খেলাধুলা

তামিম জাতীয় দলে ফিরবেন না, আগেই জানতেন ঘনিষ্ঠরা

তামিম ইকবাল খানের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই। দেশের এক নম্বর ওপেনার তামিম আবার বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন কিনা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়েই ছিল বছর খানেকের বেশি সময় ধরে। এ সময়টা ছিল দিন-রাত্রির পালা বদলের মতো। কখনো মনে হয়েছে তামিম আবার জাতীয় দলে ফিরে আসবেন। আবার পরক্ষণেই জানা গেছে, তামিম আর জাতীয় দলে নাও ফিরতে পারেন।

Advertisement

এমন দোটানার মাঝে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর কথা শুনে মনে হচ্ছিলো তামিম ফিরতে পারেন। এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামতে পারেন। সিলেটে বিপিএল চলাকালীন তামিমের জাতীয় দলে ফেরা ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে গত কয়েক দিনে দুই দফা বৈঠকের পর প্রধান নির্বাচক অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছিলেন।

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, তামিমের বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানতে আরও ২-৩ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তামিম ইস্যুতে লিপুর শেষ কথা ছিল এরকম, ‘তামিম খেলবে কিনা সেটা নিজেই জানাক।’

দুই দিন না যেতেই তামিম জানালেন। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ। অনেক দিন ধরেই এটা নিয়ে ভাবছিলাম। এখন যেহেতু সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর, আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার অলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক।’

Advertisement

বলার অপেক্ষা রাখে না তামিম ভক্তদের মন বিষাদে ভরে গেছে। প্রিয় তারকা আর দেশের হয়ে কোনো ফরম্যাটে খেলবেন না, তা ভাবতেই তাদের চোখে পানি চলে আসছে। শুধু তামিম ভক্তদের কথা বলা কেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ক্রিকেট অনুরাগীই তামিমের এ ফেসবুক পোস্ট দেখে মর্মাহত। তারাও দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক নম্বর ওপেনারের জাতীয় দলে আর না ফেরার ঘোষণাকে মন থেকে মানতে পারছেন না।

ভক্তদেরও আশা ছিল অন্তত আরও বছর খানেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যাবেন তামিম। সাম্প্রতিক সময় এনসিএল টি-টোয়েন্টি ও চলতি বিপিএলে তামিমের ব্যাটিং দেখেও মনে হয়েছে আরও কিছুদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য ছিল তামিমের। যার ব্যাট এখনো হাসে, যে ওপেনার এখনো ২২ গজে স্বাচ্ছন্দে খেলেন। চার ছক্কার ফুলঝুরি ছোটান। রান করেন। তার আর জাতীয় দলে না ফেরার ঘোষণায় সবার মুষড়ে পড়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় তামিমের জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে অর্থে বড় ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি। বেশির ভাগ ক্রিকেট অনুরাগীর প্রতিক্রিয়া হলো, তামিমের জাতীয় দলে না ফেরার ঘোষণা কোনো নতুন খবর নয়। আমরা এমন খবরই শোনার অপেক্ষাতেই ছিলাম। এটাকে মোটেই বাড়াবাড়ি ভাবার কারণ নেই। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে তামিমের কথা-বার্তায় ফুটে উঠেছিল তিনি আর জাতীয় দলে ফিরবেন না। এই বিপিএল শুরুর ঠিক আগের দিন, মানে গেল ২৯ ডিসেম্বর শেরে বাংলার প্রেস কনফারেন্স রুমে বসে সংবাদ সম্মেলনে তামিম আভাস দিয়েছিলেন জাতীয় দলে না ফেরার। সেই সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে তামিম বলেই ফেলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা বহুদূরে, তিনি নিজ থেকে কিংবা বোর্ডের কেউ তার সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। যে কারণে তামিমের মুখে এমন কথা, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি কারো। আমি যেয়ে কোনো আলোচনা করিনি, অন্য কেউও আমার সঙ্গে আলোচনা করেনি।’

এক পর্যায়ে তামিমের মুখ থেকে এমন কথাও বের হয় যে, ‘এই মুহূর্তে জাতীয় দল নিয়ে আমার মাথায় কোনো চিন্তা নেই।’

Advertisement

বিপিএল শুরুর ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে এমন কথা বলা তামিম পরবর্তী ১২ দিনের মাথায় যখন ফেসবুকে জাতীয় দলে না ফেরার কথা বলেন, তখন নিশ্চয়ই সেটাকে অভাবনীয়, অপ্রত্যাশিত কিংবা নতুন খবর বলা যায় না।

তামিমের কাছের প্রায় সবাই জানতেন, তিনি আর কখনো জাতীয় দলে ফিরবেন না। পরিবারের সদস্য, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীদের কাউকে কাউকে তামিম প্রায় ৬ মাস আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আর জাতীয় দলে খেলবেন না।

বলে রাখা ভালো, সেই তালিকায় দেশের কয়েকজন ক্রীড়া সাংবাদিক বিশেষ করে কিছু ক্রিকেট রিপোর্টারও আছেন যাদের সঙ্গে একান্ত আলাপে তামিম তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বেশ আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। সে কথা এক মুখ, দুই মুখ করে কানে ভেসে প্রায় সব গণমাধ্যমেই জানাজানি হয়ে গিয়েছিল।

তাই গণমাধ্যমও তামিমের জাতীয় দলে না ফেরার খবর নিয়ে তেমন হৈচৈ নেই। কারণ, কম বেশি সবার জানা যে, তামিম আর কখনো জাতীয় দলে ফিরে আসবেন না। শুক্রবার গভীর রাতে শুধু সে খবর আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।

এআরবি/এমএইচ/এমএস