গাইবান্ধায় দিনের বেলায় গরম অনুভব হলেও দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই শীত বেড়ে যায়। ফলে ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুদের।
Advertisement
গত এক সপ্তাহে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ৪০০ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ঠান্ডাজনিত কারণে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ফলে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে শয্যা সংকট ছাড়াও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স সংকট রয়েছে। সেই সঙ্গে হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে চিকিৎসা নিতে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী-স্বজনদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডের মতো ডায়রিয়া ওয়ার্ডেরও বেহাল দশা। ময়লা ও দুর্গন্ধে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। অসুস্থ শিশুকে এক হাতে ধরে অন্য হাতে নাক চেপে ধরে আছেন শিশুর স্বজনরা। দুর্গন্ধ এড়াতে নার্সরাও মাস্ক দিয়ে নাক ঢেকে রেখেছেন। শয্যা সংকটের কারণে অনেক রোগীকে মেঝে ও বারান্দায় রাখা হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মেয়েকে ভর্তি করেন তানিয়া বেগম। তিনি বলেন, আমার মেয়ের বয়স দুই বছর। এক সপ্তাহ হলো ডায়রিয়া সমস্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখানে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। নার্স কম। দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। মেয়ে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত, চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে থাকতে হবে।
Advertisement
সদর উপজেলা তুলশীঘাট গ্রামের রাশেদা বেগম বলেন, তার পাঁচ বছরের মেয়ে রানির হঠাৎ পেটব্যথা ও বমি শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি করি।
বোয়ালী গ্রামের মো. রাজ্জাক বলেন, আমার ছেলে কিছুদিন আগে ডায়রিয়ায় ভুগছিল। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও আবার আক্রান্ত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি থেকে ১১ মাস বয়সী ছেলে কাইয়ুমকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন মা যুতি বেগম। দুদিন ধরে ছেলের পাতলা পায়খানা ও শ্বাসকষ্ট। তিনি বলেন, হাসপাতালে শিশু ডাক্তার না থাকায় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।
গাইবান্ধা পৌরসভার ধানগড়ার ববিতা বেগম নামে আরেক শিশুর মা বলেন, পরশু সকালে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। হাসপাতাল থেকে খাওয়ার স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ দিলেও স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। একটা বাথরুম, তাও আবার ভাঙা। ময়লা আর গন্ধের কারণে বাথরুমেও যাওয়া যায় না।
Advertisement
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্স উম্মে হাবিবা শেলী বলেন, হাসপাতালে ২০টি মাত্র শয্যা। আর প্রতিদিন ৫০-৭০ জন রোগী ভর্তি হন। তিনজন রোগীর জন্য একজন নার্স থাকার কথা থাকলেও যত রোগী ভর্তি হোক না কেন, একজন নার্সকেই সব দায়িত্ব পালন করতে হয়।
দুর্গন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোটা হাসপাতালে দু-তিনজন ক্লিনার আছে। তারা ঠিকমতো কাজ করতে চান না। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত নার্স নেই।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফুর রহমান বলেন, হাসপাতালে শয্যা সংকটসহ নানা সংকট রয়েছে। চিকিৎসক এবং নার্সের চাহিদা চেয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখনো সেসব চাহিদা পূরণ হয়নি। স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধের সাপ্লাই আছে। তবে স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা রংপুর অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক সময় কম থাকে।
হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে তিনি বলেন, পৌরসভা থেকে দায়িত্বরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজে আসছে না। তাই ময়লা ও দুর্গন্ধের বিষয়টি সমাধান করা যাচ্ছে না।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. আবুল আজাদ মন্ডল বলেন, শীতজনিত কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি।
শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, এসময় শিশুদের প্রতি বেশি যত্ন নিতে হবে। বাসি খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মোটা কাপড় পরিধান করাতে হবে। এই ঠান্ডায় মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ এইচ শামীম/জেডএইচ/জিকেএস