শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)–এর সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেছেন, ‘সবার মধ্যেই অনিশ্চয়তা রয়েছে। এটা ইমিডিয়েট সমাধানের দিকে যাবে সেটাও কেউ ফিল করছে না, কেউ তার সমাধান দেখতে পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার যত শর্ট হোক, যত উইক হোক, আমি মনে করি তাদের উচিত হবে দ্রুত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যাওয়া।’
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, দুই–চারজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা ব্যাংক লুট করেছে, তাদের দায় সবার ওপর চাপানো হলে সেটি অবিচার হবে। সরকার অর্থনীতি, ব্যবসা–বাণিজ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু অন্যান্য ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত বলেও তারা অভিযোগ করেন।
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিবের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র বহুল আলোচিত ওয়ান ইলেভেন বা এক-এগারো সরকারের প্রসঙ্গটি রাজনীতিতে নতুন করে সামনে এসেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, সেনা নিয়ন্ত্রিত ও সরকারও নানাবিধ সংস্কারে হাত দিয়েছিল। বিশেষ করে তাদের রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিকে তখন ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বলে অভিহিত করা হচ্ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এক-এগারোর সরকার যেসব কারণে অজনপ্রিয় হয়েছে বা রাজনৈতিক দলের বাইরেও সাধারণ মানুষ ওই সরকারের বিরুদ্ধে যেসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছিল, তার প্রধান কারণ ছিল তারা দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে ব্যর্থ হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম ঠিক রাখতে পারেনি। উপরন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের নামে বড় থেকে মাঝারি অনেক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের ফলে পুরো অর্থনীতিতে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার নামে তখন অনেক ব্যবসায়ীকে ধরে বিপুল টাকা কামানোর অভিযোগও আছে ওই সরকারের সঙ্গে যুক্ত অনেকের বিরুদ্ধে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও দায়িত্ব নেয়ার পরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং সুবিধাপ্রাপ্ত অভিযোগে অসংখ্য ব্যবসায়ীকে টার্গেট করেছে। কেউ কেউ জেলে আছেন। অনেকে পলাতক। উপরন্তু ব্যাংকিং খাতে নানাবিধ জটিলতার কারণে এলসি খুলতে সমস্যাসহ নানা কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। তারওপর তীব্র গাস সংকট। সব মিলিয়ে পুরো উৎপাদন ব্যবস্থায় একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে তারা মনে করেন, নির্বাচিত সরকার এলে এই সংকট কেটে যাবে? আসলে কি তা-ই?
Advertisement
সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবার আগে দেখা যাক দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি এখন কেমন।
গ্যাস সংকটে শিল্প খাতে বিপর্যয়চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস মিলছে না শিল্প-কারখানায়। বেশ কিছুদিন ধরে চলা এ সংকটে কমে গেছে শিল্প-কারখানার উৎপাদন। সিরামিক, ইস্পাত ও টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত কয়েক মাসে কয়েকশো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। রপ্তানি আয় কমেছে। বিনিয়োগ থমকে আছে। কর্মসংস্থান বাড়ছে না। শিল্প খাত না বাঁচলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি থেমে যাবে।
গ্যাস সংকটের কারণে এরইমধ্যে অনেক কারখানা গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ব্যয়বহুল তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এবং কয়লা ব্যবহার করছে। এতে তাদের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তবে পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ থাকায় হবিগঞ্জ ও ভোলা অঞ্চলে যেসব কারখানা রয়েছে, সেগুলো পুরো সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে।
পরিসংখ্যান বলছে, জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দিন দিন কমছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.২৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে কমে ৬.৬৬ শতাংশ হয়। গত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩.৯৮ শতাংশ। জ্বালানি সংকটের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২০০টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, আরো ৩০০টি কারখানা ঝুঁকিতে রয়েছে।
Advertisement
তবে শুধু শিল্প-কারখানা নয়, বরং আবাসিক খাতের গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছে। আগে যেসব এলাকায় সন্ধ্যার পরে গ্যাস আসতো, সেখানেও অনেকে এখন গ্যাস পাচ্ছেন না। ভোর থেকেই গ্যাস চলে যায়। তাতে বিকল্প উপায়ে রান্না করতে গিয়ে মানুষকে নির্ভর করতে হচ্ছে বৈদ্যুতিক চুলা, ওয়েন ও অন্যান্য ডিভাইসের ওপর—যা তাদের খরচ বাড়াচ্ছে। প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার টাকা গ্যাসের বিল দিয়েও জ্বালানির জন্য এই বাড়তি খরচ করায় সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ বাড়ছে।
বস্তুত গ্যাসের সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সেই সংকট উত্তরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল, তা নেয়া হয়নি। সমুদ্র এবং স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে যে পরিমাণ বিনিয়োগ ও গবেষণার প্রয়োজন ছিল, সরকার সেদিকে না গিয়ে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানিতে বেশি মন দিয়েছে। কেননা এখানে বিরাট কমিশন বাণিজ্য রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গত পাঁচ মাসে জ্বালানি সংকট সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। বরং আগের সরকারের ধারাবাহিকতায় তারাও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানার কোম্পানি ‘আর্জেন্ট‘ থেকে প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজি কেনার অনানুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে।
সংস্কার ও নির্বাচনের তর্কবিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বলা হতো ‘আগে উন্নয়ন তারপরে গণতন্ত্র’। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বলা হচ্ছে ‘আগে বিচার ও সংস্কার তারপরে নির্বাচন’। জুলাই অভ্যুত্থানে যাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিচার দেশবাসীও চায়। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিষয়েও কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় সংস্কার হচ্ছে তার জীবন যেন আগের চেয়ে ভালো হয়। তার চাকরি বা কাজের ক্ষেত্রটি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাজারে গিয়ে যেন তাকে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে না হয়। সে যেন গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি ঠিকমতো পায়। তাদের কাছে নির্বাচনের তারিখ কিংবা ভোটে জয়ী হয়ে কারা ক্ষমতায় আসবে—তার চেয়ে বড় প্রশ্ন সে রাস্তায় বের হলে নিরাপদ বোধ করছে কি না এবং তার সংসার চলছে কি না?
গত শনিবার একটি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বিএপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বলেন, ‘দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন ও সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার চালানো। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছেও সংসার টেকানো এখন অনেকক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে বসে তাদের সমস্যাগুলো অনুধাবন করা এবং অর্থনীতি ঠিক না করে কোনো সংস্কারই যে অর্থবহ হবে না, সেটি উপলব্ধি করা। ব্যবসায়ীরা মূলধন চান না, তারা চান ভরসা এবং সঠিক রাষ্ট্রীয় নীতিমালা। ফলে নির্বাচিত সরকার থাকুক আর অনির্বাচিত সরকার—দেশের অর্থনীতি যাতে কোনোভাবেই বিপদগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার।
তবে আশার কথা হলো, সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে যেসব সংস্কার কার্যক্রম চলছে, তার মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারকে বর্তমান বাস্তবতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাষায়, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ও সংস্কার। আইনকানুন দিয়ে সঠিক ব্যবহার করতে হবে। সিস্টেম আছে, সেটা আমরা ঠিক মত ব্যবহার করতে পারছি না।’
ভরসাই মূল কথাজাতির যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভরসা। মানুষকে আশাবাদি করে তোলা। কিন্তু গত পাঁচ মাসে দেশের মানুষকে অন্তর্বর্তী সরকারে সংস্কার তথা ইতিবাচক পরির্বতনের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদি করতে পেরেছে—তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা এবং অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের যে অবস্থা—তাতে মানুষ সংস্কারের ব্যাপারে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছে বলে মনে হয় না।
ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলেছে—সেটি সংস্কারে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে কোথাও কোথাও হিতে বিপরীত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের নানা মন্তব্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা এতটাই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে, ওইসব ব্যাংকে এখন আর কেউ টাকা রাখে না। বরং যার ১০ হাজার টাকা জমা ছিল, তিনিও সেই টাকা তুলে ফেলেছেন। ‘দুর্বল ব্যাংক’ তকমা দেয়ার কারণে ব্যাংকগুলো এখন প্রায় দেউলিয়া। অথচ জাতির একটি সংকটকালে সরকারের উচিত ছিল মানুষের মনে আস্থা ও ভরসা তৈরি করা। কিছু ব্যবসায়ীকে টার্গেট করার মধ্য দিয়ে পুরো ব্যবসা-বাণিজ্যে একটা ভয়ের আবহ তৈরি করা হয়েছে। ভয় নিয়ে ব্যবসা হয় না। বলা হয়: ‘ইকোনমি নাথিং বাট হোপ’। কিন্তু সরকার এই হোপ বা আশাবাদ তৈরি করতেই ব্যর্থ হয়েছে।
বস্তুত অর্থনীতির গতি ফেরানোর জন্য সবচেয়ে বড় বাধা অনিশ্চয়তা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক—এই দু্ই ধরনের অনিশ্চয়তাই এখন দৃশ্যমান। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা না কাটলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটবে না। সুতরাং অর্থনীতিতে স্থবিরতা থাকলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে। বেকারত্ব বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কারখানায় উৎপাদন বাড়বে না।
যে কারণে বলা হয়, ব্যবসার মূলধন হচ্ছে ভরসা। টাকা যতই থাকুক, একজন ব্যবসায়ী যদি এটা মনে না করেন যে তার বিনিয়োগটি নিরাপদ—তাহলে তিনি বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাষ্ট্রীয় ভরসা ছাড়া বিনিয়োগ আকর্ষণ করা কিংবা টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। কারণ বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিমুক্ত এবং পূর্বানুমানযোগ্য পরিবেশ খোঁজেন, যেখানে তারা তাদের মূলধন নিরাপদ রাখতে পারবেন এবং লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে বা নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে যে ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে, তাতে নতুন বিনিয়োগে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হওয়া তো দূরে থাক, আগের বিনিয়োগ সচল রাখতেও অনেকে ভয় পাচ্ছেন। নির্বাচন ইস্যুতে যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে ওঠে, তখন অর্থনীতি আরও বেশি চাপে পড়বে। কেননা যেকোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাত বা সরকার পরিবর্তনের অনিশ্চয়তা ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে।
স্থিতিশীল রাজনীতি থাকলে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারেন। কেননা রাজনৈতিক অস্থিরতায় মুদ্রার মান, শেয়ারবাজার এবং সরবরাহ চেইনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যে কারণে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা চান রাষ্ট্রীয় ভরসা—যেখানে তারা উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। জ্বালানি সরবরাহ থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি বাজারজাতকরণের প্রতিটি ধাপে সরকার যদি ব্যবসায়ীদের ভরসা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ মুখথুবড়ে পড়বে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগের জন্য এমন দেশ পছন্দ করেন যেখানে শুল্কনীতি, ট্যাক্স ব্যবস্থা এবং ব্যবসার অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। যেখানে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রিত এবং রাজনৈতিক অনিশ্চতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কম।
রাজনৈতিক বা সামাজিক অস্থিরতার কারণে যদি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগ নিরাপদ না থাকে, তবে কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাষ্ট্রীয় নীতি স্বচ্ছ হওয়ায় বহুজাতিক কোম্পানি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সেখানে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী। অন্যদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক দেশ বিনিয়োগ হারিয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে—বাংলাদেশে সেই তালিকার মধ্যে পড়ে গেলে ২০ কোটি মানুষের এই দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে—সেটি আরেকটি অভ্যুত্থানের পথ তৈরি করবে।
শঙ্কা থেকেই ব্যবসায়ীরা দ্রুত নির্বাচন চান?ব্যবসায়ীরা হয়তো মনে করছেন যে, দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হলে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরবে। নিরাপদে ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি হবে। অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। কিন্তু তারপরও এটা হলফ করে বলা কঠিন যে, নির্বাচিত সরকার এলেই বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ ভালো হয়ে যাবে। কেননা গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত নির্বাচিত তথা রাজনৈতিক সরকারই ক্ষমতায় ছিল। তখনও যে দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ খুব ভালো ছিল—সেটি বলার সুযোগ নেই। তবে এটা ঠিক যে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের স্বস্তি নিরাপত্তা ছিল—যা ৫ আগস্টের পরে হোঁচট খেয়েছে। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচন যে ডিসেম্বরের আগে হবে না—সেটি নানা ইঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে। তার মানে আরও প্রায় এক বছর। ফলে এই সময়টুকুতে ব্যবসা-বাণিজ্যের কী হবে সেটি আরেকটি প্রশ্ন। অতএব অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে বসে তাদের সমস্যাগুলো অনুধাবন করা এবং অর্থনীতি ঠিক না করে কোনো সংস্কারই যে অর্থবহ হবে না, সেটি উপলব্ধি করা। ব্যবসায়ীরা মূলধন চান না, তারা চান ভরসা এবং সঠিক রাষ্ট্রীয় নীতিমালা। ফলে নির্বাচিত সরকার থাকুক আর অনির্বাচিত সরকার—দেশের অর্থনীতি যাতে কোনোভাবেই বিপদগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার।
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক।
এইচআর/জেআইএম