নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা ৯০ দিন বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের দপ্তরে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সিইসির একান্ত সচিব আশ্রাফুল আলম ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সংস্কার সময়ন্ব কমিটির কো-অর্ডিনেটর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
Advertisement
চিঠিতে এনসিপি সচিবকে অবগত করে জানায়, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে নির্বাচন সংক্রান্ত বর্তমান প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকেই বিগত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ভোটবিহীন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা, জাল ভোট, রাতের ভোটসহ নানান অনিয়মের মাধ্যমে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে।
একইভাবে শেখ হাসিনা ও তার দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক উক্ত কমিশন সারাদেশে দলীয় প্রতীকে বিতর্কিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও অয়োজন করেছিল। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
চিঠিতে এনসিপি জানায়, ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট ২৪ গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গণমানুষের প্রত্যাশার আলোকে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গণঅভ্যুত্থানের পর ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয় এবং উক্ত কমিশন একটি প্রতিবেদনসহ তাদের সুপারিশ কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হলেও অদ্যাবধি মৌলিক সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। নির্বাচন কমিশনের মৌলিক সংস্কার এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী না করেই বর্তমান নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য গত ১০ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সংস্কারের আগেই ত্বরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সমালোচনার জন্ম দেয়।
Advertisement
২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ও প্রাসঙ্গিক আইনের অধীনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শর্তাবলিসমূহ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক। আগের স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তৈরি এই বিধিগুলো রাজনৈতিক বহুত্ববাদ সংকুচিত এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য প্রণীত। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিজেই জেলা পর্যায় ১০ শতাংশ এবং উপজেলা পর্যায়ে ৫ শতাংশ কার্যালয় স্থাপনের শর্ত সহজীকরণের পাশাপাশি প্রতি পাঁচ বছরে নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন নবায়নের বাধ্যবাধকতার প্রস্তাব দিয়েছেন।
তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের বর্তমান কাঠামো এবং ব্যক্তিবর্গের নিয়োগ বিতর্কিত ২০২২ সালের আইন অনুসারে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে, যা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করছে।
সুতরাং বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বা সংশোধনপূর্বক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার। তাছাড়া মৌলিক সংস্কারের আলোকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, বিদ্যমান নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন হালনাগাদ করাও আবশ্যক।
এমতাবস্থায় অনতি বিলম্বে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত মৌলিক সংস্কার সাধন এবং নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা ৯০ দিন বর্ধিতকরণের জন্য বিনীত অনুরোধ করা যাচ্ছে।
Advertisement
এমওএস/এমআইএইচএস/জিকেএস