বিনোদন

সাইফের সম্পদে চোখ ভারত সরকারের

সাইফ আলি খানের বাড়ির ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল তার পরিবার। বাড়ি থেকে কিছু খোয়া না গেলেও গুরুতর জখম হন অভিনেতা। এখন তিনি সুস্থ। ফিরে গেছেন বাড়িতে। তবে এরই মধ্যে সাইফের পৈত্রিক সম্পদ নিয়ে শুরু হয়ে গেছে জটিলতা। শোনা যাচ্ছে গুরগাঁওয়ে রাজকীয় সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যাবে তাদের। সাইফের সম্পদে চোখ ভারত সরকারের।

Advertisement

পতৌদি পরিবারের সন্তান সাইফ আলি খান। উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছেন অনেক সম্পদ। সেসবের অন্যতম গুরগাঁওয়ের ঐতিহাসিক রাজকীয় ভবন, যা বেশিরভাগ সময় সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। হরিয়ানার গুরগাঁও জেলায় অবস্থিত সাইফের পৈতৃক এই বাড়ি পরিচিত ইব্রাহিম কুঠি নামে। ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের এই সম্পদ ১০ একর বিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত। এই প্রাসাদে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে যান সাইফ।

কারিনা কাপুর খান, সাইফ আলি খান ও কারিশমা কাপুর

১৯০০ সালে ওই প্রাসাদ নির্মাণ শুরু হয়। ব্রিটিশ স্থপতি রবার্ট টর রাসেল এবং অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি কার্ল মাল্টিজ ভন হেন্টজ নকশা করেছিলেন। ১৯৩৫ সালে পতৌদির শেষ শাসক নবাব ইফতিখার আলি এটি বানিয়েছেন। এই প্রাসাদে ১৫০টি ঘর। এগুলোর মধ্যে ৭টি শোবার ঘর, ৭টি ড্রেসিংরুম, ৭টি বিলিয়ার্ড রুম, ১টি আউটডোর পুল, একটি সুবিশাল গার্ডেন এবং একটি বিশাল হলরুম রয়েছে। আমির খান অভিনীত ‘রং দে বাসান্তি’, রণবীর কাপুর অভিনীত ‘অ্যানিমেল’, শাহরুখ খান অভিনীত ‘বীর-জারা’র বেশ কিছু সিনেমা ও সিরিজের ‍শুটিং হয়েছে এই প্রাসাদে।

Advertisement

এই প্রাসাদসহ প্রায় ১৫ হাজার কোটি রুপির সম্পত্তি ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। গত ১৭ জানুয়ারি এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শত্রুসম্পত্তি আইন ১৯৬৮-এর আওতায় ভারত সরকার এসব সম্পত্তি অধিগ্রহণ করছে। এতে সাইফ আলী খানের পরিবারের এত দিনের মালিকানা হাতছাড়া হয়ে যাবে। এই সম্পত্তির বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছেন ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খান। তার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে আবিদা সুলতান ১৯৫০ সালে পাকিস্তানে চলে যান। মেঝো মেয়ে সাজিদা সুলতান ভারতে থেকে নবাব ইফতিখার আলী খান পতৌদিকে বিয়ে করেন এবং আইনি উত্তরাধিকারী হন। এভাবেই সাজিদার নাতি সাইফ আলী খান এই সম্পত্তির অংশীদার হন।

আবিদা সুলতান পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় ভারত সরকার এসব সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও ২০১৯ সালের এক রায়ে সাজিদা সুলতানকে আইনি উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, তবে সাম্প্রতিক রায় আবারও বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে। আদালতে বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল সংশোধিত শত্রুসম্পত্তি আইন, ২০১৭-এর অধীনে আইনি প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ তুলে ধরেন। তিনি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নির্দেশ দেন, ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করলে সময়সীমার বিষয়টি উপেক্ষা করে মামলাটি তার মূল দাবির ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত শত্রু সম্পত্তি আইন ১৯৬৮, পাকিস্তান ও চীনে স্থানান্তরিত ব্যক্তিদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রণয়ন করা হয়। ২০১৭ সালে এই আইনে সংশোধনী এনে বলা হয়, উত্তরাধিকাররাও এই শত্রুসম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। এই আইনের আওতায়, এসব সম্পত্তির মালিকানা ভারতের শত্রুসম্পত্তি হিসেবে রাষ্ট্রীয় রক্ষক সংস্থার হাতে ন্যস্ত থাকবে।

আদালতের রায়ের পর এসব সম্পত্তিতে বসবাস করা বাসিন্দারা চিন্তায় পড়েছেন। প্রায় দেড় লাখ বাসিন্দা এই সম্পত্তিগুলোতে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন উচ্ছেদের আশঙ্কা করছেন। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও আইনি লড়াইয়ের সুযোগ এখনো রয়েছে। এ নিয়ে ভোপালের কালেক্টর কৌশলেন্দ্র বিক্রম সিং জানিয়েছেন, ৭২ বছরের সম্পত্তির মালিকানার নথি যাচাই করা হবে। যেসব জমিতে মানুষ বসবাস করছেন, তাদের ভাড়াটিয়া হিসেবে গণ্য করা হতে পারে।

Advertisement

গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হতে পারে সেসবের মধ্যে রয়েছে সাইফ আলি খানের ছোটবেলার বাড়ি ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউস, নূর-উস-সাবাহ প্যালেস, দার-উস-সালাম, হাবিবি বাংলো, আহমেদাবাদ প্যালেস এবং কোহেফিজা সম্পত্তিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।