দেশজুড়ে

টমেটো চাষিদের ‘শেষ বিকেলের’ কান্না

বিপুল পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হয় রাজশাহীর পদ্মার চরে। সে হিসেবে লাভবান হওয়ার কথা চাষিদের। কিন্তু হচ্ছেটা বিপরীত। পরিবহন খরচ পড়ে যাচ্ছে বেশি। ফলে আশানুরূপ লাভ করতে পারছেন না চাষিরা।

Advertisement

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় চর রয়েছে ১৪টি। এরমধ্যে পবার চর মাজারদিয়াড় ও চর খিদিরপুর, গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ও চর দিয়াড় মানিকচর এবং চারঘাটের টাংগন উল্লেখযোগ্য। প্রায় ৫ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমির আয়তন নিয়ে সবচেয়ে বড় চর পবার চর মাজারদিয়াড় ও চর খিদিরপুর। এসব চরে চাষ হয় টমেটো। চলতি বছর জেলার ৮০০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টমেটো পরিবহনে ছোট পথে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছেন পদ্মাপাড়ের চাষিরা। শহর থেকে চরাঞ্চলের দূরুত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার হলেও এক বস্তা টমেটো পরিবহনে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৫০০ টাকা। ফলে প্রত্যাশিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।

আরও পড়ুন গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষে ‘নীরব বিপ্লব’

চর খিদিরপুর এলাকার কৃষক মুখলেস জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার দেড় বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। লাভ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এখনো ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হবে। তবে রাস্তার অভাবে লাভের পরিমাণ কমছে।’

Advertisement

চর আষাড়িদহ এলাকার কৃষক নজির উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তার অভাবে দুর্ভোগ হচ্ছে। জমি থেকে টমেটো তুলে প্রথমে ট্রলিযোগে ঘাটে, পরে নৌকায় করে শহরের ঘাটে নিতে হয়। সেখান থেকে ভ্যানে করে বাজারে নিতে গড়ে প্রতিমণে ১৫০-২০০ টাকা খরচ পড়ে যাচ্ছে। অথচ টমেটা বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ২০০-৩০০ টাকা। পরিবহন খরচের জন্য লাভটা কম হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে আমাদের লাভ হওয়ার কথা গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ। কিন্তু পথের খরচের কারণে হচ্ছে এক থেকে দেড় লাখ। একটি বড় অংশই চলে যাচ্ছে পরিবহন খরচে।’

চর মাঝারদিয়াড়ের চাষি আমদাজ আলী বলেন, ‘আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। রাস্তায় অনেক খরচ হয়। সেজন্য লাভটা কম হয়। তবে ফসল ফলিয়ে সংসার চলে যায়।’

আরও পড়ুন আগাম মুকুলে স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর আম চাষিরা

ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে মোটরসাইকেলে করে নদীর ঘাটে নিয়ে যান মিজান। পরে সেখান থেকে নৌকায় করে শহরের ঘাটে যান। এরপর সেখান থেকে শহরের আড়তে তোলেন।

Advertisement

মো. মিজান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এভাবে হাটে ফসল নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হয় এবং খরচ পড়ে যায় বেশি। আমাদের জন্য যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করলে আরও লাভবান হতে পারতাম।’

রাজশাহীর আষাড়িদল ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যন আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সমস্যা নিরসনে আমাদের পক্ষ থেকে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। তারপরও এটির সমাধান হয়নি। ঘাইটালেরা ইচ্ছামতো পয়সা নিচ্ছে। নিজেরা জেলা পরিষদকে দিয়ে পণ্য পরিবহনের তালিকা করছে। আমরা শুধু বলেই গেলাম কিন্তু কিছু পেলাম না। মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়লে যা হয়!’

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, ‘সব ঘাটে একই অবস্থা কি-না আগে জানতে হবে। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এসআর/জিকেএস