অর্থনীতি

যেসব পণ্য কেনায় গুনতে হবে বাড়তি টাকা

শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়েছে সরকার। ফলে এসব পণ্য ও সেবা পেতে বাড়তি খরচ করতে হবে ক্রেতাকে। পণ্যভেদে আড়াই শতাংশ থেকে শুরু করে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে। বছরের শুরুতেই এ বাড়তি করের বোঝা প্রভাব ফেলবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়।

Advertisement

একে তো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, এর সঙ্গে বাড়তি কর যোগ হওয়ায় নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে। এতে মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হবে। ফলে সরকারের এ পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার শুল্ক-কর বাড়ানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে।

যেসব পণ্য ও সেবার শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্যের ভোক্তা প্রায় সবাই। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়লে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে সবারই খরচ বেড়ে যায়। বাধ্য হয়েই স্বল্প আয়ের মানুষেরা অন্য কোনো পণ্যের খরচ কমিয়ে বা কাটছাঁট করে এ বাড়তি খরচ সমন্বয় করেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফলের ওপর শুল্ক (ভ্যাট) বেড়েছে ১০ শতাংশ। ফলে ফল কিনতে খরচ বাড়বে। বিস্কুট ও কেকের শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ বেড়েছে সস, আচার ও চাটনির শুল্ক। খরচ বাড়বে কাপড় পরিষ্কারে। ডিটারজেন্টের শুল্ক ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এবং সাবানের ৪৫ থেকে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে।

Advertisement

বাড়বে এলপি গ্যাসের দাম, শুল্ক বেড়েছে আড়াই শতাংশ। সব ধরনের টিস্যুর শুল্ক সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। স্তর অনুযায়ী সিগারেটের শুল্ক বেড়েছে ৭ শতাংশ পর্যন্ত।

বছরের শুরুতেই বাড়ছে ভ্রমণ খরচ। আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমানের টিকিটে শুল্ক বেড়েছে ২০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, ফলে বাড়বে ইন্টারনেট খরচ।

আরও পড়ুন

ইন্টারনেটসহ শতাধিক পণ্যে খরচ বাড়লো কর বৃদ্ধির পর কতটা বাড়বে এসি-ফ্রিজের দাম? গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ আত্মঘাতী: ডিসিসিআই সভাপতি

যারা নতুন নতুন খাবরের স্বাদ পেতে ঘন ঘন রেস্তোরাঁয় যান তাদের এখন চলতে হবে কিছুটা হিসাব কষে। কারণ, রেস্তোরাঁর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ।

Advertisement

পোশাক কিনতেও গুনতে হবে বাড়তি টাকা। পোশাকের দোকানে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। নতুন কাপড় বানাতেও যোগ হলো বাড়তি খরচের বোঝা। টেইলারিং শপের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বেড়েছে মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ। এ খাতে শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে।

ফ্রিজ, এসি ও মোটরসাইকেলের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর দ্বিগুণ করেছে সরকার। এর ফলে নতুন করে পণ্যগুলো কিনতে আগের চাইতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে ক্রেতাদের।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে মহাখালী কাঁচাবাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আবিদ হোসেনের সঙ্গে। জাগো নিউজের কাছে তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দিতে করের বোঝা বাড়ানো হলো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সিংহভাগ মানুষের বেতন বাড়েনি। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে যাবে।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হোসেন বলেন, বেশ কয়েকবছর ধরেই হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো ধুঁকছে। তার ‍ওপর উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে রেস্তোরাঁর আয় কমে গেছে। নতুন করে রেস্তোরাঁয় ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই বিপদে ফেলবে। মানুষ ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর খাবারমুখী হবে। ভালো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা কমবে। অনেক মানুষ চাকরি হারাবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের ওপর পরোক্ষ কর বাড়িয়েছে। বিস্কুট, সাধারণ হোটেল, মোবাইল রিচার্জ, গ্যাসসহ অপরিহার্য পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের রাজস্ব আদায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর আগের সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে অনেক বেশি ঋণ নিয়েছে। বিদেশ থেকে অনেক ঋণ নিয়েছে। এ বছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হবে। সরকার চাইলেই ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপাতে পারবে না। রাজস্ব আদায়ের কোনো বিকল্প নেই। মূল্যস্ফীতির মধ্যে এই করের হার কিছুটা অসুবিধা করবে। কিন্তু এর কোনো বিকল্প নেই।

কোন পণ্য ও সেবায় কতটা বাড়লো শুল্ক-কর 

পণ্যের নাম

ভ্যাট বা শুল্ক আগের হার

ভ্যাট বা শুল্ক বর্তমান  হার

পণ্যের নাম

ভ্যাট বা শুল্ক আগের হার

ভ্যাট বা শুল্ক বর্তমান  হার

আরসিয়া     নাট           

৩০

৪৫

 তাজা বা শুকনো সুপারি

৩০

৪৫

পাইন নাট

৩০

৪৫

ডিটারজেন্ট

২০

৩০

তাজা বা শুকনা আম

২০

৩০

সাবান

৪৫

৬০

তাজা বা শুকনা কমলালেবু

২০

৩০

এলপি গ্যাস

৭.৫

তাজা বা শুকনা লেবুজাতীয় ফল

২০

৩০

কিচেন টাওয়াল

৭.৫

১৫

তাজা বা শুকনা আঙ্গুর

২০

৩০

টয়লেট টিস্যু

৭.৫

১৫

তাজা বা শুকনা লেবু

২০

৩০

ন্যাপকিন টিস্যু

৭.৫

১৫

তরমুজ

২০

৩০

ফেসিয়াল টিস্যু

৭.৫

১৫

পেয়ারা

২০

৩০

হ্যান্ড টাওয়াল

৭.৫

১৫

তাজা আপেল ও নাশপাতি

২০

৩০

সান গ্লাস (প্লাষ্টিক ফ্রেম)

৭.৫

১৫

           

এপ্রিকোট 

 

২০

৩০

সান গ্লাস (মেটাল ফ্রেম)

৭.৫

১৫

চেরি

২০

৩০

চশমার প্লাষ্টিক ফ্রেম

১৫

পীচ

২০

৩০

চশমার মেটাল ফ্রেম

১৫

অন্যান্য তাজা ফল

২০

৩০

রিডিং গ্লাস ( প্লাষ্টিক ফ্রেম)

১৫

ফলের রস

২০

৩০

রিডিং গ্লাস ( মেটাল ফ্রেম)

১৫

ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংকস

১০

১৫

 নারকেলের ছোবড়ার ম্যাট্রেস

১৫

আর্টিফিশিয়াল/ ফ্লেভার ড্রিংকস/ ইলেক্ট্রলাইট ড্রিংকস (কার্বোনেটেড)

 

৩০

বিভিন্ন ধরণের রং

২০

৩০

আর্টিফিশিয়াল/ ফ্লেভার ড্রিংকস/ ইলেক্ট্রলাইট ড্রিংকস (নন কার্বোনেটেড)

 

১৫

পেইন্টস (প্রাইমারসহ)

১৫

পটেটো ফ্ল্যাকস

১৫

বিভিন্ন ধরণের সি  আর কয়েল জিপি শীট

১৫

ভুট্টা  স্টার্চ

১৫

জিআই ওয়্যার

১৫

হাতে তৈরি বিস্কুট (প্রতিকেজি ২০০ টাকা মূল্যমানের উপরে)

১৫

বিভিন্ন ধরণের ট্রান্সফরমার

১৫

কেক প্রতিকেজি ৩০০ টাকা মূল্যমানের উপরে)

১৫

লাইমস্টোন

   

১০

আচার (প্যাকেটজাত ও বোতলজাত)

১৫

ডলোমাইট       

 

১০

টমেটো সস (প্যাকেটজাত ও বোতলজাত)

১৫

নিম্ন স্তর সিগারেট- ৫০ টাকা ও তদূর্ধ্ব

৬০

৬৭

আম, আনারস, পেয়ারা, কলা, তেতুলের পেষ্ট

১৫

মধ্যম স্তর সিগারেট- ৭০ টাকা ও তদূর্ধ্ব

৬৫.৫

৬৭

চাটনী

১৫

উচ্চ স্তর সিগারেট- ১৪০ টাকা ও তদূর্ধ্ব

৬৫.৫

৬৭

     

অতি উচ্চ স্তর সিগারেট- ১৬০ টাকা ও তদূর্ধ্ব

৬৫.৫

৬৭

     

বৈদ্যুতিক    খুটি

১০

১৫

     

ইলেকট্রিক পোল

১০

১৫

     

আমদানি করা বিটুমিন

১৫

     

কঠিন শিলা

১৫

     

ট্রান্সফরমার ওয়েল

১৫

     

লুব্রেডিং ওয়েল

১৫

     

ফেরো মেঙ্গোনিজ

১৫

যেসব সেবায় বেড়েছে শুল্ক, মূসক

অভ্যন্তরীন বিমান টিকেট

 ৫০০ টাকা

৭০০ টাকা

আন্তর্জাতিক রুট (সার্ক দেশভুক্ত)

৫০০ টাকা

১০০০ টাকা

আন্তর্জাতিক রুট এশিয়া মহাদেশ (সার্ক দেশভুক্ত দেশ ব্যাতীত)

২০০০ টাকা

২৫০০ টাকা

আন্তর্জাতিক রুট এশিয়া মহাদেশ (সার্ক দেশভুক্ত দেশ ও এশিয়া মহাদেশ  ব্যাতীত)

৩০০০ টাকা

৪০০০ টাকা

স্থানীয় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মূসকের হার

৭.৫

ওষুধের ক্ষেত্রে (স্থানীয় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মূসকের হার)

২.৪

এলপির ক্ষেত্রে (স্থানীয় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মূসকের হার)

ইন্টারনেট (আইএসপি)

 

১০

বিআরটিএকে সরবরাহ করা লেমিনেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স

১৫

হোটেল, রেস্তোরাঁ (মদ সরবরাহ)  

২০

৩০

টেলিফোন সেব, সিম ও রিমের মাধ্যমে

২০

২৩

রেস্তোরাঁ

১৫

ইভেন্টি সংস্থা

১৫

নন এসি হোটেল

৭.৫

১৫

মিষ্টান্ন ভান্ডার

৭.৫

১৫

নিজস্ব ব্র্যান্ড সম্বলিত তৈরি পোশাকের বিপনন/ নিজস্ব ব্র্যান্ড ব্যাতীত পোশাক

৭.৫

১৫

   

টেইলারিং শপ

১০

১৫

চলচ্চিত্র প্রদর্শক

১০

১৫

চলচ্চিত্র পরিবেশক

১০

১৫

মেরামত ও সার্ভিসিং

১০

১৫

স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল

১০

১৫

খেলাধুলার আয়োজক

১০

১৫

পরিবহন ঠিকাদার

১০

১৫

বোর্ড সভায় যোগদানকারী

১০

১৫

ভবন রক্ষণাবেক্ষণকারী

১০

১৫

সামাজিক ও খেলাধুলার বিষয়ক ক্লাব

১০

১৫

এসএম/কেএসআর/এমএস