জাগো জবস

বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরামর্শ

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ পদের লিখিত পরীক্ষা আগামী ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এ পদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় মোট ২০০ নাম্বারের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এ পরীক্ষা ভালো দিতে পারলেই মোটামুটি ফাইনাল লিস্টে থাকা সম্ভব। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরামর্শ নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা। পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক এহসানুল হক মাহিন—

Advertisement

ইংরেজি কম্প্রিহেনশনপ্রথম প্রশ্নে একটি অনুচ্ছেদ (Unseen Passage) থাকে। বিগত পরীক্ষাগুলোয় ৯ম গ্রেডের সিনিয়র অফিসার ও সহকারী পরিচালক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ৩০ নাম্বার প্যাসেজের জন্য বরাদ্দ ছিল। প্যাসেজ থেকে ৫ নাম্বারের মোট ৬টি প্রশ্ন এসে থাকে। প্যাসেজটি অল্প সময়ে পড়ে নিজের ভাষায় সুন্দর শব্দচয়ন করে উত্তর করলে ভালো নম্বর আসে। একদম টু দ্য পয়েন্ট উত্তর না করে ব্যাখ্যামূলক আলোচনা করতে হবে। ন্যূনতম ৩ বাক্যে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর করা উচিত। ৩০ নম্বরের প্যাসেজে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় নিন। এ ক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে, প্রথমে প্রশ্ন পড়ে সংশ্লিষ্ট লাইনগুলো প্যাসেজে আন্ডারলাইন করে পরে উত্তর করার।

গাণিতিক সমস্যা দ্বিতীয় প্রশ্নে ইংরেজিতে ৫টি গাণিতিক সমস্যার বর্ণনা করা থাকে। ইংরেজি প্রতিশব্দগুলো জানা না থাকলে প্রশ্নই বোঝা সম্ভব নয়। নতুন সিলেবাসের বিগত প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়; লাভ-ক্ষতি, সুদ-আসল, শতকরা, অনুপাত, পরিমিতি, সমীকরণের বাস্তব প্রয়োগ, লগারিদম, ধারা ইত্যাদি অংশ থেকে প্রশ্ন আসে। এই ৩০ নম্বরে ভালো করতে হলে বিগত পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করে শুরুতেই নিজের দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। এরপর সেই অধ্যায়গুলোয় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পরীক্ষার কেন্দ্রে অযথা এ অংশে বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না। ২৫ মিনিটে যতটা সমাধান করা সম্ভব, তা করে অন্য প্রশ্নে সময় দেবেন।

আরও পড়ুন: বিসিএস পরীক্ষায় পাসের কোনো শর্টকাট নেই: নিশাত রায়হান

Advertisement

সাধারণ জ্ঞান তৃতীয় প্রশ্নে ১৫টি সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নে মোট ৩০ নাম্বার বরাদ্দ থাকে। চাকরি পেতে হলে এ অংশে ভালো করার কোনো বিকল্প নেই। বিগত লিখিত পরীক্ষায় বৈশ্বিক অর্থনীতি, শিল্প-বাণিজ্য, সাম্প্রতিক অর্জন, পদক-পুরস্কার, জাতীয় বিষয়াবলি, এক্রোনিম, মুক্তিযুদ্ধ, খেলা, পরিবেশ, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি অংশ থেকে প্রশ্ন এসেছে। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানের বই থেকে ওই অধ্যায় পড়লে সিংহভাগ প্রস্তুতি হয়ে যায়। এ অংশে ১০-১২ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় করা উচিত নয়। সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে পরামর্শ, বিগত ৩০ দিনের পত্রিকায় আলোচিত টপিকসমূহ বিস্তারিত দেখে যেতে হবে। অনুবাদবিগত ৯ম গ্রেড স্কেলের ব্যাংক লিখিত পরীক্ষার চতুর্থ প্রশ্নে ১০ নাম্বারের ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ এসেছে। ব্যাংক ব্যবস্থা, মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি, নৈতিকতা, শিল্প, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় থেকে অনুবাদ আসার সম্ভাবনা বেশি। এ অংশে ভালো করতে নিয়মিত ইংরেজি দেশি-বিদেশি পত্রিকার ওই বিষয়ক সংবাদগুলো পড়া যেতে পারে। ভাবানুবাদ এবং টেকনিক্যাল টার্মগুলোর সঠিক অনুবাদ অন্যদের চেয়ে আপনাকে এগিয়ে দেবে। অনুবাদ ১০ নাম্বারের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মিনিট সময় নিন। শব্দ ধরে অনুবাদ না করে পুরো বাক্য পড়ে একবারে অনুবাদ করে সময় বাঁচানো উচিত।

ফোকাস রাইটিংপঞ্চম ও ষষ্ঠ নাম্বার প্রশ্নে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি ফোকাস রাইটিং থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৩৫ নাম্বার করে, মোট ৭০ নাম্বার। ফোকাস রাইটিংয়ের ভূমিকা ও উপসংহার হবে সংক্ষিপ্ত, বৈশিষ্ট্য আলোচনা ও বিশ্লেষণ হতে হবে পরিণত। হাতের লেখাভেদে আদর্শ ফোকাস রাইটিং ৩.৫ থেকে ৫ পৃষ্ঠা হতে পারে। দ্রুত ও পরিষ্কার হাতের লেখার পাশাপাশি আকর্ষণীয় ও যথার্থ শব্দচয়ন আপনাকে চাকরি এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেজন্য বাংলা ও ইংরেজি ভোকাব্যুলারির আয়ত্ত ও প্রয়োগ করার কোনো বিকল্প নেই। কোটেশন, ডাটা, ছক দেওয়ার জন্য নিয়মিত প্রয়োজন পত্রিকা পাঠের অভ্যাস। যদি ফোকাস রাইটিংয়ের টপিকটি আপনার কমন না আসে তবে কী, কেন ও কীভাবে? এই তিনটি প্রশ্ন মাথায় রেখে যতটা পারবেন লিখে দিয়ে আসতে হবে। এই ৭০ নাম্বারের লিখিততে ৪০ মিনিটের বেশি সময় দেওয়া উচিত নয়। ফোকাস রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে টপিকভিত্তিক নোট তৈরি করা এবং পত্রিকার কলাম হতে ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, গ্রামীণ উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, মেগা প্রজেক্ট, টেকসই উন্নয়ন, ব্যাংক খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ, চলমান বৈশ্বিক সংকটসহ সাম্প্রতিক আলোচিত বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা উচিত।

আরও পড়ুন: বিসিএসের তিনটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ: ইমাম মোশারফ

আরগুমেন্ট রাইটিংসবশেষে ৩০ নাম্বারের আরগুমেন্ট রাইটিং থাকবে, যার জন্য প্রয়োজন বিশ্লেষণ ও যুক্তি প্রয়োগের দক্ষতা। আরগুমেন্টে কোটেশন, ছক ও ডাটা দেওয়া উচিত নয়। কেবল নিজস্ব জীবন দর্শন, চিন্তা-ভাবনার দর্পণ এই আরগুমেন্ট। তাই এসবের গোছানো ও সুন্দর প্রতিফলন আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। এ অংশে ভালো করার জন্য ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় অংশে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার বিশ্লেষণ ও যুক্তিতর্ক অংশ পড়া যেতে পারে। উত্তর করা যেতে পারে ন্যূনতম ৪টি প্যারায়—সমস্যার স্বরূপ, পক্ষে যুক্তি, বিপক্ষে যুক্তি এবং সবশেষে পক্ষাবলম্বন। পক্ষাবলম্বন করতে হবে সাবধানে যেন কোনো একপক্ষের প্রতি আপনার পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ না পায়। ১৫ মিনিট সময় নিয়ে ৩ থেকে ৪ পৃষ্ঠার কাছাকাছি লেখা ভালো। আরগুমেন্ট রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে লিংকার্স, ইডিয়ম ও ফ্রেজ, সিম্পল, কমপ্লেক্স ও কম্পাউন্ড সেন্টেন্স ইত্যাদির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ছন্দ বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

এসইউ/এমএস