ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বাস্তবায়ন করতে আলটিমেটাম দিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে জমির মালিকসহ সব অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
Advertisement
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ড্যাপ (২০২২-৩৫) সংস্কার এবং জনবান্ধব ইমারত বিধিমালা চূড়ান্ত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের সহ-সভাপতিসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং আবাসন ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে আবাসন ব্যবসায়ীরা বলেন, বৈষম্যমূলক ও ক্রটিপূর্ণ ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) প্রায় আড়াই বছর আগে প্রকাশ করা হয়। এটা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছেন ঢাকাসহ বড় বড় শহুরগুলোর জমির মালিকরা। তারা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন। আমরা রিহ্যাবের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বৈষম্যমূলক ড্যাপ এবং নির্মাণ বিধিমালা নিয়ে অসংখ্যবার সভা করেছি, চিঠি দিয়েছি, নতুন প্রস্তাবনা দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের বারবার আশ্বাস দিয়েছে, বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ড্যাপ এবং নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা অনেক দিন ধৈর্য ধরে ছিলাম। অন্য সংস্থা বা সংগঠনের মতো আমরা রাস্তায় আন্দোলন না করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিব্রত না করে সহিষ্ণুতার সঙ্গে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।
এসময় তারা বলেন, আমাদের পিঠ একেবারে দেওয়ালে ঠেকে গেছে। নানান ছলচাতুরি করে সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। আমরা আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে ড্যাপ ও নির্মাণ বিধিমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে বলতে চাই, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। কোনো ধরনের টালবাহানা চলবে না। এ সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে জমির মালিকসহ সব অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে। আশা করি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবে।
Advertisement
রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ড্যাপের কারণে ঢাকা মহানগরের ৮০ শতাংশ অপরিকল্পিতই থেকে যাবে। শহর এমন একটা মরণ ফাঁদে পরিণত হতে যাচ্ছে যাতে কোনো রকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা দুর্ঘটনা ঘটলে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটবে, কোনোভাবেই উদ্ধারকর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারবে না। অথচ এই বৈষম্যমূলক ড্যাপের জন্য এখনো পতিত সরকারের লবিস্ট (কয়েকজন প্ল্যানার্স) মায়াকান্না করে বেড়াচ্ছেন নিজস্ব স্বার্থ হাছিলের জন্য। ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) বাস্তবায়নের কারণে ঢাকা শহরের পরিবেশের উন্নয়ন ও রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ ফার কমিয়ে দেওয়ার ফলে ভূমি মালিকরা ভবন নির্মাণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে মহল্লার রাস্তাগুলো অপ্রশস্ত থেকে যাচ্ছে এবং ফাঁকা জায়গা, সেমিপাকা জায়গা, পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনগুলো অস্বাস্থ্যকরই থেকে যাচ্ছে। এক কথায় ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ জায়গা অপরিকল্পিত রেখে নগরবাসীকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করা অতি জরুরি। ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালার কল্যাণে ঢাকা মহানগরের মহল্লার রাস্তাগুলো উল্লেখযোগ্য হারে প্রশস্ত হচ্ছিল, ভবনগুলোতে একাধিক বেইজমেন্ট করার কারণে বহুসংখক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা হচ্ছিল। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রাখার ফলে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছিল। এছাড়াও টিনশেড বা জরাজীর্ণ অস্বাস্থ্যকর পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছিল। এই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এর মতো ভালো বিধিমালা বাতিল করা হলে তা একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। এতে ঢাকার জমির মালিক ও আবাসন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
মো. ওয়াহিদুজ্জামান অরও বলেন, সুন্দর ও সময়োপযোগী ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ কে উপেক্ষা করে ও মাস্টার প্ল্যান-২০১০ কে অন্যায়ভাবে রহিত করে কেড়ে নেন ২০০৮ এর ফার অংশটুকু। সৃষ্টি করা হয় নগরবাসীর মধ্যে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য। এরপর থেকেই আমাদের প্রিয় রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে উন্নয়নে ধস নামে। স্থবির হয়ে যায় এই খাত সংশ্লিষ্ট অনেক শিল্প কারখানা। যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। বর্তমানে রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকের বেশি কমিয়ে দিয়েছে। ড্যাপে ফার হ্রাস করার পর ভবনের উচ্চতা কমে যাওয়াতে আমাদের হাতে নতুন প্রকল্প নেই বললেই চলে। ফলে আমাদের প্রকল্পগুলোতে নতুন নিয়োগ একেবারেই বন্ধ। উল্টো অনেকে বেকার হচ্ছেন কাজ না থাকায়। ইএআর/কেএসআর/জিকেএস
Advertisement