ধর্ম

হাদিস থেকে ৩টি শিক্ষা: আমলের সওয়াব নিয়তের সাথে সম্পর্কিত

রাসুল সা. বলেছেন, প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভ অথবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, সেই উদ্দেশ্যই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

Advertisement

এই প্রসিদ্ধ হাদিসটি থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই

১. মানুষের তার যে কোনো কাজের প্রতিদান লাভ করে তার নিয়ত অনুযায়ী। নিয়ত উত্তম হলে হলে তার কাজও উত্তম গণ্য হয়, নিয়ত মন্দ হলে কাজও মন্দ গণ্য হয়। যে নিজের আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়, তার আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে এই আশা করা যায়। যার উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কিছু তার কাজ রিয়া বা প্রদর্শনী হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হয়। যেমন যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুন্নাহ অনুসরণ করে সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করে, সে সওয়াব লাভ করবে। আর যে সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করে মানুষকে দেখানোর জন্য, সে রিয়াকারী ও গুনাহগার। যে কোনো দরিদ্রকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দান করবে, সে সওয়াব লাভ করবে, আর যে দান করলো মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্য, সে রিয়াকার ও গুনাহগার। তাই প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য নিয়ত শুদ্ধ করার দিকে মনোযোগী হওয়া, নিজের আমলগুলোকে রিয়া বা লোকদেখানোর উদ্দেশ্য থেকে পরিশুদ্ধ করা, যেন আমলগুলো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয় এবং আল্লাহর কাছে কবুল হয়।

২. সওয়াব নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। এ কারণে ইসলামি আইনবিশারদরা বলেন, নিয়ত ছাড়া আমলের সওয়াব পাওয়া যাবে না। মসজিদে ইতেকাফের নিয়তে বা ফরজ নামাজের জামাতের জন্য অবস্থান করা সওয়াবের কাজ। কিন্তু কেউ যদি এ রকম কোনো নিয়ত ছাড়া মসজিদে অবস্থান করে, সে কোনো সওয়াব পবে না। পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশে গোসল করলে সওয়াব হবে। শুধু শারিরীক প্রশান্তির জন্য কেউ গোসল করলে সেটাতে সওয়াব নেই।

Advertisement

৩. উত্তম নিয়তের কারণে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজগুলোও ইবাদত ও সওয়াবের কাজ গণ্য হতে পারে। কোনো মুসলমান যদি সাধারণ বৈধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করে সেটাকে আল্লাহর নির্দেশিত অন্যান্য আমল ও ইবাদত করার সহায়ক হিসেবে, তাহলে সে ওই বৈধ কাজের কারণেও সওয়াব লাভ করেবে। যেমন খাওয়া, পান করা বা ঘুমানোর উদ্দেশ্য যদি হয় ইবাদতের জন্য শক্তি অর্জন করা, তাহলে পানাহার ও ঘুমও সওয়াবের কাজ হতে পারে।

মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) আবু মুসা আশআরিকে বলেছিলেন, আমি রাতের প্রথমাংশে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠে পড়ি। এরপর আল্লাহ আমাকে যতটুকু তাওফীক দান করেন কুরআন তিলাওয়াত করি। আমি আমার ঘুমকেও সওয়াবের কাজ মনে করি, যেমন কুরআন তিলাওয়াতকে সওয়াবের কাজ মনে করি। (সহিহ বুখারি) মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবার একটি বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেছিলেন, আমি রাতের প্রথম ভাগে ঘুমিয়ে শেষভাগে ইবাদতের জন্য শক্তি অর্জন করি এবং আমি আল্লাহর কাছে আমার ঘুমের জন্যও সওয়াব আশা করি যেমন জাগরণের জন্য সওয়াব আশা করি।

ওএফএফ/জিকেএস

Advertisement