দেশজুড়ে

মামলার ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি, কল রেকর্ড ফাঁস

গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে অসহায় নারীর কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। ওই নেতার নাম নিয়ামুল হোসেন মিলন। তিনি উপজেলা বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক।

Advertisement

কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের (এসপি) নাম ভাঙিয়ে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার একটি কল রেকর্ড জাগো নিউজের হাতে এসেছে।

পাঁচ মিনিটের ওই কলরেকর্ডে চাঁদা দাবি করা ওই নেতাকে বলতে শোনা গেছে, সকাল ১০টার মধ্যে আড়াই লাখ টাকা না দিলে মামলা হয়ে যাবে। এনিয়ে বিএনপির এ নেতার কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি। তবে দোষ চাপিয়েছেন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের ঘাড়ে। আর জেলা পুলিশ বলছে ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বাথানডাঙ্গা- রামপুর গ্রামের মুত জাকির মিয়ার ছেলে ইজিবাইকচালক মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। ওই বিএনপি নেতা নিজে পুলিশের সঙ্গে থেকে প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করে। পরে প্রাইভেটকারের মালিক খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ নিয়মানুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে প্রাইভেটকারটি জব্দ দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। তবে কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

Advertisement

উদ্ধারের পর জানা যায় প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার কাছে নিয়ে এসেছিল তার এক বন্ধু। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে পলাতক রয়েছে ইজিবাইক চালক মাহাবুর মিয়া। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময় মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমের কাছে গিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করেন বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন।

ফাঁস হওয়া কলরেকর্ডে ওই বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, দারোগার কাছে আমি আপনার ছেলেসহ দুজনের কথা বলছি। আড়াই লাখ টাকা লাগবে। বিষয়টি ওসি-এসপি স্যারের নাকি নজরে গেছে। তারা অ্যাকশনে যাইতে বলছে। তিনজনকে আড়াই লাখ টাকা ছাড়া হবে না। আজকে সকাল ১০ টার ভিতর না দিলে তোমার ছেলের নামেও মামলা হয়ে যাবে। এসময় অপর প্রান্ত থেকে মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কাকা আমার ছেলে তো নির্দোষ। আমি আড়াই লাখ টাকা কোহানে (কোথায়) পাবো। আমার ভিটাবাড়ি বেচলেও লাখ টাকা হবে না। তুমি আমার ছেলের একার বিষয়টি দেখো। আমি একলাখ টাকা দিতে পারবো। এসময় ওই বিএনপি নেতা বলেন, মোবাইল এতোকথা না বলে আপনি আমার বাড়ি আসেন।

এ বিষয়ে জানতে বুধবার সকালে মাহাবুর মিয়ার বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এসময় দেখা হয় মাহাবুর মিয়ার চাচা সৈয়দ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, নিয়ামুল হোসেন মিলন রাজনীতি করে আমরা জানি। প্রাইভেটকার উদ্ধারের সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ছিলেন। উদ্ধারের পর থেকে নিয়ামুল হোসেন মিলন মাহাবুবের মাকে মামলা হবে বলে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে আসছেন।

বিষয়টি স্বীকার করে বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন বলেন, প্রতিদিন ওই মহিলা আমার বাড়ি এসে কান্দে। আমি কী করবো। পরে মানবিক কারণে তাদের জন্য সুপারিশ করতে গেছি। আমাকে দারোগা গৌতম বাবু বলছে ওরা তো ওই সময় বলছিল তিন চার লাখ টাকা যা লাগুক তাই দিবে মামলা যেন না হয়। সেইটা দিতে বলেন মামলা তাদের নামে হবে না। আমাকে কাশিয়ানী থানার দারোগা গৌতম বাবু যা বলছে আমি তাই তাদের কাছে বলছি। আমি নিজের কথা বলিনি।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে কোটালীপাড়ার থানার সাব-ইন্সপেক্টর (সাবেক কাশিয়ানী থানা) গৌতম কুমার সেন বলেন, মিলন সাহেবকে আমি চিনি। তবে তার সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত বিষয় বা টাকার কোনো বিষয় নিয়ে আমার কথা হয়নি। সে হয়তো নিজে ফেঁসে গিয়ে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।

কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিউদ্দিন বলেন, প্রাইভেটকার উদ্ধারের পর মালিক খুঁজেছি। না পেয়ে আমরা জব্দ দেখিয়ে আদালত পাঠিয়েছি। এখানে কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। হয়তো এসআইয়ের সাথে ওই বিএনপি নেতার কথা হতে পারে। তবে ঘটনার কিছুই আমি জানি না।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আশিক জামান অভি/আরএইচ/এমএস