ধর্ম

পরকালের চিন্তা করবেন কেন?

কবর দেখলে মানুষের পরকালের কথা স্মরণ হয়। গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে মানুষ। আবার পরকালের চিন্তা করলেও মানুষের দুনিয়ার অনেক পেরেশানি ও চিন্তা-ভাবনা কমে যায়। হাদিসের নির্দেশনা থেকে তা প্রমাণিত। হাদিসে পার্থিব চিন্তায় পরকালের উপকারিতার কথা ওঠে এসেছে। কেন পরকালের চিন্তা করবেন?

Advertisement

পরকালের চিন্তা-ভাবনায় মহান আল্লাহ বান্দার দুনিয়াকে সহজ করে দেন। দুনিয়ার চিন্তা-পেরেশানি থেকে মুক্তি দেন মর্মে হাদিসে পাকের বর্ণনা থেকে প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে-

১. হজরত আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি তোমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-

مَنْ جَعَلَ الْهُمُومَ هَمًّا وَاحِدًا هَمَّ الْمَعَادِ كَفَاهُ اللَّهُ هَمَّ دُنْيَاهُ وَمَنْ تَشَعَّبَتْ بِهِ الْهُمُومُ فِي أَحْوَالِ الدُّنْيَا لَمْ يُبَالِ اللَّهُ فِي أَىِّ أَوْدِيَتِهِ هَلَكَ

Advertisement

‘যার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হবে পরকাল; তার পার্থিব (দুনিয়ার) চিন্তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার চিন্তায় মোহগ্রস্ত থাকে তার যে কোন উপত্যকায় বা প্রান্তরে ধ্বংস হয়ে যাওয়াতে আল্লাহর কোন পরোয়া নাই।’ (ইবনে মাজাহ)

২. হজরত আবান ইবনে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হজরত যায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু দুপুরের সময় মারওয়ানের কাছ থেকে বের হয়ে এলে আমি ভাবলাম, নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার জন্য এ সময় তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আমাদের শোনা কিছু হাদিস শোনার জন্য মারওয়ান আমাদের ডেকেছেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-

مَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ فَرَّقَ اللَّهُ عَلَيْهِ أَمْرَهُ وَجَعَلَ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ مَا كُتِبَ لَهُ وَمَنْ كَانَتِ الآخِرَةُ نِيَّتَهُ جَمَعَ اللَّهُ لَهُ أَمْرَهُ وَجَعَلَ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ ‏

‘পার্থিব/দুনিয়ার চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দরিদ্রতা তার নিত্যসংগী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত বা পরকাল; আল্লাহ তার সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার সামনে এসে হাজির হবে।’ (ইবনে মাজাহ)

Advertisement

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবো এবং তোমার দারিদ্র দূর করবো। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানী দিয়ে পূর্ণ করবো এবং তোমার দরিদ্রতা দূর করবো না।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)

সুতরাং মানুষের উচিত, আখেরাত বা পরকালের চিন্তা বেশি বেশি করা। পরকালের চিন্তায় মানুষ দুনিয়ার অস্থিরতা, দারিদ্রতা ও পেরেশানি থেকে মুক্ত থাকা যায়। এ কারণেই মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে সতর্ক হওয়ার জন্য ঘোষণা করেছেন-

بَلۡ تُؤۡثِرُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا

‘কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দাও।’ (সুরা আলা : আয়াত ১৬)

وَ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ وَّ اَبۡقٰی

‘অথচ আখিরাতই উৎকৃষ্ট(১) ও স্থায়ী।’ (সুরা আলা : আয়াত ১৭)

আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করে বেশি বেশি পরকালের চিন্তা করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার পেরেশানি ও দারিদ্রতা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম