মক্কা শরীফের খুব কাছাকাছি থেকেও পবিত্র হজ পালন করতে পারেননি একজন সরকারি কর্মকর্তা। পবিত্র হজ পালনের নিয়তেই গিয়েছিলেন তিনি। মূল হজ পালনের আগে ওমরা হজও করেন। কিন্তু ৯ জিলহজের দিন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা যখন ‘লাব্বায়েক আল্লাহুমা লাব্বায়েক’ ধ্বনি মুখে তুলে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে ছুটে যাচ্ছিলেন তখন তিনি হোটেল কক্ষ থেকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন মনের অবস্থা যে কি রকম ছিল তা কোনভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তিনি সেই দুঃখ ভুলতে পারেন না। সারাজীবনই এ দুঃখ বয়ে বেড়াতে হবে। অবশ্য সান্ত্বনা হলো ঈদের দিন মক্কার হেরেম শরিফে জামায়াতে ঈদের নামাজ পড়েছেন। ভাগ্য বিড়ম্বিত সরকারি এই কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় পাস করা সরকারি এই কর্মকর্তা ২০০৯ সালের মে মাস থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বৃহস্পতিবার হজ মন্ত্রণালয়ের কথা প্রসঙ্গে হজ করতে না পারার সেই ঘটনাটি সংক্ষেপে বলেন। কৌতুহলবশতই ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে কিছুক্ষণ ইতস্তত করেন। বারবার অনুরোধের পর তিনি জানান, ৯ জিলহজ থেকে মূল হজের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১২ সালে তিনি ধর্মমন্ত্রণালয়ের হজ টিমের সদস্য হিসেবে পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব যান। হজের ঠিক দুদিন আগে অর্থাৎ ৭ জিলহজ তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী মো. শাহজাহান মিয়া মক্কায় মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন।একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তখন হজ করার চেয়ে অসুস্থ মানুষটির শয্যাপাশে থাকাকেই পবিত্র দায়িত্ব ভেবে তিনি নিজে, তৎকালীন হজ পরিচালক বজলুল হক বিশ্বাস ও আরো দুই-তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে থেকে কাবা শরীফের কাছাকাছি রয়ে যান। তিনি জানান, হজের আগে মক্কা নগরীতে লাখ লাখ মুসুল্লি জমায়েত হন। ৯ জিলহজ যখন মূল হজ শুরু হয় তখন থেকে হাজিরা আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে ছুটতে থাকেন। নানা দেশের বিভিন্ন বর্ণের নারী, পুরুষ ও শিশুর মুখে ‘লাব্বায়েক আল্লাহুমা লাব্বায়েক’ ধ্বনি উচ্চারিত হতে থাকে। ওই সময়ের অনুভূতি জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, সবাই যখন আরাফাতের ময়দানে চলে যায় তখন হঠাৎ করে কাবা শরীফের আশেপাশে অন্যরকম নীরবতা নেমে আসে। ওই সময় নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। আবার অসুস্থ মন্ত্রীর শয্যাপাশে থাকার কথা ভেবে কিছুটা শান্তি পাচ্ছিলেন বলে জানান। আগে-পরে দু-একবার হজ করার সুযোগ হয়েছে তার। আরবি ভাষাটা জানা থাকায় সেখানে গিয়ে বাংলাদেশি হাজিদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকেন তিনি। সমস্যা শুনে সমাধানের প্রচেষ্টা চালান। হাজিদের সেবার মাঝে আনন্দ খুঁজে পান। তবে মক্কা শরিফের কাছাকাছি থেকেও হজ করতে না পারার দুঃখ তিনি এখনো ভুলতে পারেননি আর সারাজীবনেও তা ভুলতে পারবেন না বলে জানান।এমইউ/এসএইচএস/এবিএস
Advertisement