ক্যাম্পাস

বাকৃবিতে ছাত্রলীগের নির্যাতনের গল্প শোনালেন ছাত্ররা

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিগত সময়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের অমানবিক নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শন ও ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে আশরাফুল হক হলে জুলাই বিপ্লব শীতকালীন টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সাময়িকভাবে নির্মিত 'টর্চার কর্নারে' এ আয়োজন করা হয়।

Advertisement

এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের শরীরের জখমের চিত্র দেখানো হয়। এছাড়া শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

আশরাফুল হক হলের আবাসিক ছাত্র রিফাত বিন শায়েকুজ্জামান বলেন, '২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে ক্লাস করে হল থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ এক সিনিয়র আমাকে গেস্টরুমে নেওয়ার পর আমার সঙ্গে শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। একের পর এক লেভেলের ভাইরা ঢুকে, কেনো আমি হল ছেড়েছি তা জিজ্ঞেস করছে আর লাথি, থাপ্পড় মারে। প্রথম দফা মারের পর দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টায় আমাকে হলের তৃতীয় তলায় বিশেষ এক পলিটিক্যাল রুমে নিয়ে আরেক দফা মারধর করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে আমাকে হকিস্টিক দিয়ে পেটানো হয়, প্লাস দিয়ে আঙুল চেপে ধরা হয়। থাপ্পরের এক পর্যায়ে আমার কানের পর্দা ফেটে গিয়ে নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল।

তিনি আরও বলেন, ওই অবস্থাতেই আমার পরিবারকে কল করতে বলা হয় এবং সামনের নির্বাচনে কাকে ভোট দিবে জিজ্ঞেস করতে বলা হয়। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা অমানবিক নির্যাতনের পর সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে হলে রাখা যাবে না। অজ্ঞাত কারণে অ্যাম্বুলেন্স খবর দেওয়া হলেও পরে আর আনা হয় নি।

Advertisement

হলের আরেক আবাসিক ছাত্র মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, একইদিনে (২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর) আমাদের গেস্টরুমে ডাকা হলো ছাত্রদল করার অভিযোগে। ১১ তারিখ রক্ত দেওয়ায় আমি অসুস্থ ছিলাম তার উপর আমার অ্যাজমার সমস্যাও রয়েছে। আমাকে হলের ২৩৪ নম্বর রুমে নিয়ে একের পর এক থাপ্পড় মারা হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা আজহার আমাকে রড দিয়ে হাঁটুতে সজোরে আঘাত করলে আমি মাটিতে পড়ে যাই। তখন শ্বাসকষ্ট শুরু হলে আমাকে একসঙ্গে ওষুধের দুই ডোজ খাওয়ায়। সেই সঙ্গে থাপ্পড় ও রডের বাড়ি দিতে থাকে। খুব কান্না পাচ্ছিল। একজন অসুস্থ মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করে তারা। এরপর ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করলাম। একপর্যায়ে তীব্র অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসা শেষে বললো আমি ছাত্রদল করি এমন স্বীকারোক্তি দিতে হবে। পরবর্তীতে ছাত্রদল ট্যাগ দিয়ে আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জুলাই আন্দোলনকে ফুটিয়ে তুলতে ‘জুলাই বিপ্লব কর্নার’ও টুর্নামেন্ট উপলক্ষে ‘খেলাধুলা কর্নার’ স্থাপন করে আশরাফুল হক হলের শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্য বলেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন হলে হলে এমন অত্যাচার বা গেস্টরুমের কালচার ছিল না। আমরা স্বাধীনভাবে গড়ে উঠার ও পড়াশোনার পরিবেশ পেয়েছি। দুনিয়ায় ভালো কিছু করার সুযোগের অভাব নেই। শিক্ষার্থীদের মেধার চর্চা করতে হবে। বাংলাদেশের অনেক মেধাবী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন।

এসময় তিনি ডাইনিংয়ের মান উন্নত করার আশ্বাস দেন। এছাড়া যতটা সম্ভব কম খরচে উন্নত মানের খাবার দিয়ে শিক্ষার্থীদের ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান উপাচার্য।

Advertisement

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলম মিয়ার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবির, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল হক, মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম, , এগ্রোমেটিওরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ খায়রুল হাসান, সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

আসিফ ইকবাল/এফএ/এমএস