সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বিকল্প উৎসে পণ্য সংগ্রহ করতে উৎসাহিত হবে বলেও মনে করে সংগঠনটি।
Advertisement
রোববার (৬ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তার।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বৈদেশিক আয়ের একটি বড় অংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে অর্জন করে থাকে। এই খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। এই খাতে ৪০ লাখের অধিক শ্রমিক সরাসরি যুক্ত রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী। তাছাড়াও এই দীর্ঘ সময়ে নারীদের জন্য তেমন কোনো বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিও হয়নি, তারা মূলত এই খাতের ওপরই তাদের কর্মসংস্থানের জন্য নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন শুল্ক নিয়ে ট্রাম্প ও মার্কিন প্রশাসনকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ মার্কিন শুল্ক নিয়ে সরকারের পরিকল্পনায় ব্যবসায়ীদের সন্তোষসম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন জানায়, এ পরিস্থিতির ফলে অনেক বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে সরে আসতে বাধ্য হতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের ওপর। কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, ব্যাপক হারে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এরই মধ্যে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ধরণের হয়রানি-সহিংসতাও বেড়ে যাবে। এর ফলে শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা চরম ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
Advertisement
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে আলোচনায় বসে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে সামাজিক সুরক্ষা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই যেন তারা এই বর্ধিত ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা করে। তারা যেন বাংলাদেশ পোশাকশিল্প খাত বাঁচাতে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করে এবং বিশ্বজুড়ে যে বাণিজ্যযুদ্ধ চালাচ্ছে তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করে। এক্ষেত্রে বায়ারেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রযেছে। এই শুল্কবৃদ্ধির প্রভাব যেন শ্রমিকের মজুরির ওপর না পড়ে তার দায়ভার বায়ারদের নিতে হবে। শ্রমিকের নিরাপদ জীবনের স্বার্থে ব্র্যান্ড ও বায়ারকে স্বচ্ছতা অবলম্বন করতে হবে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প শুধু দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে না, বরং এটি নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য হ্রাস এবং টেকসই উন্নয়নের অন্যতম চালক হিসেবেও কাজ করে। তাই এ খাতে যে কোনো সংকট আমাদের জাতীয় অগ্রগতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে বলে মনে করে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।
এএএম/কেএসআর/জিকেএস
Advertisement