জাতীয়

প্রশাসন ক্যাডারের ৫০, অন্য কাডারের কোটা ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ

সব সার্ভিসের সমতা আনা ও জনপ্রশাসনের উচ্চতর পদে মেধাবীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টিতে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং বাকি ক্যাডারগুলোর কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

Advertisement

একই সঙ্গে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে একটি ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)’ গঠনের সুপারিশ করেছে কমিটি।

কমিশনের প্রতিবেদনের নির্বাহী সারসংক্ষেপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। এরপর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং প্রতিবেদনটির নির্বাহী সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে।

বর্তমানে উপসচিব পদে ৭৫ ভাগ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ও বাকি ২৫ শতাংশ অন্য ক্যাডারগুলোর কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে থাকেন।

Advertisement

গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ৫০ ও বাকি ৫০ শতাংশ আসবেন অন্য ক্যাডারগুলো থেকে।

আরও পড়ুন

দেশকে ৪ প্রদেশে বিভক্ত করার সুপারিশ কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর, ওএসডি না করার সুপারিশ

কমিশনের এ খসড়া সুপারিশের খবর প্রচারিত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারসহ ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা। উপসচিব পদোন্নতির কমিশনের খসড়া সুপারিশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চরম দ্বন্দ্বে জড়ান বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। উভয় পক্ষই নিজেদের দাবির পক্ষে কর্মসূচিও পালন করেন।

কমিশনের সুপারিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব সার্ভিস থেকে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সচিবালয়ের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে একটি ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)’ গঠনের সুপারিশ করা হলো। সচিবালয়ের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে নিয়োগ পাওয়ার প্রত্যাশা বিভিন্ন সার্ভিস কর্মকর্তাদের নিয়োগ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে।

Advertisement

সিভিল সার্ভিস কাঠামো পিরামিডের মতো, তাই শীর্ষ পদে সবার যাওয়ার সুযোগ রাখা যায় না। সেক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে (মেরিটোক্রাসি) উচ্চতর পদগুলোতে আরোহণের সুযোগ প্রদান করাই যুক্তিসঙ্গত। বিশ্বের বহু দেশেই এ নীতি অনুসরণ করা হয়।

এমতাবস্থায়, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)’ গঠিত হতে পারে। সব সার্ভিস থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ভিত্তিতে এসইএস-এ নিয়োগ করা হলে একদিকে মেধার প্রাধান্য নিশ্চিত হবে; অন্যদিকে আন্তঃসার্ভিস অসমতা দূর হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

কমিশন সুপারিশে জানিয়েছে, বাস্তবতার নিরিখে প্রশাসনিক সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বর্তমানে উপসচিব পদের ৭৫ ভাগ ওই সার্ভিসের জন্য সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা রাখা আছে। সব সার্ভিসের সমতা বজায় রাখার স্বার্থে এবং জনপ্রশাসনের উচ্চতর পদে মেধাবীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন প্রশাসনিক সার্ভিসের ৭৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার বিষয়টি অধিকতর যৌক্তিক মনে করছে।

অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পদ অন্য সার্ভিসগুলোর জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনগত দিক পরীক্ষা করে দেখার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

‘কোনো কর্মকর্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও ৫০ শতাংশ কোটার কোনো একটি গ্রুপের পদ পূরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে কোনো গ্রুপের প্রার্থীকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে।’

পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা শেষ করে চূড়ান্ত সুপারিশ সরকারের কাছে পাঠাবে। প্রতি বছর একবার করে তিনটি পদের জন্য আলাদাভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে। প্রশ্নপত্র ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রতিভা ও বুদ্ধিবৃত্তিকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে কেউ একবার উত্তীর্ণ না হতে পারলে তিনি পরের ব্যাচে পরীক্ষা আরেকবার দিতে পারবেন।

আরও পড়ুন

১৫ বছর চাকরি করলে পেনশনসহ অবসর দেওয়ার প্রস্তাব সিভিল সার্ভিস পুনর্গঠন করে তিনটি পিএসসি গঠনের সুপারিশ

কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যে কোনো সার্ভিসের সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এসইএস-এর উপসচিব পদের জন্য আবেদন করে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। পদোন্নতির লিখিত পরীক্ষায় পাস মার্ক ৭০ শতাংশ, বার্ষিক পারফরমেন্স প্রতিবেদন ১৫ শতাংশ এবং বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ১৫ শতাংশ মার্ক নির্ধারণ করতে হবে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসে (এসইএস) প্রবেশের পর সিনিয়রিটি নির্ধারিত হবে সম্মিলিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেধাক্রম অনুসারে। কোনো বিশেষায়িত সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তা একবার ‘সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’ এ প্রবেশের পর তিনি আর তার পূর্বতন সার্ভিসে ফেরত যেতে পারবেন না। এসইএস পরীক্ষার রেজাল্টের ভিত্তিতে সব সার্ভিসের সদস্যদের নিয়ে একটি সম্মিলিত মেধা তালিকা তৈরি করা হবে।

কোনো কর্মকর্তা এসইএস-এ প্রবেশের পরীক্ষায় উপুর্যপরি দুইবার অকৃতকার্য হলে তিনি আর পুনরায় কোনো সুযোগ পাবেন না। কোনো কর্মকর্তা কোনো কারণে পদোন্নতি না পেলে তাকে তার কারণ লিখিতভাবে জানাতে হবে। তাকে তার ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।

সুপারিশ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যেসব কর্মকর্তা বর্তমানে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে কর্মরত আছেন তারা সবাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসইএস-এ অন্তর্ভুক্ত হবেন। সচিব, মুখ্যসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসইএস-এর সদস্য হবেন।

আরএমএম/এমকেআর/জেআইএম