ভ্রমণ

বাহারি ফুল সুবাস ছড়াচ্ছে চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে

আরিফুল ইসলাম তামিম

Advertisement

বিশাল আকৃতির ময়ূর, আর তার শরীর জুড়ে আছে রং-বেরঙের ফুল। একরাশ ফুলের সৌরভ নিয়ে ময়ূরটি তার সৌন্দর্যের সবটা জুড়ে দিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে। জীবন্ত কোনো ময়ূর নয়, তারপরও ময়ূরের আদলে নির্মিত এমন সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। কাছে গিয়ে কেউ কেউ নিজেকে ফ্রেমবন্দিও করে রাখছেন।

তার পাশেই প্রজাপতির ডানায় বসেছে বাহারী রঙিন ফুল। শুধু তাই নয়, যেদিকে চোখ পড়বে শুধুই ফুল। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। এমন নান্দনিক সব চিত্র ফুটে উঠেছে চট্টগ্রামের ডিসি পার্কের মাসব্যাপী ফুল উৎসবে। এছাড়া নানা আকর্ষণীয় আয়োজনে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে এখন ডিসি পার্ক।

প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে এই ব্যতিক্রমী উৎসব। দেশি-বিদেশি ১৩৬ প্রজাতির বাহারি সব ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের ফুল উৎসব। পার্কে ঢুকতেই হাতের বাম পাশে দেখা মিলবে নান্দনিক ওয়াকওয়ে, যার দু-পাশেই বাহারি রঙিন ফুল, আছে নার্সারিও।

Advertisement

প্রবেশ গেট থেকে একটু সামনে হাতের ডানে নির্মিত ফটো বুথ যেন সবার পছন্দের। পার্কের মধ্যেই আছে বিশাল কৃত্রিম দীঘি। দীঘির পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সাম্পান, প্যাডেলচালিত নৌকা। আছে কায়াকিং সুবিধাও। দীঘির একপাশে বসানো হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য নান্দনিক বসার স্থান।

আর এই পথেই সারি সারি খেজুর গাছ ও রস আহরণের দৃশ্য দেখার সুযোগ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। প্রবেশ পথের সড়কে ফুলের টব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তোরণ। যা এখানকার সৌন্দর্যকে আরও দ্বিগুণ করে তুলেছে। এছাড়া পার্কের একপাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মঞ্চ। যেখানে প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে নাচ-গানসহ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন যা আগত দর্শনার্থীদের আনন্দিত করছে।

পার্কের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে ফুড স্টল ছাড়াও আছে শিশুদের বিনোদনের জন্য কিডস জোনের পাশাপাশি আছে গ্রামীণ মেলা। যার ১০-১২ টি স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাক। এছাড়া দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ জোগাচ্ছে উত্তর পাশের ভাসমান ফুলের বাগান।

আরও পড়ুন ডে লং ট্যুরে ঘুরে আসুন ঢাকার আশপাশের সরিষা ক্ষেতে  অদ্ভুত এই গ্রামের মানুষ কথা বলে না শীতে 

শুধু তাই নয়, এবারের ফুল উৎসবে নির্মাণ করা হয়েছে জুলাই-আগষ্ট অভ্যুত্থান কর্ণার। যেখানে শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ’সহ অন্যান্য শহীদদের ছবি স্থান পেয়েছে৷দিন ও রাতে দুই রকম সৌন্দর্য দেখা মিলছে এই উৎসবে। সন্ধ্যা নামলেই পুরো পার্কজুড়ে আলোকসজ্জায় মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

Advertisement

এক সময় মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপের অন্যতম আখড়া ছিল স্থানটি। তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২৩ সালে ১৯৪ একর সরকারি খাস জমি অবৈধ দখল মুক্ত করে দুবাইয়ের মিরাকেল গার্ডেনের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে ডিসি পার্ক।

যেখানে তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয়েছে ফুল উৎসব। প্রাকৃতিক পরিবেশের ১৯৪ একর জায়গাজুড়ে এখন শুধুই ফুলের রাজত্ব। আর এই ডিসি পার্কের রং-বেরঙের ফুলের সাথে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করতে ব্যস্ত এখানে আসা অধিকাংশ দর্শনার্থী।

৪ জানুয়ারি ‘ফুলের মতন আপনি ফোটাও গান’ স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া মাসব্যাপী এই উৎসব শেষ হবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে ডিসি পার্ক। শুধু ফুল নয়, মাসব্যাপী এই উৎসবে ফুল ছাড়া ও প্রতিদিন থাকছে নানা ব্যতিক্রমী অনুষঙ্গ।

মাল্টিকালচারাল ফেস্টিভ্যাল, ঘুড়ি উৎসব, মুভি শো, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ, পিঠা উৎসব, লেজার লাইট শো সহ নানা ব্যতিক্রমী আয়োজনে ভরপুর এবারের ফুল উৎসব।

ভবিষ্যতে এই জায়গায় সাইক্লিং ট্র্যাক, ওয়াকওয়ে, ডেস্টিনেশন ওয়েডিং, ফেরীস হুইল, সমুদ্র পর্যন্ত উডেন ওয়াকওয়ে, কনভেনশন সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

কীভাবে পৌঁছাবেন এই ফুলের স্বর্গে?

প্রথমে যেতে হবে চট্টগ্রাম শহরের অলংকার মোড়ে। সেখান থেকে সীতাকুণ্ডগামী লোকাল বাস চেপে মাত্র ১০ টাকা ভাড়ায় বাংলাবাজার মুখে নামবেন। তারপর ২০-৩০ টাকা ভাড়ায় রিকশাযোগে কিংবা ৫-১০ মিনিট হেঁটেই যাওয়া যায় ডিসি পার্কে।

৫০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিয়ে টিকেট নিয়ে প্রবেশ করতে হবে এই পার্কে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও ডিসি পার্ক এর ওয়েবসাইট থেকে টিকেট নিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে দর্শনার্থীরা।

শিক্ষার্থী: চতুর্থ বর্ষ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।

জেএমএস/জিকেএস