কৃষি ও প্রকৃতি

স্ট্রবেরি চাষে ৩ মাসে আয় ২৫ লাখ টাকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্ট্রবেরি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চাষিরা। এখানকার উৎপাদিত স্ট্রবেরি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হচ্ছে। তবে ৩ মাসে ৪ বিঘা জমিতে এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করে এলাকাবাসীকে অবাক করে দিয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলার ফাহাদ আলী নামে এক যুবক। অন্য কৃষকরা বলছেন এতো কম জমিতে এতো বেশি টাকার স্ট্রবেরি এর আগে কেউ বিক্রি করতে পারেননি।

Advertisement

সরেজমিনে দুর্লভপুর ইউনিয়নের পার কালোপুর এলাকার ফাহাদ আলীর স্ট্রবেরির বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে স্ট্রবেরির চাষ করছেন তিনি। দুই ভাইসহ প্রায় ৩০ জন শ্রমিক নিয়ে দিন-রাত পরিচর্যা করছেন। এ থেকে গত ৩ মাসে প্রায় ২৫-২৮ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন তিনি। আশা করছেন সামনের সপ্তহের মধ্যে আরও ৬-৮ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করবেন।

স্ট্রবেরি চাষি ফাহাদ আলী বলেন, আমি গত তিন বছর থেকে স্ট্রবেরি চাষ করছি। গত বছর ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম এতে প্রায় ১২ লাখ টাকা পেয়েছিলাম। আর এবার ৪ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে প্রথম থেকেই মন দিয়ে পরিচর্যা করেছি। তাই ভালো ফলন হয়েছে। এ থেকে গত ৩ মাসে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫-২৮ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছি। আর এতে মোট খরচ হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। আমি স্থানীয় বাজারে স্ট্রবেরি বিক্রি করি না। স্ট্রবেরি ক্ষেত থেকে সংগ্রহের পর তা ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেই ঢাকার কারওয়ান বাজারে। সেখানে আমার স্ট্রবেরি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর আগে আমার কাছে তেমন টাকা-পয়সা ছিল না। দুশ্চিন্তায় দিন কাটছিল। কিন্তু স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। একটি তিনতলা বাড়ি করেছি। আর এখন হাতে বেশ টাকা পয়সাও আছে। সামনের বছর আরও বেশি করে স্ট্রবেরি চাষ করব।

Advertisement

ফাহাদের পাশের স্ট্রবেরি চাষ করা সাইরণ আলী বলেন, ফাহাদের হাতে স্ট্রবেরি চাষের জাদু আছে। ওর মতো ভালো ফলন কারো হচ্ছে না। আমারও ১ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি ছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা পেয়েছি। এর মধ্যে খরচ হয়ে গেছে প্রায় ২ লাখ টাকা। তাই প্রতিদিন একবার হলেও ফাহাদের স্ট্রবেরি বাগান দেখতে আসি।

মাসিদুল নামে আরও এক স্ট্রবেরি চাষি বলেন, আমি গত দুই বছর ধরে স্ট্রবেরি চাষ করছি। এবার আমার দুই বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি ছিল। কিন্তু বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে পরিনি। তাই মাত্র সাড়ে চার লাখ টাকা পেয়েছি। এ এলাকায় ফাহাদের মতো কারো ফলন ভালো হয়নি।

ফাহাদের স্ট্রবেরি বাগানের এক শ্রমিক বলেন, গত তিন বছর থেকে আমি প্রায় ৩০ জন শ্রমিক নিয়ে এই জমিতে কাজ করছি। আমাদের প্রতিদিন ৩৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এ দিয়েই চলে আমার সংসার। আশপাশে কারো এখন স্ট্রবেরির ফলন হয়নি। ফাহাদের স্ট্রবেরি বাগানে কাজ করতে পেরে আমরা খুশি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এবার কৃষি বিভাগের সমন্বয়ে জেলায় মোট ২৫-২৬ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। যা গত বছরে তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে ছোট আম বাগানে বেশি স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার বেশি স্ট্রবেরি চাষ করছেন চাষিরা। এতে বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

Advertisement

সোহান মাহমুদ/এমএমএফ/জেআইএম