দেশ দোসরমুক্ত হয়নি উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের দোসরদের মদত দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
Advertisement
তিনি বলেছেন, দেশের অনেক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দোসরকে মদত দিচ্ছে। আমরা সংস্কারের কথা বলছি, কিন্তু যারা এমন করছে তাদের বিরুদ্ধে কেন কথা বলছি না। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারলে অভ্যুত্থানের কোনো সফলতা আসবে না।
‘আজকে চাঁদাবাজি হচ্ছে, সিন্ডিকেট হচ্ছে। কারা করছে, তাদের কথা কেন আমরা বলতে পারছি না। প্রতিটি বাজারে চাঁদাবাজির জন্য পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে সরকারকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই।’
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের টাউন হলে অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ও ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ, জুলাই বিপ্লবোত্তর আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে শাপলা চত্বরে শহীদ সিরাজের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত আস-সিরাজ সংগঠন।
Advertisement
আরও পড়ুন
‘মার্চ ফর ইউনিটিতে’ গণহত্যার বিচার চাইলেন সারজিস ছাত্ররা রাজনৈতিক দল করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে: সারজিসপুলিশকে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার টোল হিসেবে ব্যবহার করেছে মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, পুলিশকে শেখ হাসিনা একটি প্রতিষ্ঠানের মতো সমুন্নত না রেখে ক্ষমতায় থাকার টোল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এ অভ্যস্ততার কারণে, জিনে দাসত্ব মিশে যাওয়ার কারণে, অভ্যুত্থানে তাদের এতো খারাপভাবে ব্যবহার করার পরও আজকে সবাই নয়, কিন্তু অনেক পুলিশ সদস্য দেখছি যাদের এখনো ওই শিক্ষাটি হয়নি। যারা এখনো বিন্দুমাত্র নিজেদের আত্মসম্মান নিয়ে চিন্তা করছে না। অনেক পুলিশ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এখনো বিভিন্ন মতের কাছে, দলের কাছে, গোষ্ঠীর কাছে নিজেদের সপে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা আজকের কথা চিন্তা করছে না। তারা চিন্তা করছে আগামীতে কে তাদের ফেভার করে একটি ভালো চেয়ারে বসাতে পারবে। ঠিক একই জিনিস আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দোসর, যারা মাঠ পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে, জাতীয় পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে পেট্রোনাইজ করছে, তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা প্রত্যক্ষ মদতে টাকার বিনিময়ে না হয় ম্যান পাওয়ার সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে প্রটেকশন দিচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই অন্যতম সমন্বয়ক আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে শেখ হাসিনার মাধ্যমে নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছে এদেশের মানুষ। তার ক্ষমতার পিপাসার কাছে জিম্মি ছিল মানুষ। গোলাপগঞ্জের কাছেও জিম্মি হয়ে ছিল এদেশের মানুষ। তাই দেশের প্রত্যেকটি মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ‘শেখ হাসিনার দোসররা মাদরাসার ছাত্রকে দেখলে টার্গেট করে গুলি করত। তাই ছাত্ররা পাঞ্জাবি-পাজামা না পরে টি-শার্ট গায়ে দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। শুধু মাদরাসা নয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে। যারা হাসিনার দোসরদের ভয়ে আন্দোলনে যেতে পারেনি তারা তাদের স্ত্রী-সন্তান এবং স্বজনদের আন্দোলনে যেতে সহযোগিতা করেছে।
Advertisement
সারজিস আরও বলেন, শেখ হাসিনা হাজার হাজার পরিবারকে গত ১৬ বছরে উৎখাত করেছে। যাকে টার্গেট করেছে তাকেই মেরেছে। আগামীদিনে আমরা কাউকে এমন হতে দেবো কি না, তা আমাদের ওপর নির্ভর করবে। শেখ হাসিনা যা করেছে তার ফলাফল ২৪ এর অভ্যুত্থান।
আরও পড়ুন
সংবিধান কারও বাপের না: সারজিস আলমতিনি বলেন, আমাদের লড়াই বাংলাদেশের জন্য, মানুষের জন্য। আমরা যেন কোনো দল, মত বা গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি না হয়ে যাই। দেশের মানুষ অসহায় হয়ে শেখ হাসিনার কাছে জিম্মি হয়েছে। এতো কিছুর পরে দেয়ালে যখন মানুষের পিঠ ঠেকে গেছে, তখন মানুষ মুক্তির আশায় জীবন দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। কেউ যদি শেখ হাসিনার মতো ভুল পথে হাঁটেন তাদেরও পরিণতি এমন হবে। আমরা কাউকে ছাড়বো না, তাই বুক টান করে প্রতিবাদ করতে হবে।
সেমিনারে আস-সিরাজ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুফতি মুহিববুল্লাহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য লুৎফর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ মাহাদী, ড. আতিক মুজাহিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে ফজলুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১৫টি শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনুদানের অর্থ বিতরণ করেন অতিথিরা। পরে অতিথিদের বক্তব্য শেষে জাগরণী সংগীতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় এই সেমিনার। এতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এমডিকেএম/এমকেআর