আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক উষ্ণ, ৩ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের আশা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করেছে। দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

Advertisement

পাকিস্তান সরকার ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো আশা করছে এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে এক বছরের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য বেড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার হতে পারে, যা বর্তমান সময়ের চেয়ে চারগুণ বেশি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা যখনই ক্ষমতায় ছিল তখনই ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। তবে সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি খারাপ হয় যখন শেখ হাসিনা তৃতীয়বার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন। তবে তার পতনের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

গত বছর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে দুবার সাক্ষাৎ করেছেন। ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল এস এম কামরুল হাসান ইসলামাবাদ সফর করেন ও সেখানে তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন।

Advertisement

গত সপ্তাহে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রিজের (এফপিসিসিআই) একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। এটা গত এক দশকের মধ্যে পাকিস্তানের কোনো উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক দলের সফর। এই প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করে।

আরও পড়ুন>

দায়িত্ব নিয়েই কিম জং উনের খোঁজ নিলেন ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে যা বললেন ট্রাম্প

সফরকালে পাকিস্তান-বাংলাদেশ যৌথ ব্যবসায়িক কাউন্সিল গঠনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিরও আহ্বান জানায়।

এফপিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাকিব ফাইয়াজ মাগুন বলেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী আমাদের বলেছেন যে ঢাকা আমদানির জন্য পাকিস্তানি ব্যবসাকে পছন্দ করে।

Advertisement

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কেবল বস্ত্র ও প্লাস্টিক শিল্প রয়েছে। তাদের জনগণের জন্য বাকি অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়। এতে আমাদের জন্য একটি দরজা উন্মক্ত হয়েছে, যা হাসিনার সময় বন্ধ ছিল।

মাগুন বলেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য ৫০ হাজার টন চাল ও ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির জন্য অর্ডার দিয়েছে। বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে খেজুর আমদানিরও কথা ভাবছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বছরে মাত্র ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে।

নিক্কেই এশিয়াকে মাগুন বলেন, বাণিজ্য বিধিনিষেধ দূর হলে এক বছরের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। আমরা চাল, চিনি, তেল, তুলার সুতা ও নারীদের পোশাকের মতো অনেক পণ্যে নজার দিতে পারি।

দুই দেশের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা হলো চট্টগ্রাম ও করাচির মধ্যে ম্যারিটাইম রুট, যা গত ৫২ বছর ধরে ব্যবহার হয়নি। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পাশাপাশি যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলেও সুবিধা পাবে।

তাছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এখন সরাসরি ফ্লাইট চালুর ব্যাপারেও যাচাই-বাছাই করছে, যা ২০১৮ সালের পর থেকে বন্ধ।

১২ জানুয়ারি পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার পাকিস্তানিদের ভিসা কার্যক্রম সহজ করার কথা জানান।

মাগুন জানিয়েছেন, আমরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের ভিসা পেয়েছি। এটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলেও মনে করেন তিনি।

২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দায়িত্বপালন করা পাকিস্তানের হাইকমিশনার রফিউদ্দিন সিদ্দিক বলেন, হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশের ভিসা পাওয়া পাকিস্তানিদের জন্য প্রায় অসম্ভব ছিল।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।

বিশেষজ্ঞারা জানিয়েছেন, হাসিনার আমলে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুই মূলত ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতিতে ভূমিকা রেখেছে।

সূত্র: নিক্কেই এশিয়া

এমএসএম