ক্যাম্পাস

হেলথ কেয়ার সেন্টারই নানান ‘রোগে’ আক্রান্ত

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হেলথ কেয়ার সেন্টারের নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিন। কয়েক রকমের ওষুধেই সীমাবদ্ধ এখানকার স্বাস্থ্যসেবা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

Advertisement

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের জন্য হেলথ কেয়ারে রয়েছেন মাত্র আটজন চিকিৎসক। এরমধ্যে নিয়মিত চিকিৎসক ছয়জন। বাকি দুজন খণ্ডকালীন। দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল অফিসারের পাঁচটি পদ শূন্য থাকায় পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

এছাড়া হেলথ কেয়ার সেন্টারটিতে নার্সের কোন পদ নেই। নেই ডেন্টাল ও বিশেষায়িত ইউনিটও। ডেন্টাল বিভাগে সর্বশেষ ১৪ বছর আগে একজন খণ্ডকালীন চিকিৎসক ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি চলে যাওয়ার পর নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ডেন্টাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এখন প্রায় অকেজো।

কিচিৎসাকেন্দ্রটিতে কর্মকর্তা আছেন ১০ জন ও কর্মচারী ১৬ জন। কর্মচারীদের মধ্যে ছয়জন নিয়মিত, সাতজন মাস্টার রোলে ও তিনজন অন্য শাখা থেকে ধার করা।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, হেলথ কেয়ারে সাত প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, চর্মরোগের মলম ও প্যারাসিটামল বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তবে সেটি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। দিনের বেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় বহিরাগত রোগী বেশি থাকে।

এছাড়া নিচ তলার টয়লেট অপরিচ্ছন্ন, কোনোটির দরজা ভাঙা। হেলথ কেয়ারের বাইরেই ময়লার ভাগাড়। বিভিন্ন আবাসিক হলের ময়লা ফেলা হয় সেখানে। দিনের বেলা কখনো সেন্টারটির বারান্দা মোটরসাইকেল রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যায়। লিফট বন্ধ থাকায় রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হেলথ কেয়ার সেন্টারের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা বেশ কয়েকবছর আগে থেকেই ছাত্রীদের আবাসনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী হাসান তপু বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে জরুরি চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু সেখানে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। পুরো ব্যবস্থাপনাই অগোছালো।’

অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা ও সংকট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী মাহিরুজ্জামান নিলয় বলেন, ‘প্রয়োজনের সময় অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। পেতে গেলে খুব জটিল একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হয়। ডাক্তারের স্বাক্ষর নেওেয়া থেকে শুরু করে দেখা যায় আরও অনেক নাটক। এর ওপর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর ভাঙা। সাইরেন ঠিক নেই, বাজেই না। অ্যাম্বুলেন্স যেন লক্করঝক্কর গাড়ি।’

Advertisement

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সাঈদুর রহমান (শওকত) বলেন, ‘আমাদের হেলথ কার্ড রেডি। ভিসি ও অ্যাডভাইজারের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছে দেবো। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তিগতভাবে কোন ওষুধ কেনে না, সরকারি কিছু ক্রয় নীতিমালা আছে। ওষুধের গুনগত মান ও মূল্য দেখেই এসব ক্রয় করা হয়।’

হেলথ কেয়ার সেন্টারে পরীক্ষা-নীরিক্ষার বিষয়ে তিনি জানান, ‘একটা সময় কেবল ৮-১০টা টেস্ট করা হতো, এখন করা হয় ২৮টা। এরমধ্যে ১৫ টা টেস্ট করা হয় নামমাত্র মূল্যে। ডেঙ্গু টেস্ট, ইউরিন টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি। বাকি টেস্টগুলোর দামও বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে অনেক কম। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ছাড়। এক্স-রের জন্য রয়েছে ডিজিটাল মেশিন রয়েছে।’

অ্যাম্বুলেন্স সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গাড়ি পরিবহন শাখার অন্তর্গত। দুইটা অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটা সবসময় থাকে, একটা রিজার্ভ থাকে। অ্যাম্বুলেন্স কে নিচ্ছে সবই রেকর্ড থাকে। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙ্গা কি না, জ্বালানি আছে কি না পরিবহন শাখা এসব দেখভাল করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, ‘ডাক্তার সংকট ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। সমস্যাটি সমাধানের ব্যাপারে এরইমধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ও কাজও শুরু হয়েছে। ডাক্তার নিয়োগের ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ। তাই ডাক্তার সংকটের সমস্যা দূর করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে ওষুধের বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

এফএ/জেআইএম