জাতীয়

শ্রমিকদের দাবি ‘অযৌক্তিক’, বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা চালু হচ্ছে না

শ্রমিকদের দাবিগুলো ‘অত্যন্ত অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ কারখানাগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. সাখাওয়াত হোসেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। ড. সাখাওয়াত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক।

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, বেশ কিছু দিন আমরা একটা শান্ত পরিবেশে ছিলাম। হঠাৎ গতকাল তারা (বেক্সিমকোর শ্রমিকরা) সমাবেশ করে বলেছে তাদের তিনটা দাবি। দাবিগুলো আমার মনে হয় কোনো সরকারের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। অত্যন্ত অযৌক্তিক এসব দাবি। তারপরও তারা বলেছে মানববন্ধন করবে রাস্তাঘাট বন্ধ করবে। তারা করেছেও, আমরা কিছু বলিনি। পুলিশ মোতায়েন ছিল, আর্মি মোতায়েন ছিল, তারাও তাদের বাধা দেয়নি।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করেছিলাম তাদের (শ্রমিকদের) নেতা যারা আছেন তারা অত্যন্ত রেসপনসিবল। মনে করেছি এবং এখনো মনে করি তারা রেসপনসিবল হিসেবে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরবে। তাতে কোনো আপত্তি নেই। 

Advertisement

আরও পড়ুন

পোশাক কারখানা ও গাড়িতে আগুন দিলেন বেক্সিমকোর শ্রমিকরা বেক্সিমকোর ১৬ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিশাল গণসমাবেশ

ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত আরও বলেন, গতকাল যা হয়েছে আপনারা জানেন। ১০০টির বেশি বাস জ্বালানো হয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে। এটি করার কথা ছিল না। এটি কখনো হয়নি। হঠাৎ করে এটি কেন হলো, তা আমরা খতিয়ে বের করবো।

‘আমি মনে করি এটি করে তারা সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। শ্রমিকদের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা টোটালি ফলস কাজ করেছেন। তারা দেশবাসীর জন্য বড় সংকট তৈরি করতে যাচ্ছিল’- বলেন শ্রম উপদেষ্টা।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, চরম ধৈর্য দেখানো হয়েছে। কিন্তু সেই ধৈর্যের মর্যাদা তারা (শ্রমিকরা) রাখেননি। গতকাল মিটিংয়ের সময় সচিব কথা বলেছেন, তখন তারা বলেছেন যে আমরা আপনাদের সঙ্গে কথা বলবো শান্তিপূর্ণভাবে। আজকে তারা এসে কথা বলছে। যিনি আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তিনিও এসেছিলেন। এখন পর্যন্ত তো কারও গায়ে হাত দেওয়া হয়নি। এখন তো দেখছি এটি আমাদের দুর্বলতা। অনেক পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশকে মেরেছে। এমনকি সেনাবাহিনীর গাড়ি পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা পুনরায় চালু করার চিন্তা-ভাবনা করছেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কী দিয়ে, হাউ?’

তাহলে কি বায়াররা আসতে পারবেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বায়াররা আসতে পারবে না, এই কারণে এই সম্পদের দায় কে নেবে? (বেক্সিমকো আর্থিক অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে) এই অবস্থায় কারখানা চালানো সম্ভব কী? আপনি চালাবেন?

২৩ একর জমি বন্ধক রেখে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বেক্সিমকোর কর্মীরা। এ নিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘ওই জায়গাও তো বন্ধক রয়েছে।’

 

আরও পড়ুন

বেক্সিমকোর বন্ধ ১৬ কারখানা চালুর দাবিতে বিক্ষোভ, যানবাহনে আগুন বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। 

গাজীপুরের সারাব এলাকার ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে’র বন্ধ ১৬টি কারখানা চালুর দাবিতে গতকাল বুধবার আবার বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। বিকেলে উত্তেজিত শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অসংখ্য যানবাহন ভাঙচুর করেন। একটি পণ্যবোঝাই ট্রাক ও তিনটি বাসে আগুন দেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে শ্রমিকদের হামলায় তিন সংবাদকর্মী আহত হন।

শ্রমিকদের অবরোধের ওই এলাকার সড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাবার বুলেট ও কাঁদানেগ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত পৌনে ৮টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

একই দিন গাজীপুরের তেঁতুইবাড়িতে ‘গ্রামীণ ফেব্রিকস’ নামের একটি কারখানার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করেন উত্তেজিত শ্রমিকরা। পরে কারখানাটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। 

বুধবারের এসব ঘটনার জেরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, গ্রামীণ ফেব্রিকসসহ আশপাশের এলাকায় যৌথবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এমএএস/এমকেআর