বিশ্ববিখ্যাত আধ্যাত্মিক নেতা প্রিন্স করিম আগা খান মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ঘোড়দৌড়, বিপুল পরিমাণ সম্পদ এবং বিশ্বজুড়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বেশ পরিচিত। তার দাতব্য সংস্থা আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।
Advertisement
প্রিন্স করিম আগা খান ছিলেন শিয়া ইসমাইলি সম্প্রদায়ের ৪৯তম বংশগত ইমাম। ১৯৫৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে দাদার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি। তার দাতব্য সংস্থা জানিয়েছে, পর্তুগালের লিসবনে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় পরিবারের সদস্যরা সবাই তার পাশে ছিলেন।
সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করা আগা খান ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক এবং কেনিয়ার নাইরোবিতে তার শৈশব কাটে।পরে তিনি সুইজারল্যান্ডে ফিরে যান এবং লে রোজি স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর হার্ভার্ডে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়ালেখা করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
ফ্রান্সের একটি প্রাসাদে বসবাস করতেন তিনি। এই পরোপকারী এবং দানবীর নেতার মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। ব্রিটিশ রাজা এবং তার প্রয়াত মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আগা খান।
Advertisement
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের বন্ধু আগা খানের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন রাজা চার্লস। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আগা খানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
আগা খান বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। বাহামায় একটি ব্যক্তিগত দ্বীপ, একটি সুপার-ইয়ট এবং ব্যক্তিগত বিমান ছিল তার। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যবসা, বিশেষ করে ঘোড়া পালন ও রেসিং শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে। তার সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলার।
ঘোড়া প্রতিপালনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতেও আগা খানের বিশাল বিনিয়োগ ছিল। বিশেষ করে, তিনি ইউরোপের অন্যতম সফল ঘোড়া প্রজননকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বিখ্যাত ঘোড়া শেরগার ১৯৮১ সালে এপসম ডার্বি জয় করে। তবে ১৯৮৩ সালে ঘোড়াটি অপহরণ করা হয় এবং এটি আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ব্রিটিশ, ফরাসি, সুইস ও পর্তুগিজ নাগরিকত্বের অধিকারী এই ধনকুবের বিশ্বের দরিদ্র অংশের মানুষের সহায়তায় প্রচুর অর্থ দান করেছেন। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আগা খানের দাতব্য সংস্থা শত শত হাসপাতাল পরিচালনা করছে। এছাড়া শিক্ষা এবং সংস্কৃতি উন্নয়নেও তার সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
Advertisement
আগা খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি আগা খানকে বিশ্বাসী, দূরদর্শী, উদার এবং অসাধারণ একজন মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
প্রায় দেড় কোটি ইসমাইলি মুসলমানের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে আগা খান দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তানে প্রায় পাঁচ লাখ ইসমাইলির বসবাস। এছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান ও আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে তারা অবস্থান করছেন।
টিটিএন