ধর্ম

রমজানের শেষ সময়টুকু কাজে লাগাই

হাসান মুরাদ

Advertisement

আশা-প্রত্যাশা মাবন জীবনে বেঁচে থাকার এক মহাশক্তি। আশা হলো, না পেয়েও পাওয়ার স্বপ্নে নিরব থাকা। হতাশার গ্লানি যদি কখনও জীবনে ছুঁয়ে যায়, সেখান থেকেও আশার বীজ বপন করা হয়। আর মোমিনের জীবনে হতাশাও নেকি। শুধু প্রয়োজন সবরের। জীবনের বাঁকে বাঁকে আমরা আশার প্রাসাদ গড়ি। শেষ বিকেলে হিসেব কষি—কী পেলাম, কী হারালাম! কেউ প্রাপ্তির আনন্দে হই আত্মহারা, কেউ বঞ্চিতের বেদনায় দিশেহারা। এভাবেই বয়ে চলছে জীবন নদী।

সে স্রোতে গত হচ্ছে দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর, যুুগ-যুগান্তর। যেদিন থেকে প্রাপ্তবয়স্কের খাতায় নাম উঠেছে, সেদিন হতে কত রমজান এলো, গেল। কখনও কী ভেবেছি—রমজানে কী পেলাম, কী পেলাম না! কী প্রত্যাশা করেছিলাম, আর কী পেয়েছি? নাকি প্রত্যাশা-প্রাপ্তির চিন্তা ছাড়াই অতীত করেছি সব রমজান?

রজবের চাঁদ থেকে রমজান পাওয়ার ব্যাকুলতায় বারবার মুখরিত হয়েছে আল্লাহপ্রমিকদের জবান—‘হে আল্লাহ! আমাদের রজব-শাবানের বরকত দাও। রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।’

Advertisement

আল্লাহ আমাদের করুণা করে দান করেছেন মাহে রমজান। আরশের মালিক আমাদের রহমতের ছায়ায় শীতল করবেন। মাগফিরাতের চাদরে ঢেকে নেবেন। আর জাহান্নাম থেকে নাজাতের ফরমান জারি করবেন। এই তো মোমিনের প্রত্যাশা। রমজান তো আসেই মোমিনকে পাপশূন্য ও সজীব করে তোলে। জাহান্নাম থেকে মুক্তির খোশ-পয়গাম শোনাতে। একজন মোমিনের জীবনে এর চেয়ে বড় প্রত্যাশা আর কী হতে পারে?

কিন্তু আফসোস, আমরা রমজানের বাঁকা চাঁদ দেখে আনন্দে মসজিদে গেছি, রোজা রেখেছি। আবার ঈদের আনন্দে মসজিদ ছেড়ে বাজার ধরছি। দুনিয়ার সওদা কিনতে আখেরাতের সওদা বিনাশ করছি। ২৭ রমজান কদরের রাত মনে করে শেষ মোনাজাত করে ভেবেছি, বিদায় রমজান; আবার দেখা যাবে আগামী বছর।

এক মাসের অর্জন যেন মুহূর্তেই ম্লান। ভুলে যাই—কী প্রত্যাশা ছিল রমজানে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘শ্রমিক যেমন দিন শেষে মুজুরি পায়, মোমিন বান্দাও তেমন রোজা শেষে পুরস্কার পায়। সে পুরস্কার ক্ষমার, নাজাতের। সুতরাং তার থেকে বোকা আর কে, যে পুরস্কারের সময় থাকে গায়েব!’ প্রাপ্তির এ সময় তো রোনাজারির, অশ্রুদানের। নিজেকে বড় অপরাধী ভেবে দরবারে এলাহিতে মিনতি করতে থাকার—হায়, আমার কী গোনাহ মাফ হলো? আমি কী আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পেরেছি?

মাওলানা ইদরিস সন্দ্বীপী (রহ.) বলতেন, ‘শিশু বাচ্চা তার সব প্রয়োজন পুরণ করে কেঁদে কেঁদে। তার না আছে চাওয়ার ভাষা, না আবেদনের শক্তি। তাই সে কাঁদে এবং সব পেয়ে যায়। সুতরাং মানুষ যদি মালিকের কদমে মাথা রেখে বিনয়ের সঙ্গে চোখ থেকে অশ্রু ফেলে, মালিক তাকে ক্ষমা না করে পারে?’

Advertisement

আমাদের অন্তর তো পাথর। কিছু হৃদয় তো পাথরের চেয়েও শক্ত। তাই আমাদের চেখে পানি নেই। শেষ রাতে, মৃদু আঁধারে যারা কাঁদে, তাদের রমজান কত সুন্দর! মালিকের সঙ্গে তাদের প্রেম কত গভীর! খুব ইচ্ছে করে এমন দিলের পরশ পেতে । কিন্তু পাব কোথায় সে দিলওয়ালা! এখন তো হাত বাড়ালে প্রায় সবইই পাওয়া যায়। শুধু অভাব তাদের, যাদের চোখদুটো অশ্রুবিগলিত। তাই বলে হাল ছাড়ব না।

চলুন, রমজানের শেষ সময়টুকু সবাই মালিকের কদমে সেজদায় লুটে পড়ি। কাঁদতে না পারলেও ভান তো ধরতে পারি। আশা রাখি, মালিক আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। এটাই তো বড় আমাদের প্রাপ্তি।

মুনশি/এসইউ/জেআইএম