ধর্ম

ভূমিকম্প নিয়ে শায়খ বিন বাযের (র.) নসিহত‍‌

পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে যে সকল ভূমিকম্প দেখা যায়, নিঃসন্দেহে তা আল্লাহ তাআলার এক মহানিদর্শন। তিনি এর মাধ্যমে বান্দাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করতে চান। সতর্ক করে থাকেন। যেমন- তিনি বলেন-

Advertisement

وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلا تَخْوِيفًا

‘আমি শুধু ভয় দেখানোর জন্য আমার নিদর্শনসমূহ প্রেরণ করে থাকি।’ (বনি ইসরাঈল: ৫৯)

ভূমিকম্প আল্লাহর এক বড় নিদর্শন। যা ঠেকানোর ক্ষমতা পৃথিবীতে কারো নেই। উন্নত বিশ্বের সব ধরণের টেকনোলোজিও এখানে ব্যর্থ।  কিন্তু ভূমিকম্পের মাধ্যমে মানুষের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়, বিপদে পড়ে তাদের জান-মাল নষ্ট হয় তার মূল কারণ হচ্ছে শিরক ও পাপাচার। যেমন- আল্লাহ বলেন-

Advertisement

وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ

‘তিনি তোমাদের ওপর যে মসিবতই এসেছে তা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে এসেছে। আর বহু সংখ্যক অপরাধের শাস্তি না দিয়েই তিনি ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন।’ (সুরা শুরা: আয়াত ৩০)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

مَا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ وَمَا أَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ

Advertisement

‘হে মানুষ! যে কল্যাণই তুমি লাভ করে থাকো তা আল্লাহর দান এবং যে বিপদ তোমার ওপর এসে পড়ে তা তোমার নিজের উপার্জন ও কাজের বদলাতেই আসে।’ (সুরা নিসা: আয়াত ৭৯)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

‘শেষ পর্যন্ত প্রত্যেককে আমি তার অপকর্ম ও গুনাহের জন্য পাকড়াও করি। তারপর তাদের কারোর ওপর আমি পাথর বর্ষণকারী, বাতাস প্রবাহিত করি এবং কাউকে একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ আঘাত হানে। আবার কাউকে আমি ভূমিকম্পের মাধ্যমে ভূমি ধস দিয়ে ভূগর্ভে প্রোথিত করি এবং কাউকে (বন্যা-জলোচ্ছ্বাস-প্লাবন প্রভৃতির মাধ্যমে) পানিতে ডুবিয়ে দিই। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন না, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করছিল।’ (আনকাবুত: আয়াত ৪০)

তাই সবার উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহর কাছে তওবা করা, তাঁর দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে তার উপর অটল থাকা। শিরক-বিদাতসহ সকল প্রকার অন্যায়-অনাচার পাপাচার থেকে সতর্ক থাকা। যাতে করে আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপত্তা দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

 وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

‘যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা  ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের রবকতসমূহের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা তো সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই তারা যে অপকর্ম করে যাচ্ছিলো তার জন্য আমি তাদের পাকড়াও করেছি।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ৯৬)

হজরত ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে মদিনায় ভূমিকম্প হলে তিনি মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করেছিলেন। এতে তিনি বলেছিলেন-

ما أسرع ما أحدثتم والله لئن عادت لأخرجن من بين أظهركم (رواه بن عيينة عن عبيد الله بن عمر عن نافع عن صفية)

‘কত দ্রুত তোমরা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছো! পুনরায় যদি ভূমিকম্প হয় তবে আমি তোমাদের মাঝ থেকে (মদিনা থেকে) বের হয়ে অন্যত্র চলে যাব।’

বর্ণিত আছে যে, হজরত ওমর বিন আবদুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির যুগে একবার ভূমিকম্প হয়েছিল। তখন তিনি বিভিন্ন শহরের আমিরদের চিঠি লিখে জনগণকে দান-সাদকা করতে উদ্বুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এমএমএস/এএসএম