ধর্ম

হাদিস থেকে শিক্ষা: লোক দেখানো আমল সওয়াব নয়, গুনাহের কাজ

রাসুল (সা.) বলেছেন,

Advertisement

مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللهُ بِهِ

যে ব্যক্তি লোক শোনানো ইবাদত করে আল্লাহ তার ইবাদতের উদ্দেশ্য মানুষকে শোনাবেন। যে ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ইবাদতের উদ্দেশ্য মানুষকে দেখাবেন। (সহিহ বুখারি: ৬৪৯৯)

এই হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই:

Advertisement

১. সব ইবাদত ও নেক আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের জন্য করা মুমিনের ওপর ওয়াজিব। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,

وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَতাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যেন শুধু আল্লাহর জন্য ইবাদত করে। (সুরা বায়্যিনাহ: ৫)

আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,

فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا

Advertisement

যে তার রবের সাথে সাক্ষাতের আশা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। (সুরা কাহাফ: ১১০)

লোক দেখানো ইবাদত হারাম। হাদিসে এসেছে লোক দেখানো ইবাদতকারী যদি রিয়া বা তার লোক দেখানোর গুনাহ থেকে তওবা না করে, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সব মানুষের সামনে তাকে তার আমলের সওয়াব দেখাবেন এবং তার রিয়ার কথা প্রকাশ করে তাকে ওই সওয়াব থেকে বঞ্চিত ঘোষণা করবেন। সে সবার সামনে লজ্জিত হবে।

২. রিয়া মিথ্যা ও শিরক। কোনো আমলের মধ্যে রিয়া ঢুকলে ওই আমল নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ যে কোনো আমল দুটি শর্তে কবুল করেন। এক. পূর্ণ ইখলাস বা একনিষ্ঠতা

দুই. নবিজির (সা.) শরিয়ত ও সুন্নাত অনুযায়ী হওয়া। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রিয়া থেকে বিরত থাকা। কোনো নেক কাজ শুরু করার পর অন্তরে রিয়া এসে জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করলে যথাসম্ভব তা প্রতিহত করতে হবে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন,

أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ

আমি শরিকদের মধ্যে শিরক থেকে সবচেয়ে বেশি অভাবমুক্ত। যদি কেউ কোন আমল করে এবং তাতে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শরীক করে, তাহলে আমি তাকে ও তাঁর শিরককে তাদের অবস্থায়ই ছেড়ে দেই। (সহিহ মুসলিম: ৭২০৫)

৩. তবে রিয়ার ভয়ে নেক আমল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। মুমিন মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ইবাদত করে। বহু ইবাদত তাকে প্রকাশ্যে বা মানুষের সামনেও করতে হয়। শয়তান অনেক সময় মুমিনকে নেক আমল থেকে বিরত রাখার জন্য তার অন্তরে মন্ত্রণা দেয় যে, কাজটি সে করছে মানুষকে দেখানোর জন্য, আল্লাহর জন্য নয়। এ রকম কুমন্ত্রণা মনে এলে এটাকে গুরুত্ব না দিয়ে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। এই কুমন্ত্রণার জন্য ভালো কাজ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কোনো নেক কাজের মাঝখানে শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়া শুরু করলে যথাসম্ভব তা প্রতিহত করে নেক কাজটি শেষ করাই মুমিনের কর্তব্য। ইবনে আসির (রহ.) বলেন, বিশুদ্ধ নিয়তে কেউ কোনো কাজ শুরু করার পর শয়তান যদি ওয়াসওয়াসা দেয়, তুমি এটা মানুষকে দেখানোর জন্য করছ, তাহলে কুমন্ত্রণার কারণে ওই নেককাজটি ছেড়ে দিও না। (আন-নিহায়া ফি গারিবলি হাদিস ওয়াল আসার)

ওএফএফ/এমএস