সময়ের পরিক্রমায় মহানগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা নগরী। মহানগরীতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। এসব মানুষের বিনোদনের জন্য সেভাবে গড়ে ওঠেনি বিনোদনকেন্দ্র। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন আটটি শিশুপার্ক রয়েছে। তবে এগুলোর বেশিরভাগই পরিণত হয়েছে ইভেন্ট আয়োজনের জায়গা হিসেবে। নগরবাসীর ঘুরে বেড়ানোর মতো তেমন জায়গা নেই। হাতেগোনা কয়েকটি পার্ক, রূপসা সেতু ও ভৈরব নদের তীর ছাড়া বিনোদনের অন্য কোনো জায়গা নেই মহানগরীতে। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কয়েকটি শিশুপার্ক থাকলেও তা নামেমাত্র। সেখানে নেই শিশুদের জন্য খেলাধুলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। পার্কগুলোর পরিবেশও তেমন ভালো নয়। সন্ধ্যার পর নিরাপত্তার অভাব দেখা দেয়। নানান আয়োজন এবং মেলার কারণে পার্কগুলো সবসময় শিশুদের জন্য পুরো উন্মুক্ত করা হয় না।
Advertisement
কেসিসি সূত্রে জানা যায়, মহানগরীতে কেসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন আটটি পার্ক রয়েছে। একটি শিশু পার্ক, লিনিয়ার পার্ক ও ছয়টি সাধারণ পার্ক। যার মধ্যে মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে শহীদ হাদিস পার্ক। ২০১৬ সালের দিকে বিপুল অংকের টাকা খরচ করে পার্কটি আধুনিকায়ন করা হয়। কিন্তু পার্কটি মাসের অর্ধেকের বেশি দিন ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। শিশুদের খেলার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।
আরও পড়ুন পরিবেশ রক্ষায় পর্যটক সীমিত, তবে নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবনশান্তিধাম মোড়ের জাতিসংঘ শিশু পার্কটির পরিবেশ আগের চেয়ে উন্নত হলেও সেখানে খেলনা আছে হাতেগোনা কয়েকটি। হাদিস পার্ক ও জাতিসংঘ পার্ক দুটি মূলত ব্যবহার হচ্ছে তরুণদের আড্ডা ও বয়স্কদের হাঁটার জায়গা হিসেবে।
সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেসিসি সোলার পার্ক। বলতে গেলে সেখানে সাধারণ মানুষের যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আড্ডা দেয় বখাটেরা। শিশুদের জন্য খেলাধুলার কিছুটা জায়গা থাকলেও উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের দখলে ময়ুরী আবাসিক এলাকা। শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা সেখানে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।
Advertisement
নগরবাসীরা জানান, ২০১৮ সালের দিকে নিরালা ও সোনাডাঙ্গা পার্কটি সংস্কার করা হয়। কিন্তু এ পার্ক দুটির অবস্থা বর্তমানে খুবই করুণ। শিশুদের উপযোগী পরিবেশ নেই। বখাটেদের কারণে নিরাপত্তার অভাবে সাধারণ মানুষ যেতে ভয় পান।
আরও পড়ুন কমানো হলো বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রবেশ ফিমহানগরীর একমাত্র আধুনিক শিশুপার্ক খালিশপুরের ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে ঘুরতে যাওয়াটাও ব্যয়বহুল। সর্বস্তরের মানুষ সেখানে যেতে পারেন না। ময়ূর নদের তীরে কেসিসির লিনিয়ার পার্কটিও ১৫ বছরের জন্য দেওয়া হয়েছে ইজারা। নদের দূষিত পানির দুর্গন্ধে পার্কে টেকা দায় হয়ে পড়ে। মহানগরীর ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটে ভৈরব নদের তীরে বেশ কিছু বেঞ্চ স্থাপন করেছে কেসিসি। কিন্তু তার পাশেই জাহাজে মালামাল বোঝাই-খালাসের কাজ করায় সেখানেও বিঘ্নিত হচ্ছে বিনোদনের পরিবেশ।
মহানগরীর বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকতা আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের শহরটিতে ভালো কোনো পার্ক নেই। শিশুপার্কগুলো অগোছালো। আমার ছেলের বয়স পাঁচ বছর। ছুটির দিনে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার মতো ভালো কোনো জায়গা না থাকায় মোটরসাইকেলে নিয়ে ঘুরিয়ে আনি। অনেক সময় পরিবারকে নিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় ঘুরতে যাই। খাওয়া-দাওয়া করে চলে আসি। সপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার মতো জায়গা নগরীতে নেই। চিত্ত বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ নগরবাসীর প্রয়োজন।’
সার্কিট হাউজের বড় মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে আসা কলেজছাত্র ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা টুটপাড়া থেকে খেলতে এসেছি। আমাদের এলাকায় বড় কোনো মাঠ নেই। ছোট ছোট কয়েকটি জায়গা থাকলেও তা অন্যদের জমি হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যভাবে খেলাধুলা করা যায় না। আশেপাশে বাড়িঘর। খেলাধুলায় অনেক সমস্যা হয় বিধায় ছুটির দিন বড় মাঠে আসি।’
Advertisement
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইকবাল মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘খুলনা বিভাগীয় শহর হলেও পরিকল্পনার অভাবে পিছিয়ে রয়েছে। আধুনিক পার্ক ও শরীরচর্চার জায়গা গড়ে ওঠেনি। একটি মাত্র শিশুপার্ক থাকলেও তা ব্যবহার হয় নানান কাজে। খুলনার জন্য আধুনিক পার্ক এবং খেলাধুলাসহ বিনোদনের জায়গার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।’
পরিকল্পনা করে খাসজমিতে নগরবাসীর জন্য আলাদাভাবে বিনোদনের জায়গা করা প্রয়োজন বলে মত দেন খুলনা নাগরিক আন্দোলনের সদস্যসচিব বাবুল হাওলাদার।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘খুলনায় প্রচুর খাসজমি আছে। এ জায়গাগুলো পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়। নগরবাসী দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক মানের একটি পার্ক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। আন্তরিকতা থাকলে দর্শনীয় কোনো কিছু করা যায়।’
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত পার্কগুলো আরও পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চলছে। খুলনা রিভারভিউ পার্কসহ কিছু পার্কের দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। ওই পার্কগুলো গড়ে উঠলে আশা করছি নগরবাসীর বিনোদনের জায়গা কিছুটা হলেও দূর হবে।
এসআর/জিকেএস