শিক্ষা

নিয়ম না মেনে আ’লীগ নেতার স্ত্রীকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নিয়োগ!

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। তাকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। অথচ কেকা রায়ের পদত্যাগের পর অধ্যক্ষ পদে বসেন আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী মাজেদা বেগম। এমনকি তার নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও মানা হয়নি নিয়ম।

Advertisement

শিক্ষক-অভিভাবকরা বলছেন, তৎকালীন অধ্যক্ষকে আওয়ামীপন্থি ট্যাগ দিয়ে পদত্যাগ করিয়ে চেয়ার দখলে নেন আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী মাজেদা। এতে ভিকারুননিসার পরিচালনায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং ভর্তি ও বদলি বাণিজ্য বেড়েছে। অধ্যক্ষ মাজেদার ছত্রছায়ায় আগের মতোই আওয়ামীপন্থিরা একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন।

যেভাবে অধ্যক্ষ পদে আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী মাজেদা

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের স্বামী জামাল উদ্দিন মো. আকবর বাবলা ছিলেন আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা। তিনি রাজধানীর কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাধরণ সম্পাদক ছিলেন। ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ তিনি মারা যান।

Advertisement

জামাল উদ্দিন মো. আকবর বাবলার মৃত্যুতে ভিকারুননিসা পরিবারের পক্ষ থেকে শোকবার্তাও দেওয়া হয়। তৎকালীন অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীর সই করা সেই বিজ্ঞপ্তিতে ‘১৭ মার্চ ভিকারুননিসা স্কুলের সব শাখায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত’ আয়োজন করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাছাড়া স্কুলের মুজিববর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য ছিলেন এ মাজেদা বেগম।

অথচ ৫ আগস্টের পর এক সময়ের দাপুটে আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী মাজেদা বেগম ভোল পাল্টে নিজেকে ‘বঞ্চিত’ ও ‘বিএনপিপন্থি’ দাবি করে অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সে সময় তার তদবিরের ফাঁদে পড়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে তড়িঘড়ি তাকে নিয়োগের নির্দেশও দেয়।

ভিকারুননিসায় কর্মরত একজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাজেদা বেগম চাকরিজীবনে সবসময় আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়েছেন। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছর। তার স্বামী হাজী সেলিমের ঘণিষ্ঠ ছিলেন। এটা প্রচার করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে গেছেন। ৫ আগস্টের পরও তাকে অধ্যক্ষ পদে বসানো হলো। বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।’

অধ্যক্ষ নিয়োগে মানা হয়নি বিধি

Advertisement

৫ আগস্টের পর তৎকালীন অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মুখে কেকা রায় ১১ আগস্ট পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর তদবির করে অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নেন মাজেদা বেগম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১২ আগস্ট দুপুরে তাকে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। অথচ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির জরুরি সভায় ১৩ আগস্ট তৎকালীন অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ, পদত্যাগপত্র গ্রহণের আগেই অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা বিধিবহির্ভূত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, শিক্ষকদের অভিযোগ মাজেদা বেগমকে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার নিয়মও মানা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে তার চেয়ে সিনিয়র দুজন শিক্ষক থাকলেও তাদের ডিঙিয়ে মাজেদা বেগমকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দ্রুত অধ্যক্ষ নিয়োগে শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়াদের চাপ ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছিলেন। তারপর পদটা শূন্য হয়ে পড়েছিল। পদত্যাগপত্র হাতে নিয়ে বোর্ডে শিক্ষার্থী, সমন্বয়করা হাজির। তখন তো কিছু করার ছিল না।’

জ্যেষ্ঠতার নিয়ম না মানা প্রসঙ্গে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমার জানামতে মাজেদা বেগমের চেয়েও একজন জ্যেষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে তিনি অধ্যক্ষ পদে বসতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন বলে জেনেছি।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইসমাইল জাবিউল্লাহও ফোন কল রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের জাগো নিউজকে বলেন, ‘জোর করে পদত্যাগ এবং তখনকার নিয়োগগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সেখানে কোনো ব্যত্যয় ধরা পড়লে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা ভিকারুননিসা হোক বা অন্য কোথাও হোক।’

এএএইচ/এসএনআর