বাফুফের ভোটের সময় খবরদারি করেন জেলার ফুটবল সংগঠকরা। সিন্ডিকেট করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের জেতাতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে থাকেন তারা। তবে আসল যে কাজ, সেই জেলার ফুটবল উন্নয়নে তাদের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না। হাতে গোনা কিছু জেলা আছে, যারা লিগ আয়োজন করে। অর্থ নেই, মাঠ নেই-এমন অনেক সমস্যার কথা উল্লেখ করে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেন। অথচ নিয়মিত লিগ আয়োজনের শর্তেই বাফুফের সাধারণ পরিষদের সদস্য এই ডিএফএগুলো।
Advertisement
এখন হয়তো খেলা আয়োজন না করে বসে থাকার সুযোগ কমে যাবে জেলার কর্মকর্তাদের। বাফুফের নতুন কমিটি জেলা লিগ আয়োজনে কঠোর হতে যাচ্ছে। সেই পথেই হাঁটছে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. ইকবাল হোসেনকে চেয়ারম্যান করে গঠন হয়েছে জেলা ফুটবল লিগ কমিটি।
বেশ শক্তিশালী কমিটিই হয়েছে জেলার লিগ সচল করার জন্য। কমিটির সদস্য হিসেবে বাফুফের নির্বাহি কমিটির ৩ জন সদস্য আছেন। বেশ কয়েজন সাবেক ফুটবলারের পাশাপাশি জেলার কর্মকর্তারাও আছেন এই কমিটিতে। জেলার লিগ সচল করা এবং অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন কমিটির চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন।
জাগো নিউজ: দেশের ফুটবল নিয়ে আলোচনা করলেই প্রথম আসে জেলার কথা। জেলার ফুটবল হারিয়ে গেছে, এই অভিযোগ অনেক দিনের। কিন্তু বাফুফে জেলা লিগ নিয়মিত করতে সেভাবে উদ্যোগ নেয়নি। আপনার লক্ষ্য কী?ইকবাল হোসেন: আমরা একটা কমিটি করেছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে প্রথম সভা করতে পারবো। সেখানেই আমরা পরিকল্পনা তৈরি করে জেলার ফুটবল সচলের উদ্যোগ নেবো।
Advertisement
জাগো নিউজ: কমিটির প্রধান হিসেবে আপনার নিশ্চয়ই কিছু লক্ষ্য আছে। যে লক্ষ্যগুলো আপনি উপস্থাপন করবেন কমিটির সভায়।ইকবাল হোসেন: অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য আছে। কমিটির অন্যান্যদেরও ব্যক্তিগত অভিমত থাকবে। সব অভিমত মিলিয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হবো। আমাদের প্রথম কাজই হবে জেলার লিগ শুরু করা।
জাগো নিউজ: এমন উদ্যোগ আগেও যে নেওয়া হয়নি, তা কিন্তু না। বাস্তবে আমরা দেখেছি সারাদেশে লিগ হয়নি। আপনার উদ্যোগকে আমরা কীভাবে আলাদা করতে পারি?ইকবাল হোসেন: আমার কথা হলো, লিগ আয়োজন করতেই হবে। সেটা না করলে তাদের শাস্তি পেতে হবে। তবে আমরা দেখবো কোন জেলার কী সমস্যা আছে। লিগ আয়োজন না করার কারণ গ্রহণযোগ্য না হলে শাস্তি।
জাগো নিউজ: জেলার কর্মকর্তারা সব সময় টাকা-পয়সা, পৃষ্ঠপোষকতার সমস্যার কথা বলে। আপনি লিগ আয়োজনের নির্দেশ দিলেন কিন্তু সমস্যা দেখলেন না। তাহলে কেমন হবে?ইকবাল হোসেন: লিগ আয়োজন করতে টাকার সমস্যা হলে আমরা দেখবো কীভাবে তাদের সহযোগিতা করা যায়। জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলেমিশেই আমরা লিগ আয়োজন করবো। কথা একটাই, লিগ আয়োজন করতে হবে।
জাগো নিউজ: লিগ আয়োজন না করলে শাস্তি দেবেন বলছিলেন। সেই শাস্তির ধরন কী হতে পারে?ইকবাল হোসেন: যারা লিগ আয়োজন করবে না, আমরা আগে দেখবো তাদের সমস্যা কী; কেন করলো না। যদি লিগ আয়োজন করতে না পারে তাহলে একটা টুর্নামেন্টও করতে পারতো কিনা, সেসবও দেখা হবে। আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার পরও যদি কোনো জেলা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে, তাদের শাস্তি হবে। আমরা লিগ আয়োজন না করা জেলাগুলো নিয়ে প্রতিবেদন দেবো। নির্বাহী কমিটি তার ভিত্তিতে নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি দেবে।
Advertisement
জাগো নিউজ: জেলার লিগ আয়োজনে মাঠ সংকটও বড় এক সমস্যা। ইকবাল হোসেন: সেটা আমরা জানি। আমাদের ক্রিকেটের সাথে ভাগাভাগি করে জেলার ফুটবল চালাতে হয়ে। আমরা সেই সমস্যা বিবেচনা করে সময় বের করে লিগ আয়োজন করতে হবে।
জাগো নিউজ: নতুন বছরের প্রথম মাস শেষের পথে। আপনাদের উদ্যোগে কবে নাগাদ জেলার লিগ মাঠে গড়াতে পারে?ইকবাল হোসেন: আমাদের লক্ষ্য হলো ফেব্রুয়ারিতে লিগ শুরুর। ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্তত ১০ টি জেলার লিগ শুরু করতে চাই। তার পর আস্তে আস্তে অন্যান্য জেলার লিগ শুরু করা হবে।
জাগো নিউজ: ধরলাম বেশিরভাগ জেলার লিগ নিয়মিত হলো। সেখানেই কি আপনাদের দায়িত্ব শেষ হবে? ইকবাল হোসেন: না। আমরা জেলার লিগ শেষ করেই সেই আয়োজন থামিয়ে দেবো না। এর পর হবে সব জেলার চ্যাম্পিয়ন দল নিয়ে একটি জাঁকজমকপূর্ণ টুর্নামেন্ট। সেখানে ভালো প্রাইজমানি দিতে পারলে জেলার ক্লাবগুলোর আগ্রহ বাড়বে।
জাগো নিউজ: কী ফরম্যাটে সেই টুর্নামেন্ট করতে চাচ্ছেন আপনারা?ইকবাল হোসেন: আমরা জেলা লিগ কমিটির সভা করে এসব বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে নির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপন করবো। নির্বাহী কমিটি অনুমোদন দিলে সেভাবে হবে। তবে আমরা এই টুর্নামেন্ট এমনভাগে আয়োজন করবো যাতে জেলার দলগুলো উৎসাহিত হয়।
জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।ইকবাল হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরআই/এমএমআর/জিকেএস