মানবদেহ অসংখ্য জোড়া আর শিরা-উপশিরায় সৃষ্টি। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে এসব জোড়া ও শিরা-উপশিরার কৃজ্ঞতাজ্ঞাপন করতে হয়। এক একটি ভালো কাজে এক একটি জোড়ার হক আদায় হয়। কিন্তু শরীরের পুরো হক আদায়ে আছে ছোট্ট একটি আমল। কী সেই আমল?
Advertisement
আমল যত ছোটই হোক আল্লাহ তাআলার কাছে রয়েছে এর বড় বিনিময়। তাই কোনো আমলকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এ আমলটি যদি হয় নামাজ; তবে এর মর্যাদা আরো বেশি। হাদিসের দিকনির্দেশনায় এটি প্রমাণিত। তাহলো-
‘যদি কোনো মানুষ কমপক্ষে ৪ রাকাত চাশতের নামাজ আদায় করে তবে তার শরীরের (সব জোড়া/শিরা-উপশিরার) যাবতীয় নেয়ামতের হক আদায় হয়ে যাবে।’
এ রকম ছোট ছোট অনেক আমল রয়েছে যা পালনে সহজ কিন্তু উপকারিতা বিশাল। এ রকম অনেক সহজ আমল ঘোষণা দিয়েছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অন্য হাদিসে এসেছে-
Advertisement
হজরত উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ও দিনে ১২ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করে; আল্লাহ তাআলা (এ নামাজের) বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। হজরত উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা (নামাজগুলোর বিবরণ দিয়ে) বলেন যে, এ হাদিস শোনার পর থেকে কখনো আমি এ নামাজগুলো পরিত্যাগ করিনি। (মুসলিম)
নামাজগুলো হলো-
১. ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাআত সুন্নাত নামাজ
২. জোহরের ফরজের আগে ৪ রাকাআত এবং পরে ২ রাকাআত সুন্নাত নামাজ
Advertisement
৩. মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাআত সুন্নাত এবং
৪. ইশার ফরজের পরে দুই রাকাআত সুন্নাত নামাজ।
এ নামাজগুলো প্রতি ওয়াক্তে আদায় করা সবার জন্য এতই সহজ যে তা আদায়ে আলাদা কোনো কষ্ট করার প্রয়োজন হয় না। কেননা নির্ধারিত নামাজের ওয়াক্তের আগে ও পরে তা আদায় করা যায়।
সুতরাং মানুষের উচিত, প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ রাকাত চাশতের নামাজ পড়া। যার মাধ্যম্যে মানুষের শরীরের অসংখ্য জোড়া ও শিরা-উপশিরার হক আদায় হয়। প্রতি ওয়াক্তের সঙ্গে সুন্নাত নামাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করা। তাতেও রয়েছে আকষর্ণীয় ফজিলত।
মনে রাখতে হবে
আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনে নফল নামাজের ভূমিকা অনেক বেশি। যে যত বেশি নফল নামাজ আদায় করবে তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে ততবেশি হবে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো সমস্যা পড়তেন কিংবা চিন্তাযুক্ত হতেন তখনই নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। এ নামাজের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান পেয়ে যেতেন। সে কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নামাজের মাধ্যমে তার কাছে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজ দ্বারা আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর।’
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাঁর প্রিয় উম্মতকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘তোমরা ছোট ছোট ইবাদতে একনিষ্ঠ হও। কারণ অল্প ও ছোট ছোট আমলগুলো পরকালের নাজাতের যথেষ্ট হবে।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে নিজেদের শরীরের হক আদায় ও শরীর সুস্থ রাখতে সকাল-সন্ধ্যায় এ দোয়ার আমলটি করতে বলেছেন-
اَللَّهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ بَدَنِى - اَللَّهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ سَمْعِىْ - اَللَّهُمَّ عَافِنىِ فِىْ بَصَرِىْ – لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আফেনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফেনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফেনি বি বাসারি; লা ইলাহা ইল্লা আন্তা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নাই।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজসহ ছোট ছোট দোয়া, তাসবিহ-তাহলিল ও কল্যাণের কাজ করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন সাজানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম