ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
Advertisement
দেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে রিও ভাইরাস। এরই মধ্যে ৫ জনের দেহে রিও ভাইরাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রক্তাক্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তারা আরও জানিয়েছেন, সংক্রমিতদের কারও অবস্থাই গুরুতর ছিল না, সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা ৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় রিও ভাইরাসে আক্রান্ত নিশ্চিত হয়। এরপর থেকে মিডিয়ায় রিও ভাইরাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
রিও ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। রিও ভাইরাস রিও-ভাইরিডি গ্রুপের ভাইরাস। এই ভাইরাস গোত্রের মধ্যে পরিচিত একটি ভাইরাস হলো রোটা ভাইরাস। একে আমরা সবাই চিনি। রোটা ভাইরাস শিশুদের ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। রোটা ভাইরাসের মতোই একটি ভাইরাস হলো রিও ভাইরাস। রিও ভাইরাসে সাধারণত শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়া বয়স্করাও আক্রান্ত হতে পারেন।
Advertisement
রিও ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় তা নিয়ে সঠিক কারণ এখনো সেভাবে জানা যায়নি। তবে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, রিও ভাইরাস আক্রান্ত কোনো শিশুর মল পানি বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্য শিশুর মুখে গেলে এ ভাইরাসের সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়া যেহেতু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সর্দি-কাশি থাকে তাই অনেকে মনে করেন হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
আরও পড়ুন
শীতে মাথাব্যথা বাড়ে কেন? শীতে ‘ম্যাট নাকি গ্লোসি’ লিপস্টিক ব্যবহার করবেন? সংক্রমিতদের শরীরে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে লক্ষণগুলো হয় তা অন্যান্য ভাইরাসের মতোই অনেকটা। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, অবসাদগ্রস্থতা হতে পারে। একই সঙ্গে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া। শিশুদের জ্বরের সঙ্গে পুরো শরীরে দেখা দিতে পারে ফুঁসকুড়ি। সাধারণত ভাইরাস জ্বরের মতই ৫-৭ দিন পর আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
চিকিৎসা কী?এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দেন চিকিৎসকরা। রোগীর জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল দিতে হয়। সর্দি-কাশির জন্য মন্টিলুকাস্ট অথবা ফেক্সোফেনাডিন বা রুপাটিডিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। ডায়রিয়া থাকলে শিশুকে ওরাল স্যালাইন খাওয়াতে হয়। শরীর ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল কাজ করে।
Advertisement
রিও ভাইরাস কিন্তু এতোটাও ভয়াবহ নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। ১৯৫৪ সালে প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্তের পর থেকে এতদিন পর্যন্ত যত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন তাদের খুব কমই মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়েছে।
খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তির মস্তিষ্কের প্রদাহ এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এনকেফেলাইটিস বলা হয় ও মস্তিষ্কের পর্দার প্রদাহ যেটাকে মেনিনজাইটিস বলা হয় তা হতে পারে। তবে তা খুবই কম। তারপরও যদি কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস), ঢাকা।
জেএমএস/এমএস