রোজা প্রতিটা যুগে আল্লাহর আইনের একটি অঙ্গ ছিল। আজ যখন কোনো ব্যক্তি রোজা রাখে, যেন সে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার অংশ হয়ে গেছে। যা প্রতিটা যুগের বিশ্বাসীদের মধ্যে অব্যাহত ছিল। আর প্রতিটা যুগে তা অব্যাহত থাকবে। রোজাদার ব্যক্তি মনে মনে এই মর্মে সন্তুষ্টি বোধ করে, আল্লাহর উত্তম ও গ্রহণযোগ্য বান্দাগণ যুগে যুগে যা করেছেন, তা সে করছে। এই উপলব্ধি তাকে মানব ইতিহাসের আল্লাহ কেন্দ্রিক সেই কাফেলার অন্তর্ভুক্ত করে, যে কাফেলায় আছেন নবিগণ, সত্যবাদীগণ, শহিদগণ। অর্থাৎ যারা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সত্যের সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং সৎকর্মশীল।
Advertisement
রোজার নির্দেশ চান্দ্র ক্যালেন্ডারের ওপর ভিত্তি করে এসেছে। শাবান মাসের শেষ সন্ধ্যায় পরবর্তী মাসের চাঁদ দেখে রোজা শুরু হয়। এভাবে রোজার কার্যক্রম শাবান মাসের শেষ থেকে শুরু হয়ে যায়। লোকেরা শাবানের শেষ তারিখ গণনা করা শুরু করে। যাতে তারা সেদিন চাঁদ দেখতে পায়। রমজানের আগমনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চাঁদ দেখে রোজা রাখা এমন, যেন রোজা রাখার আগে একজন ব্যক্তির মধ্যে রোজার মনোভাব জাগ্রত করা।
রোজার প্রতিটি মুহূর্ত আমলের। এটি বিশেষ ধর্মীয় আমলের সময়। এ সময়টি শুরু হয় শাবানের সন্ধ্যায়। শাবান মাসের ২৯তম সন্ধ্যা আসার সঙ্গে সঙ্গে মোমিনের চোখ চাঁদ দেখার জন্য আকাশে স্থির হয়ে যায়। তাদের চেতনা এটা জানার জন্য জাগ্রত হয়, চাঁদ পৃথিবীর আবর্তনের সেই পর্যায়ে প্রবেশ করেছে কি-না, যখন থেকে অবশ্যই তাদের জীবনের গতিপথটি সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে।
এখন প্রতিদিন তাদেরকে এটা জানার জন্য উদ্বিগ্ন হতে হবে, ঠিক কখন সকাল শুরু হবে এবং সূর্য কয়টা বেজে কত মিনিটে অস্ত যাবে। কেননা, প্রতিদিন তাদের জন্য এই কথার ঘোষণা হয়, এখন তাদের জীবনব্যবস্থায় সময়ের সদ্ব্যবহার করে চলতে হবে।
Advertisement
রোজার আগে যখন তার খিদে পেত, তখন সে খাবার খেত; পিপাসার সময় পানি পান করত। যেন বাকি দিনগুলিতে ক্ষুধা ও আকাঙ্ক্ষা তাদের গাইড ছিল; তবে এখন অনুশাসন তাদের জীবনের গাইড হয়ে গেছে। এখন তাদের খুব ভালোভাবে জানতে হবে, রাতে কয়টা বেজে কত মিনিট পর্যন্ত খাওয়া উচিত। এরপর পুরোপুরি খাওয়া এবং পান করা বন্ধ করতে হবে। তারপর সন্ধ্যায় সঠিক সময়ে আবার খাওয়া-দাওয়া শুরু করতে হবে।
ঠিক একইভাবে যখন সত্যিকারের রোজাদারকে মন্দ কিছু বলা হয়, তখন সে তার প্রতিক্রিয়া জানায় না। বলে, ‘আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আপনি আমাকে খারাপ বলেছিলেন বলে আমি আপনার প্রতি খারাপ ব্যবহার করব না। কারণ, আমি রোজাদার।’
যে দিনগুলি কোনো সতর্কতা বা ভয় ছাড়াই কেটে যেত, এখন তাদেরকে এ জীবনবোধের সঙ্গে দিনগুলি কাটাতে হয় যে, তাদের কি করা উচিত এবং কি না করা উচিত, কী খাবেন এবং কী খাবেন না, এটি করবেন না, না হলে রোজা ভেঙে যাবে, এটি করবেন না, অন্যথায় আপনি রোজার পরেও রোজা রাখবেন। রোজা একজন ব্যক্তির জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া। রোজার দিনগুলোতে একজন ব্যক্তি তার সব সময় প্রশিক্ষণে ব্যয় করেন এবং জানতে চান, একজন মানুষের সীমারেখা; সে কতদূর যেতে পারে এবং কোথায় যেতে পারে না, কীভাবে থাকা উচিৎ হবে এবং কীভাবে থাকা উচিৎ নয়।
রোজার উদ্দেশ্য হলো, একজন ব্যক্তির প্রতিদিনের রুটিনে ‘আপনি কি করতে পারবেন এবং কি করতে পারবেন না’-এর বিষয়টি উত্থাপন করে তার স্থায়ী মানসিকতা তৈরি করা। এটি নীতিগত জীবনের প্রশিক্ষণ। আর এ ধরনের নীতিগত জীবন প্রতিটি মোমিনের সারা জীবনের জন্য প্রয়োজন।
Advertisement
মুনশি/এসইউ/এএসএম