• সরকার পতনের পরই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জেল থেকে বেরিয়ে গেছে• দীর্ঘ কারাভোগেও সংশোধন হয়নি তারা• জেল থেকে বেরিয়েই জড়াচ্ছে অপরাধ-অপকর্মে• ছাড় নয়, নাগালে পেলেই তাদের ধরবে পুলিশ
Advertisement
দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। কারাগার থেকে বেরিয়েই তারা নানা ধরনের অপরাধ ও অপকর্মসহ আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে বলে তথ্য পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে কারাগার থেকে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপরই আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত ছয়জন জামিনে মুক্তি পান। তাদের বেশিরভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন।
Advertisement
সরকার পতনের ১০ দিন পর ১৫ আগস্ট দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান আওয়ামী লীগ সরকারের পুরস্কার ঘোষিত ২৩ সন্ত্রাসীর অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। পরদিন ১৬ আগস্ট রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার-৪ থেকে জামিনে মুক্তি পান শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার অন্যতম ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল।
আরও পড়ুন
নেপথ্যে জামিনে থাকা দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর আধিপত্য-চাঁদাবাজি শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনসহ ৩ জনকে গুলি: নেতৃত্বে সন্ত্রাসী ইমন?কারামুক্তির পর এ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক কার্যক্রম ও তাদের ওপর পুলিশের আদৌ কোনো নজরদারি আছে কি না- জানতে চাইলে নিজে পুলিশে কর্মরত থাকাকালে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা স্মরণ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সতর্ক রয়েছে ডিএমপি। আদালত থেকে জামিন নিয়ে যারা কারামুক্তি পেয়েছে তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
Advertisement
‘দীর্ঘ সময় জেলে থাকার পরও তাদের মধ্যে কোনো সংশোধন নেই, এটি খুবই দুঃখজনক। বয়স হলেও জেল থেকে বের হয়ে সেই আগের মতো চাঁদাবাজি, দলাদলি শুরু করেছে তারা।’
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাচ্ছি। জেল থেকে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের অপকর্মে জড়াচ্ছে। আমরা তাদের জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করবো।
তিনি বলেন, কদিন আগেও দেখলাম ‘বেনজীরের ক্যাশিয়ার’ খ্যাত জসিম জামিন পেয়েছেন। সুব্রত, পিচ্চি হেলাল ও ইমনসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত খবর বেরুচ্ছে। আধিপত্য নিয়ে তারা বিরোধে জড়াচ্ছে। তাদের নানা অপকর্মে জড়ানোর তথ্যও পাচ্ছি। রেকর্ড হচ্ছে, মামলা হচ্ছে। তাদের পেলেই আমরা ধরে ফেলবো। কাউকে ছাড় দেবো না। আপাতত আমরা তাদের জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করবো।
খুনের ঘটনাকে যদি ছিনতাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয় তাহলে তা মানুষের মধ্যে প্যানিক সৃষ্টি হবে- এ কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। আমরা চাই বস্তুনিষ্ঠ সত্য সংবাদটা প্রকাশ পাক। খুনের সব ঘটনা কিন্তু ছিনতাইকারীদের হাতে হচ্ছে না। অনেক কারণ আছে খুনের। তার মধ্যে একটি কারণ হয়তো ছিনতাই।
আরও পড়ুন
মাস্ক-হেলমেট পরে কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের কোপালো কারা? পিচ্চি হেলালের হাত থেকে বাঁচতে চায় ভুক্তভোগী পরিবার পিচ্চি হেলাল ও ইমনকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে: ডিবিপ্রধানগুন্ডাপান্ডা বা অপরাধীরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলে নিহত হওয়ার ঘটনাও কাম্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, যারা নিজেরা মারামারি করছে সেখানে প্রোঅ্যাকটিভ পুলিশিং দরকার। আমরা এ ধরনের ঘটনাকে উৎসাহিত করতে পারি না। এর কারণে সমাজে নিরাপত্তাহীনতাবোধ তৈরি হতে পারে।
ডিএমপি কমিশনার ক্রাইম রিপোর্টারদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেন, আমি আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই। আমার কলিগরা কী ধরনের অসুবিধা তৈরি করছে সেটি জানান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল, সহ-সভাপতি উমর ফারুক আল হাদী, সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ্, যুগ্ম সম্পাদক নিয়াজ আহমেদ লাবু, অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ মাহমুদ খান, দপ্তর সম্পাদক ওয়াসিম সিদ্দিকী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিহাল হাসনাইন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মানিক, প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক জসীম উদ্দীন, আইন ও কল্যাণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, আন্তর্জাতিক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ মিজান, নির্বাহী সদস্য জিয়া খান, ইমরান রহমান ও মোহাম্মদ জাকারিয়া।
টিটি/এমকেআর/এমএস