২৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর ক্যাপশনে লিখেছেন, সফলভাবে বিদেশিদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
‘সামরিক বিমান ব্যবহার করে এটি সবচেয়ে দূরত্বে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা। অভিবাসন আইন প্রয়োগে আমরা বদ্ধপরিকর- এই অভিযানের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে। যদি আপনি অবৈধপথে আমাদের দেশে আসেন, আপনাকেও ফেরত পাঠানো হবে।’
Advertisement
এদিকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে রাতের বেলা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিমান বাহিনীর সি-১৭ পরিবহন বিমানের পেছনের দিকটি খোলা। প্রথমে সেখানে ঢোকানো হয় একটি বিশালাকৃতির কার্গো। এরপর শিকলে বাঁধা অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ করানো হয়। ওই সময় তাদের হাঁটতে বেগ পেতে হচ্ছিল, যা ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। সাধারণত বড় দাগি আসামি অথবা যুদ্ধবন্দিদের এভাবে বেঁধে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ভারতের সংসদে সমালোচনার ঝড় বেয়ে গেছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবসহ অনেক সংসদ সদস্য প্রত্যাবর্তনের এমন ‘নৃশংস’ পদ্ধতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
‘মানুষ, অপরাধী নয়’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তারা সংসদের বাইরে বিক্ষোভ করেন এবং মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানান।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, যদি কেউ অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে, তাহলে মার্কিন প্রশাসনের অধিকার আছে তাদের ফেরত পাঠানোর। ভারতীয় নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিত হলে ভারত সরকারকেও তাদের গ্রহণ করতে হবে। তবে সামরিক বিমানে হাতকড়া ও শেকলে বেঁধে ফেরানো অপ্রয়োজনীয় ও অমানবিক।
Advertisement
এদিকে, এ বিষয়ে সংসদে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে সরকার এখনো বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী এই ইস্যুতে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা শুরু করেনি।
অন্যদিকে, ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে। এরই মধ্যে সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি ‘ওভারসিজ মোবিলিটি (সুবিধা ও কল্যাণ) বিল, ২০২৪’ নামে একটি খসড়া আইন প্রস্তাব করেছে, যা বিদেশে অভিবাসীদের সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের ওপর আরও বেশি চাপিয়ে দেবে।
এনডিটিভির দাবি, এই ভারতীয়দের বেশিরভাগই দালালদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। তারা লাখ লাখ রুপি খরচ করে যুক্তরাষ্টে গেছেন। কিন্তু দালাল তাদের বৈধ পথে না নিয়ে অবৈধ পথে নিয়ে গেছে।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ