কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই সম্প্রতি তাদের চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির ০৩ মডেল চালু করার ঘোষণা দিয়েছে, যা প্রযুক্তি জগতে উচ্ছ্বাস ও সংশয় উভয়ই তৈরি করেছে। ২০২২ সালে তাদের চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার পর এটি আরও বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Advertisement
তবে নতুন মডেলটি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহারিক খরচ ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।
সাময়িকীটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ০৩ মডেলটি পূর্ববর্তী মডেলগুলোর তুলনায় বেশি ও আরও কার্যকর ‘ভাবনাচিন্তা’ করতে সক্ষম, যা ব্যবহারকারীদের জিজ্ঞাসার উন্নত ফলাফল দিতে সক্ষম। কিন্তু এই ভাবনাচিন্তা বা ফলাফল প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা বাড়াতে গিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের সমাধান খরচও বেড়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, গুগলের সাবেক সিনিয়র স্টাফ ইঞ্জিনিয়ার ফ্রঁসোয়া চোলেটের ‘অ্যাবস্ট্রাকশন অ্যান্ড রিজনিং কর্পাস’ (এআরসি) পরীক্ষায় ০৩ মডেল রেকর্ড ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ স্কোর অর্জন করে। তবে এই ফলাফল অর্জনের জন্য প্রচুর কম্পিউটিং শক্তি প্রয়োজন হয়, যা মানব মস্তিষ্কের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যয়বহুল।
চোলেটের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রতিযোগীদের জন্য কম্পিউটিং খরচের সীমা ছিল ১০ হাজার ডলার বা ১২ লাখ টাকার কিছু বেশি। কিন্তু ওপেন এআইয়ের নতুন মডেল এর চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করে পরীক্ষাটিতে সেরা ফলাফল দিয়েছে। ০৩ মডেলে একটি প্রশ্ন সমাধানে জন্য প্রায় ৩ হাজার ডলার অর্থাৎ সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে, যা মানব মস্তিষ্কের জন্য খুব একটা কঠিন কাজ নয়। এমনকি, মানুষ কয়েক মিনিটেই এই সমাধান করে দিতে পারে।
Advertisement
সফটওয়্যার শিল্পের অর্থনীতিতে পরিবর্তন
চ্যাটবটের পূর্ববর্তী মডেলগুলোর তুলনায় ০৩ মডেল ব্যবহারের খরচ অনেক বেশি। যেখানে আগে সফটওয়্যার সেবাগুলো কম খরচে বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া যেতো, সেখানে নতুন এই মডেলগুলোর জন্য ব্যবহারকারীদের বেশি টাকা খরচ করতে হবে। যেমন চ্যাটজিপিটির ০১ মডেলের প্রো ভার্সনের জন্য ২০০ ডলার বা প্রায় ২৫ হাজার টাকা মাসিক সাবস্ক্রিপশন প্রয়োজন হয়। কিন্তু ০৩ মডেলটির জন্য এই খরচ ২ হাজার ডলার প্রায় সাড়ে দুই লাখ পর্যন্ত হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
প্রতিযোগিতা ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ
ওপেনএআইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান যেমন গুগল তাদের ‘জেমিনি ২.০ ফ্ল্যাশ’ মডেল চালু করেছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের চ্যাটবটের নতুন মডেল বাজারে আনছে। এমন পরিস্থিতিতে ওপেন-সোর্স মডেলগুলোর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে। এছাড়া, গ্রাহকরা একই চ্যাটবটের বিভিন্ন মডেল থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারবেন, যা এ ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।
Advertisement
অ্যাকসেঞ্চারের চিফ এআই অফিসার ল্যান গুয়ানের মতে, চ্যাটবটের উন্নত মডেলগুলো ব্যক্তিগত ও করপোরেট উভয় ক্ষেত্রেই উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে এসব মডেলের কার্যকারিতা ও ব্যবহারকারীদের জন্য মূল্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, কোনো সন্দেহ নেই যে, তথ্যপ্রযুক্তির অত্যাধুনিক এই যুগে চ্যাটজিপিটি ০৩ মডেলের প্রযুক্তিগত উন্নতি সংশ্লিষ্ট বাজারে ওপেনএআইয়ের নেতৃত্ব ও অবস্থানকে মজবুত করেছে। তবে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আনথ্রপিক ও এক্সএআয়য়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
ওপেনএআইয়ের বর্তমান মূ্ল্য ১৫৭ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, চ্যাটজিপিটির মতো পণ্যের সাফল্যের পর ওপেনএআই ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলারের টেক জায়ান্টে পরিণত হবে। তবে, উচ্চ খরচ ও প্রতিযোগীদের চাপের কারণে প্রতিষ্ঠানটির একচেটিয়া কর্তৃত্ব অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
এসএএইচ