ধর্ম

সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার ফজিলত

ইসলামে ঋণের বিনিময়ে সুদ গ্রহণ করা হারাম। কাউকে ঋণ দিলে তাতে কোনো রকম ফায়েদা গ্রহণ করার উদ্দেশ্য থাকা নিষিদ্ধ। ফায়েদা গ্রহণের উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো বিপদগ্রস্তকে ঋণ দেওয়া ইসলামে সদকার মতোই উত্তম আমল গণ্য হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো স্বার্থ ও ফায়েদামুক্ত ঋণ দিলে তা সদকা করার অর্ধেক সওয়াব পাওয়া যায়। (মুসনাদে আহমদ: ৩৯১১)

Advertisement

আরেকটি বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে দুইবার ঋণ দিলে সে সেই পরিমাণ সম্পদ একবার দান করার সমান সওয়াব পায়। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৪৩০)

বারাআ ইবনু আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে, টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথ হারিয়ে যাওয়া লোককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি দাস মুক্ত করে দেয়ার সম-পরিমাণ সাওয়াব। (সুনানে ১৯৫৭)

ঋণ গ্রহণকারী যদি অভাবগ্রস্ত হয়, ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে তাকে ছাড় দেওয়া, ঋণ পরিশোধের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া, সাধ্য থাকলে কিছু ঋণ বা সম্পূর্ণ ঋণ মাফ করে দেওয়াও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ, আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভের কারণ। আবুল ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অক্ষম ঋণগ্রস্তকে সময় দেবে অথবা তার ঋণ মওকুফ করবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে তার (আরশের) ছায়া দান করবেন। (সহিহ মুসলিম: ৩০০৬)

Advertisement

আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এক লোক মানুষের সাথে লেনদেন করত। সে তার কর্মচারীকে বলে দিত, তুমি যখন কোন অভাবগ্রস্তের কাছে যাবে তখন তাকে ক্ষমা করে দেবে। হয়ত আল্লাহ আমাদেরকেও ক্ষমা করে দেবেন। তারপর ওই ব্যক্তি যখন আল্লাহর সাথে মিলিত হলো, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (সহিহ মুসলিম: ৩৮৯০)

বুরায়দা আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি অভাবী ব্যক্তিকে ঋণের পরিশোধের ব্যাপারে ছাড় দেবে, সে ছাড় দেওয়া প্রতিদিনের বিনিময়ে সদকার সওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি ঋণ শোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সময় বাড়িয়ে দেবে সেও প্রতিদিনের বিনিময়ে সদকার সওয়াব পাবে। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৪১৮)

ঋণ দিয়ে সুদ নেওয়া গুরুতর পাপ

ঋণ দিয়ে সুদ নেওয়া জুলুম ও গুরুতর পাপ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে সুস্পষ্টভাবে সুদ হারাম ঘোষণা করেছেন। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। (সুরা বাকারা: ২৭৫) আরেক জায়গায় তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট রয়েছে তা বর্জন করো যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। আর যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ তাআলা ও তার রাসুলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। (সুরা বাকারা: ২৭৮, ২৭৯)

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুদের সাথে সম্পৃক্ত চার প্রকারের লোককে সমানভাবে দোষী সাব্যস্ত করেন। জাবির ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তারা বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লানত করেন সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট চার ব্যক্তিকে। তারা হচ্ছে, সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সুদের সাক্ষীদ্বয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, তারা সবাই সমপর্যায়ের দোষী। (সহিহ মুসলিম: ১৫৯৮)

Advertisement

সুতরাং মুসলমানদের জন্য সুদের লেনদেনে জড়িত থাকা হারাম। সুদের টাকা ভোগ করা অর্থাৎ নিজের খাওয়া-পরাসহ যে কোনো কাজে ব্যবহার করা হারাম। সুদের অর্থ কোনোভাবে হাতে এসে গেলে তা সুদাদাতাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তা সম্ভব না হলে ওই টাকা সওয়াবের নিয়ত না করে জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে দিতে হবে।

ওএফএফ/এএসএম