কৃষি ও প্রকৃতি

দেখতে শান্ত হলেও ভয়ংকর এই মাছ

প্রথম দেখায় শান্ত একটি মাছ বলেই মনে হবে। কিন্তু যখন আশেপাশে বিপদের উপস্থিতি টের পাবে; তখনই নিজের শরীরকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে নেবে। এটি হচ্ছে ভয়ংকর ‘পাফার মাছ’। বাঙালিরা এটাকে বেলুন বা পোটকা মাছ হিসেবে চিনলেও বিশ্বে একে পাফার ফিশ হিসেবে চেনে। কেউ কেউ একে ব্লোফিশ নামেও চেনেন।

Advertisement

পৃথিবীজুড়ে ১২০টিরও বেশি প্রজাতির পাফার মাছ আছে। এ প্রজাতিগুলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্রের নোনা পানিতে থাকতে পছন্দ করে। সামুদ্রিক এ প্রাণী ৫-৩৫ ফুট গভীরে বসবাস করে। পাফার মাছের দেহের গড় দৈর্ঘ ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। ব্রাজিলের দক্ষিণাংশ, ফ্লোরিডা, বাহামাসহ বিশ্বের সব সাগর-মহাসাগরেই এদের কম-বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

ভূমধ্যসাগরীয় মৎস্য গবেষণা, উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক সেরকান এরকান ২০০৮ সালে এ মাছ প্রথম দেখার পর ১৪ বছর ধরে বিশেষ নজর রাখেন। এরকান বলেন, ‘পাফারদের অভিযোজন ক্ষমতা খুব বেশি। পাফার মাছ লবণাক্ত পানিতে থাকলেও ভবিষ্যতে এটি অভিযোজিত হয়ে মিঠাপানির দিকে ধাবিত হবে। ভবিষ্যতে এটি ভূমধ্যসাগর থেকে কম লবণাক্ত কৃষ্ণসাগরে বৃহৎ আকারে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারে।’

আরও পড়ুন: সাবুদানা কী? এটি কীভাবে তৈরি হয়?

Advertisement

পাফার মাছের ঘনত্ব, প্রজনন এবং স্থানান্তর ভবিষ্যতে বাস্তুতন্ত্র ও মৎস্য সম্পদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে! তাই এদের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তিত গবেষকরা। এদের শক্তিশালী চোয়ালের গঠনের কারণে সহজেই শক্ত যে কোনো কিছু হজম করতে পারে। তবে পাফার মাছ অন্য প্রজাতির মাছের প্রজননেও বাধা হতে পারে। এছাড়া মাছ ধরার জালের ক্ষতিও করে এ মাছ।

পাফার মাছের অধিকাংশ প্রজাতি বিষাক্ত। এরা নিজেদের শরীর ফুলিয়ে ত্বক, অন্ত্র ও ডিম্বাশয় থেকে টেট্রাডক্সিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত করে। যা বিষের মতো কাজ করে। ভয়ংকর সায়ানাইডের চেয়েও ১২০০ গুণ শক্তিশালী এদের বিষ।

৩০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে মারতে একটি পাফার ফিশই যথেষ্ট। কোনো ব্যক্তি যদি এ বিষের কবলে পড়েন তাহলে ৪-৬ ঘণ্টার ভেতর মৃত্যু নিশ্চিত। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে প্রথমে বমি শুরু হবে। এরপর বমির ভাব অতিমাত্রায় বেড়ে যাবে। ধীরে ধীরে হৃৎক্রিয়া অস্বাভাবিক ভাবে কাজ করবে। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টের সাথে পেশী অবশ হতে শুরু করবে।

আরও পড়ুন: পরিবেশ-শিক্ষা টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার

Advertisement

জাপানের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯৬-২০০৬ সালের ভেতর গড়ে প্রতি বছর ৪৪ জন মানুষ এ মাছের বিষের সংস্পর্শে এসে অসুস্থ হতেন এবং ৬ জন মারা যেতেন। তারপরও চীন, জাপান, কোরিয়ায় সুস্বাদু খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এ মাছ। জাপানে একে ফুগু বলা হয়। তবে এ মাছের রন্ধনশিল্পীকে খুব দক্ষ হতে হয়।

পাফার মাছের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য উল্লেখ করে এরকান বলেন, ‘পাফার মাছের চামড়া থেকে মানিব্যাগ, অলঙ্কার এবং ব্যাগের মতো পণ্য তৈরি করা যায়।’

তথ্যসূত্র: দ্য ডেইলি সাবাহ

এসইউ/জেআইএম