‘যখনই ঘটনা তখনই তথ্য’ এই ভাবনা সামনে রেখে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগে একটি হটলাইন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, তথ্যসেবার এ নতুন হটলাইন নম্বরে সাংবাদিকরা বিশেষ করে ক্রাইম রিপোর্টাররা কোনো ঘটনার তাৎক্ষণিক তথ্য যেমন জানতে পারবেন, তেমনি জানাতেও পারবেন।
Advertisement
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) কার্যনির্বাহী কমিটির নবনির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান তিনি।
ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল বলেন, পুলিশ ও ক্র্যাব পরস্পর সহযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতে সব ধরনের সহযোগিতা বজায় থাকবে। পুলিশের তরফ থেকে যথাসময়ে তথ্য পাওয়া না গেলে ইনফরমেশন গ্যাপের সম্ভাবনা থাকে বলে উল্লেখ করেন ক্র্যাব সভাপতি।
ক্র্যাব সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ্ ডিএমপি এবং ক্র্যাব সদস্যদের মধ্যে পার্টনারশিপ ভিত্তিতে ওরিয়েন্টেশনসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন। যখনই ঘটনা তখনই তথ্য এই চিন্তা থেকে কো-অপারেট করার জন্য ডিএমপি কমিশনারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
Advertisement
বাদশাহ্ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পুলিশ ও সাংবাদিক পাশাপাশি থেকে কাজ করতে চাই। আমরা একে অন্যের পরিপূরক। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হই সে ব্যাপারে ডিএমপির সহযোগিতা কামনা করছি।
এ প্রসঙ্গে তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতে কি উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় সেজন্য ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলামকে উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম ক্র্যাব নেতাদের আহ্বানে বলেন, মিডিয়া থেকে রাত ২টা আড়াইটায় তথ্য নিশ্চিতে ফোন করা হয়। সবসময় সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য আমরা একটা হটলাইন চালু করতে পারি। যেখানে তিনজন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন যারা রোস্টার করে ডিউটি করবেন। তারা কোনো ক্রাইম বা ইনসিডেন্টের তথ্য সংগ্রহ করবেন সাংবাদিকরা ফোন করলে তা জানাবেন। আবার সাংবাদিকরাও জানাতে পারবেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সাংবাদিক পুলিশসহ সবাই মিলে যদি চাই তবে সুন্দর একটা সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সমাজের নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়াতে পারেন। মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের কোনো রাজনৈতিক বা দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে সাংবাদিকদের জোরালো সহযোগিতা প্রয়োজন। সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা ছাড়া একা পুলিশের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। পুলিশ ও সাংবাদিক একে অন্যের পরিপূরক বলে উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
তিনি মতবিনিময় সভায় ক্র্যাবের নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যে কোনো নিউজ প্রচারের আগে অবশ্যই তার সত্যতা যাচাই করে নেবেন। তাতে ভুল তথ্য প্রচারের সম্ভাবনা থাকে না। অবশ্যই সত্য প্রচার করবেন। সত্য প্রচারে ডিএমপির কোনো ধরনের আপত্তি নেই। মানুষের মধ্যে ‘সেন্স অব ইনসিকিউরিটি’ (নিরাপত্তাহীনতা বোধ) সৃষ্টি হয় এমন নিউজ করার আগে অবশ্যই তার সত্যতা ভালোভাবে যাচাই করবেন।
তিনি বলেন, ছোটখাটো সব দাবি নিয়ে লোকজন রাস্তায় নেমে রাজপথ দখল করে আন্দোলন করছে যাতে দ্রুত তাদের দাবিগুলো আদায় হয়। ঢাকা মহানগরীতে এমনিতেই যানজট একটি বড় সমস্যা। একটি রাস্তা বন্ধ হলে শহরের অন্য সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে রাজপথ বন্ধের চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কোনো সভ্য সমাজে রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করার প্রবণতা দেখা যায় না। সাংবাদিক সমাজকে এ ধরনের প্রবণতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
রাজধানীর অসহনীয় যানজটের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যে কোনো বিষয়ে রাস্তা অবরোধ করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে কষ্ট হচ্ছে, তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মিরপুর থানার ওসিকে বদলি করার পর সেখানে কিছু লোক এসে থানার গেটে বিক্ষোভ করে। থানার গেট অবরোধ করে। এভাবে চলতে থাকলে প্রশাসন চালানো কষ্ট হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্র্যাব সহ-সভাপতি উমর ফারুক আল হাদী, যুগ্ম সম্পাদক নিয়াজ আহমেদ লাবু, অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ মাহমুদ খান, দপ্তর সম্পাদক ওয়াসিম সিদ্দিকী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিহাল হাসনাইন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মানিক, প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক জসীম উদ্দীন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ্ মিজান, কার্যনির্বাহী সদস্য ইমরান রহমান, মোহাম্মদ জাকারিয়া।
ডিএমপির কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী; যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম; উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ও উপ-পুলিশ কমিশনার (সদরদপ্তর ও প্রশাসন) শাহ মো. আব্দুর রউফ; মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. জাহাঙ্গীর কবির।
টিটি/এমআইএইচএস/এমএস