ভ্রমণ

নেপালের দরবার স্কয়ার যেন এক জীবন্ত জাদুঘর

রুমেল আহসান

Advertisement

হিমালয়ের জন্য বিখ্যাত নেপাল। দীর্ঘদিন ধরে নেপাল ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল। গত ১১ জানুয়ারি অবশেষে নেপালের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। ওইদিন দুপুর দেড়টায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে উপস্থিত হয়। হিমালয়ান এয়ারলাইন্সের বোডিং পাস নেই। তারপর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করি।

আমার পূর্বে কয়েকটি দেশ ভ্রমণ থাকায় ইমিগ্রেশনে আমার তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। তবে যারা ফ্রেশ পাসপোর্ট (পূর্বে কোনো দেশে ভ্রমণ করেননি) তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেকে ইমিগ্রেশন অফিসারের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন।

অবশেষে বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা থেকে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে বিমান ছেড়ে যায়। দীর্ঘ ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বিমান যাত্রা শেষে নেপালের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে বিমান অবতরণ করে।

Advertisement

নেপালে পাহাড়ের বুকের ওপর বিমানবন্দর। যাকে বলা হয় ‘দ্য মোস্ট ডিফিকাল্ট এয়ারপোর্ট অব ওয়ার্ল্ড’। রানওয়েতে কয়েকটি বিমান দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের বিমান চমৎকার একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ফ্লাইট অবতরণ করে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বাইরে এলাম।

বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রধান ফটকে আমাদের বুকিং করা হোটেলের নাম সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে এক ট্যাক্সি চালক দাঁড়ানো দেখে আমরা বুঝতে পারলাম তিনি আমাদের রিসিভ করতে এসেছেন। বিমানবন্দর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে কাঠমান্ডুতে আমাদের হোটেল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হোটেলে গিয়ে পৌঁছায়।

যানজটের কারণে একটু দেরি হয়ে যায় হোটেলে আসতে। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রাতের খাবার খেতে বের হয়ে গেলাম। বলে রাখা ভালো, নেপালে হালাল খাবার তেমন পাওয়া যায় না। বাংলাদেশি, ইন্ডিয়ান কয়েকটি খাবার রেস্তোরাঁ আছে। তবে তাদের খাবারের গুণগত মানটা ভালো না। তারপরও বাধ্য হয়ে আপনাকে খেতে হবে।

তবে হিন্দু বা ইংরেজি ভাষায় নেপালি রেস্তেরাঁগুলোতে গিয়ে বুঝিয়ে বললে তারা ভালো মানের খাবার পরিবেশন করে। হোটেল থেকে কিছুক্ষণ হেঁটে কক্সবাজার রেস্তোরাঁয় গিয়ে ৩০০ রূপি দিয়ে সাদা ভাত, চিকেন, আলুর ভর্তা ও ডাল দিয়ে খাবার খেলাম। এরপর রাতের কাঠমান্ডু দেখতে বের হলাম। কাঠমান্ডুর থামেল নিয়ে আগেই জাগো নিউজের ভ্রমণে লিখেছি।

Advertisement

আরও পড়ুন নীলা মার্কেটে একদিন সবুজে ঘেরা বাড়বকুণ্ড সমুদ্রসৈকত

দরবার স্কয়ার

ইতিহাসপ্রেমীরা ঘুরে দেখতে পারেন কাঠমান্ডুতে অবস্থিত দরবার স্কয়ার। আমরা সকাল সাড়ে ১১টায় দরবার স্কয়ার পৌঁছায়। যথারীতি ২৫০ রূপি দিয়ে টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করি। দরবার স্কয়ার ঘুরে মনে হলো, এ যেন এক জীবন্ত জাদুঘর।

তৎকালীন রাজাদের আমলে জনসাধারণের একত্রিত হওয়ার জন্য এই দরবার চত্বরকে ব্যবহার করা হতো। ঐতিহাসিক এই জায়গায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় বেড়েছে দোকান ও মার্কেট। হয়েছে আরও জমজমাট। দুপুর ২টায় আমরা গেলাম বৌদ্ধনাথ স্তুপ ঘুরতে।

বৌদ্ধনাথ স্তুপ

কাঠমান্ডু শহরের আনাচকানাচে ছড়িয়ে আছে দেখার মতো অনেক মন্দির। এর মধ্যে বৌধনাথ স্তুপ, পশুপতিনাথ মন্দির, স্বয়ম্ভূনাথ মন্দির ও নমো বৌদ্ধ মন্দির উল্লেখযোগ্য। বোধনাথ বা বৌদ্ধনাথ মঠ হল তিব্বতের বাইরে অবস্থিত, বৃহত্তম তিব্বতি বৌদ্ধ মঠগুলির মধ্যে একটি। এটি কাঠমান্ডু থেকে ৭কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

স্থানীয় ও বিদেশি তীর্থযাত্রী উভয়ই (বিশেষ করে তিব্বত থেকে) এই আধ্যাত্মিক স্থানটি পরিদর্শন করতে আসে। এই মঠটি ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্থান। আমরা ঘুরে ঘুরে মন্দিরের চারিপাশ দেখলাম। মন্দির থেকে পুরো কাঠমান্ডু শহর দেখা যায়।

এটি নেপালের ঐতিহাসিক গুরুত্বের শীর্ষস্থানগুলোর মধ্যে একটি, পঞ্চম শতাব্দীতে রাজা মন দেব দ্বারা নির্মিত। এই বিশাল মঠটি একটি অষ্টভুজাকার কাঠামোর উপরে নির্মিত, যা বুদ্ধের শিক্ষার প্রতীক। এটি বেশ কয়েকটি গোম্পা বা ছোট মন্দির দ্বারা বেষ্টিত।

যত তাড়াতাড়ি আপনি কমপ্লেক্সে প্রবেশ করবেন, ধূপের সুবাস আপনাকে আলিঙ্গন করবে ও আপনি প্রার্থনার চাকার চিৎকার শুনতে পাবেন, যখন সন্ন্যাসীরা স্তুপের ভিত্তির চারপাশে ঘুরে বেড়ান। কাঠমান্ডু শহর ঘুরে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে হোটেলে গিয়ে রেস্ট নেয়। এর মধ্যে ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে পড়ি। রাতের খাবার খেয়ে আবার আলো ঝলমলে থামেল ঘুরে বেড়ায়।

জেএমএস/এএসএম